চলছে আন্তর্জাতিক কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব। চলচ্চিত্র উৎসবে নন্দন চত্বরে উপস্থিত ছিলেন বলিউড অভিনেত্রী বিদ্যা বালন। তবে এই বলিউড অভিনেত্রীর যাত্রা শুরু হয়েছিল বাংলা সিনেমা ‘ভালো থেকো’র হাত ধরে। বিদ্যা রুপোলি পর্দায় যাত্রা শুরু করেন বাংলা সিনেমা দিয়ে। তবে সেই ছবির পরিচালক গৌতম হালদার আজ আর নেই। ডেবিউ ছবির পরিচালক সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে গলা ভারী হয়ে আসে বিদ্যার।
বিদ্যা জানান, বাংলাকে, বাঙালি লোকজনকে ও বাংলার মিডিয়াকে খুব ভালোবাসেন তিনি। কলকাতার মাটিতে দাঁড়িয়ে বেশ খোশমেজাজেই বিদ্যা জানালেন তাঁর মনের কথা। তিনি প্রতিবার কলকাতায় এলেই কালীঘাটে যান। তাঁর প্রায়ই মনে হয়, কলকাতায় গিয়ে কালীঘাটের মন্দির দর্শন করবেন। কুণ্ঠাহীন ভাবে ভাঙা বাংলায়, ইংরেজি ও হিন্দিতে মিলিয়ে মিশিয়ে কথাগুলো বলছিলেন বিদ্যা।
‘ভালো থেকো’র মাধ্যমেই বাংলা ধারাবাহিকে যাত্রা শুরু হয় বিদ্যার!
কেরিয়ারের প্রথম ছবি ‘ভালো থেকো’র জন্য কী ভাবে সুযোগ আসে বিদ্যার কাছে? প্রশ্ন শুনে বিদ্যা বলেন, প্রদীপ সরকারের সঙ্গে প্রথম কলকাতায় আসেন তিনি। প্রদীপ সরকারকে দাদা বলে সম্বোধন করেন বিদ্যা। ফলতায় এক বিজ্ঞাপনের শুটিং হচ্ছিল তাঁদের। প্রোডাকশন ম্যানেজার দীনেশ রাওয়াত সবটা সামলাচ্ছিলেন। সেই সময়ে তিনি গৌতম হালদারের সঙ্গেও কাজ করছিলেন। তাকেও বিদ্যা দাদা বলেই সম্বোধন করেন। গৌতম হালদারকে প্রথম বিদ্যার কথা বলেন।
বিদ্যার কিছু ফোটোগ্রাফ দেখানো হয়েছিল গৌতম হালদারকে। অ্যাড ফিল্মে বিদ্যার কাজও তিনি দেখেন। এ সবই অবশ্য বিদ্যা অনেক পরে জানতে পারেন। এভাবেই নাকি বিদ্যাকে ‘ভালো থেকো’র জন্য পছন্দ করেছিলেন গৌতম হালদার। এরপর তাঁদের ফোনে কথা হয়। গৌতম হালদার স্ক্রিপ্ট পাঠান বিদ্যাকে। আর বিদ্যাও রাজি হয়ে যান। বিদ্যার কথায়, তখন অনেক সহজ সময় ছিল। সেসব কথা এখন ভাবতেও ভালো লাগে তাঁর। আবেগে ভেসে বিদ্যা এও জানান, প্রয়াত পরিচালক গৌতম হালদার সব সময়েই ভালো থাকার কথা বলতেন। সেই মন্ত্রেই এখনো নিজের জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বিদ্যা।
ট্রামের পর হলুদ ট্যাক্সির বিদায়ের খবরে আশাহত বিদ্যা!
