পরিচালক স্বর্ণেন্দু সমাদ্দার এবং তাঁর স্ত্রী, অভিনেত্রী শ্রুতি দাস সম্প্রতি একটি আবেগঘন সফরে হুগলির গুপ্তিপাড়ায় ফিরে যান, যেখানে স্বর্ণেন্দুর পৈতৃক ভিটে অবস্থিত। প্রায় ২০-২২ বছর আগে তাঁরা এই বাড়ি ছেড়ে চলে আসেন। এর পর অনেক বছর কেটে গেলেও বাড়িটি আগের মতোই রয়ে গেছে। যদিও এটি এখন তাদের মালিকানায় নেই, তবুও কিছু আত্মীয়স্বজন এখনও সেই বাড়িতে বসবাস করছেন। এই সফরটি তাঁদের জন্য ছিল বিশেষ এবং স্মৃতিময়, যা পুরনো দিনের অনেক অনুভূতি এবং স্মৃতিকে নতুন করে জাগিয়ে তোলে।
কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা??
এই সফরের অভিজ্ঞতা এবং মুহূর্তগুলি শ্রুতি তাঁর ভক্তদের সঙ্গে ভাগ করে নেন। একটি ভিডিয়োতে দেখা যায়, স্বর্ণেন্দু তাঁর পুরনো বাড়িতে প্রবেশ করছেন, যেখানে প্রথমেই চোখে পড়ে বাড়ির কাঠের দরজার তালা। দরজা খোলার সময়, কেউ পাশ থেকে তাঁকে সতর্ক করে বলেন, “আগে লাঠি দিয়ে বারি (আঘাত) মারবি কিন্তু, তারপর ঢুকবি…।” সাবধান করা হয়েছিল যে, ভিতরে সাপ বা অন্য কোনো বিপজ্জনক প্রাণী থাকতে পারে। এই মুহূর্তটিই তাঁদের শৈশবের সেই পুরনো অভ্যাসের কথা মনে করিয়ে দেয়, যা একসময় তাঁদের জীবনের স্বাভাবিক অংশ ছিল।
বাড়ির ভিতরের পরিবেশ তাঁদের কি মনে করিয়ে দেয়??
স্বর্ণেন্দু এবং শ্রুতি নস্টালজিক হয়ে পড়েন। স্বর্ণেন্দু যখন বাড়ির পুরনো কক্ষগুলির দিকে তাকান, তখন তাঁর স্মৃতিতে ভেসে আসে সেই দিনগুলি, যখন তিনি তাঁর বাবাকে বাড়ির মধ্যে পায়চারি করতে দেখতেন। এই বাড়ির প্রতিটি কোণ তাঁর শৈশব এবং তরুণ বয়সের স্মৃতির সাক্ষী। শ্রুতি, তাঁর আবেগভরা কণ্ঠে স্বর্ণেন্দুকে বলেন, “এগুলো ফেলো না বাবি, নষ্ট হতে দিও না।” পুরনো দেওয়ালে ঝোলানো ছবি এবং অন্যান্য জিনিসপত্র তাঁদের সেই সময়ের জীবনের গল্প তুলে ধরে।
পুরনো স্মৃতির সরণিতে হাঁটতে হাঁটতে, শ্রুতি ও স্বর্ণেন্দু একটি পুরনো শিলনোরা খুঁজে পান, যা তাদের কাছে একসময় প্রতিদিনের ব্যবহারিক জিনিস ছিল। এর পর তাঁরা এলাকার এক পরিচিত মিষ্টির দোকানে যান, যেখানে তাঁরা এক বর্ষীয়ান মহিলার পা ছুঁয়ে প্রণাম করেন। সেই বৃদ্ধা মহিলার সঙ্গে স্বর্ণেন্দুর পুরনো পরিচয় ছিল, যা তাঁদের এলাকার মানুষজনের প্রতি তাঁদের ভালোবাসার প্রমাণ দেয়। এমনকি দোকানে পৌঁছে সেই পুরনো সম্পর্কের উষ্ণতা আবারও অনুভব করেন তাঁরা।
এরপর তাঁরা গন্তব্যস্থল হিসেবে পৌঁছান গুপ্তিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে, যেখানে স্বর্ণেন্দু তাঁর শৈশব এবং শিক্ষাজীবনের বহু স্মৃতি পুনরায় অনুভব করেন। স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি মনে করেন সেই দিনগুলির কথা, যখন তিনি স্কুলে পড়াশোনা করতেন এবং বন্ধুদের সঙ্গে মজা করতেন। সেখানে দাঁড়িয়ে তাঁর চোখে জল এসে যায়। পুরনো সেই রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে তিনি যেন ছোটবেলার স্মৃতির ঝাঁপি খুলে বসেন।
এই সফরের মধ্য দিয়ে স্বর্ণেন্দু তাঁর শৈশবের ছোঁয়া অনুভব করেন, যা তাঁর জীবনের এক অমূল্য অধ্যায়। শ্রুতির জন্যও এই সফর ছিল বিশেষ, কারণ তিনি তাঁর স্বামীর সঙ্গে তাঁর শৈশব এবং পারিবারিক স্মৃতির সঙ্গে পরিচিত হতে পারেন। পুরনো বাড়ির কাঠের দরজা, শিলনোরা, মিষ্টির দোকানের মহিলার আশীর্বাদ—এই সমস্ত কিছুই তাঁদের এই সফরকে একটি আবেগময় অভিজ্ঞতায় রূপ দেয়।
স্বর্ণেন্দু যখন পুরনো রাস্তায় হাঁটছিলেন, তখন যেন তাঁর মনের মধ্যে সেই গানের সুর বাজছিল, “পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কিরে হায়, ও সেই চোখের দেখা প্রাণের কথা, সেকি ভোলা যায়…”। তাঁদের এই সফর শুধু একটি ভ্রমণ নয়, বরং একটি স্মৃতির পথে হেঁটে আসা, যা তাদের জীবনে এক নতুন আলোড়ন সৃষ্টি করে। এটি এক আবেগঘন অভিজ্ঞতা ছিল, যা তাঁদের ফেলে আসা শৈশবের দিনগুলিকে জীবন্ত করে তোলে।
কলমে – দিয়াশা দে