কলকাতায় কিন্তু বিদ্যার আরও কয়েকটি হিন্দি সিনেমার শ্যুটিং হয়েছে। ‘কাহানি’ ছবিতে হলুদ ট্যাক্সির সামনে শট দিয়েছেন তিনি। ‘ভুলভুলাইয়া থ্রি’ ছবির প্রমোশনে হলুদ ট্যাক্সির ছাদে বিদ্যা ও অভিনেতা কার্তিক আরিয়ান ছবি তুলেছেন। কলকাতার হলুদ ট্যাক্সি ঘিরে বিদ্যার রয়েছে বেশ কিছু স্মৃতি। তবে কলকাতার রাস্তায় আর হয়তো দেখা যাবে না হলুদ ট্যাক্সি। ১৫ বছরের বেশি পুরোনো প্রায় আড়াই হাজার ট্যাক্সি এখন বাতিলের খাতায়। ওপর মহল থেকে এরকমই ঘোষণা করা হয়েছে। কলকাতার বুকে হলুদ ট্যাক্সির এক বিরাট অংশের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ট্যাক্সি বিলুপ্তির আশঙ্কার কথা জানতে পেরে মন ভেঙেছে বিদ্যার। তিনি কলকাতার হলুদ ট্যাক্সির ফ্যান। এই ট্যাক্সি এই শহরের ঐতিহ্য।
সুজয় ঘোষ পরিচালিত ‘কাহানি’ ছবির শুটিংয়ের সময়ে হলুদ ট্যাক্সিতে চেপে বেশ কিছু দৃশ্যের শুটিং করেছিলেন। নায়িকা বলেন, ‘‘ভুলভুলাইয়া ৩’র জন্য যখন কলকাতায় আসি, হলুদ ট্যাক্সিতে শুটিং হয়। খালি পায়ে ট্যাক্সির মাথায় চড়ি ছবির প্রচারের সময়ে। হাওড়া ব্রিজের নীচে দাঁড়াই আমরা। কিছু জিনিসের সঙ্গে কলকাতার পরিচিতি জড়িয়ে আছে। যেমন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, ফুচকা, হলুদ ট্যাক্সি। এই যান চলে গেলে খুব মিস করব। আমার মন ভেঙে যাবে। শুনেছি ট্রামও অনেক কমে আসছে কলকাতা শহরে। দুটোই মিস করব।’
এ বার কোন বাঙালি পরিচালকের সঙ্গে কাজ করতে চান বিদ্যা এ প্রশ্নের উত্তরে বিদ্যার জবাব আসে, তিনি সবার সঙ্গেই কাজ করতে চান। এমনকি বাংলার আইকন সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছে রয়েছে তাঁর। তিনি বলেন, ‘মানিকদার সঙ্গে কাজের ইচ্ছে আছে।’ তবে বিদ্যা নিজেই জানান, সেটা তো আর সম্ভব নয়। বিদ্যা জানিয়েছেন, কিছু বছর আগে পর্যন্তও বাংলা ছবির থেকে প্রস্তাব পেতেন তিনি। কিন্তু এখন তেমন অফার পান না। পেলেও তা খুব একটা এগোয় না।
বিদ্যাকে নিয়ে অনেকের ধারণা বিদ্যা ‘মেথড অ্যাক্টিং’ করেন। এ ব্যাপারে বিদ্যা বলেন, মেথড অ্যাক্টিং কী সেটা তিনি জানেন না। তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ হলো সিনেমার জন্য তাঁকে অফার করা চরিত্র ও পরিচালক। কমেডি ফিল্মে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে বিদ্যা বলেন, ‘অফার এলে নিশ্চয়ই কমেডি ফিল্ম করব।’ অবশ্য এর আগে ‘হেই বেবী’র মতো কমেডি বা ‘ভুলভুলাইয়া’র মতো হরর কমেডিতে তিনি অভিনয় করেছেন। অন্যদিকে বাংলায় সিনেমা করার ব্যাপারেও বিদ্যা বেশ আশাবাদী। তিনি মনে করেন, সময়ের কাজ সময়ে হয়েই যাবে। যদিও হিন্দি ছবিতে বাঙালি চরিত্রে অভিনয় করেই তিনি বেশ তৃপ্ত। বলেছেন, ‘আপাতত এ ভাবেই বাংলার সঙ্গে জুড়ে আছি।’