কিছু ধারাবাহিক ভক্তদের মনে অন্যরকম দাগ কেটে যায়। ভারতীয় বেশ কিছু ধারাবাহিক দর্শকমহলে সেরকম সাড়া জাগালেও পুরো দেশজুড়ে ছাপ ফেলতে পারেনি কখনোই। তবে সেইরকম ভালোবাসা পেয়েছে পাশের দেশ অর্থাৎ পাকিস্তানের একটি টেলিভিশন ধারাবাহিক। ধারাবাহিকের নাম ‘কাভি মে কাভি তুম’।ধারাবাহিকটি সেই দেশে এতোটাই জনপ্রিয়তা লাভ করেছে যে, এটির শেষ পর্ব পুরো পাকিস্তান জুড়ে থিয়েটারে দেখানো হবে।
পাকিস্তানি ধারাবাহিকের শেষ পর্ব থিয়েটারে বড়পর্দায়
আর সেই নিয়েই সমাজমধ্যমে মুখ খুললেন বাংলার অভিনেত্রী সুদীপা চট্টোপাধ্যায়। নিজের ফেসবুক একাউন্ট থেকে তিনি দীর্ঘ একটি পোস্ট লেখেন। সুদীপা বলেন, একটি টেলিভিশন ধারাবাহিক যা সারা দেশের সিনেমা হলে শেষ মেগা পর্ব হিসেবে মুক্তি পাচ্ছে। সারাদেশের সমস্ত লোক একটি ধারাবাহিকের শেষ পর্ব সিনেমা হলে দেখবে।
আক্ষেপ অভিমান নিয়ে কি লিখলেন সুদীপা?
ধারাবাহিকের নাম উল্লেখ করে সুদীপা দর্শকদের পরামর্শ দিয়েছেন পারলে সেটি ইউটিউবে দেখতে। তিনি বলেছেন, শুধুমাত্র যে, নায়িকাই রান্না করবে, বাসন মাজবে, মন্দিরে প্রদীপ জ্বালাবে এটা খুবই বোকা বোকা বিষয়। আবার বরকে “বাবু “ আর “আপনি” বলে সম্মোধন করবে এটাও খুব একটা স্বাভাবিক বিষয় নয়। এছাড়াও রয়েছে ভালো বৌমা হয়ে শাশুড়ী মায়ের অত্যাচার মুখ বুঝে সইবার মতো গল্প। সুদীপা এই পোস্টে এসব কিছুরই বিরোধিতা করেছেন।
বেশ মশলাদার ভাবে সুদীপা লিখেছেন, “দাঁড়ান! দাঁড়ান! এখানেই শেষ নয়, আরও আছে, বন্দুক হাতে অশুভ শক্তির নিধন করবে, আর মাঝে মাঝে বরের আরেক বান্ধবী বা বৌকে সাহায্য করবে।” সুদীপা প্রশ্ন তুলেছেন এটা কোন বর্বরতার দিকে মেয়েদের ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে?
সুদীপার কথায় দর্শক বাধ্য হচ্ছেন, প্রতিবেশী দেশ যেমন পাকিস্তান বা বাংলাদেশের টেলিভিশন ধারাবাহিক মুগ্ধ হয়ে দেখতে। সেই দেশের নাটক বা ধারাবাহিকের গল্পগুলো অত্যন্ত সাধারণ, স্বাভাবিক ও সাবলীল। সুদীপা বলেন, “কি সুন্দর গল্পের বন্ধন,কি সাধারণ মেকআপ, কি স্বাভাবিক জামা কাপড়,কোনও অতিরিক্ত ভারিত্ব নয়। আসল লোকেশনে শ্যুটিং।” ধারাবাহিকে অভিনয়ও করেন সেদেশের বাঘা বাঘা সব অভিনেতারা।
কষ্টপূর্ণ হৃদয় নিয়ে সুদীপা বলেন, আমরা কোনোদিনও ভাবতে পারি না যে একটা গল্প মানুষ এত পছন্দ করেছে যে নির্মাতারা বাধ্য হয়ে, থিয়েটারের পর্দায় এটির মুক্তি দিচ্ছেন, শেষ পর্বটিকে। সুদীপা তাঁর পোস্টে ভারতীয় চ্যানেল কর্তৃপক্ষর প্রতি প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন। তিনি জিজ্ঞেস করেন তাঁরা কবে বুঝবেন,যে দর্শক টিভি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন? দর্শক বাধ্য হচ্ছেন বাংলাদেশী নাটক, পাকিস্তানি ধারাবাহিক বা কোরিয়ান ড্রামা দেখতে।
সত্যিই একথা কি আদৌ অস্বীকার করা যায়? সেই এক গল্প,এক পোশাক আর এক সেই। নির্মাতাদের এবার জগতে আহ্বান জানালেন সুদীপা। আর কতদিন তাঁরা শাঁখাঁ সিঁদুর এর দিব্যি দিয়ে এক গল্প নতুন মোড়কে দেখাবেন এই নিয়েও ছুড়লেন প্রশ্ন। মেয়েদের কাহিনিটা আরেকটু সম্মান দিয়ে ভাবার জন্য অনুরোধ করলেন সুদীপা।
সুদীপা বলেন ধারাবাহিকের গল্পে সহ অভিনেতা,বা পার্শ্ব চরিত্রদের ফেলনা হিসেবে নয়, সত্যিকারের গল্পে রাখা দরকার। একথা তো উত্তম সুচিত্রার আমলেই, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, জহর রায়, পাহাড়ি সান্যাল, কমল মিত্র, ছবি বিশ্বাস, তুলসি চক্রবর্তীরা প্রমান করে দিয়ে গেছেন। জনপ্রিয় এই পাকিস্তানি ধারাবাহিকে প্রত্যেকের রয়েছে সমান জায়গা। কোনও খলনায়ক বা খলনায়িকা নেই । বাংলায়ও তো আগে এরকম গল্প ভিত্তিক ধারাবাহিক হতো।
সুদীপার দাবী কর্তৃপক্ষর ধারণা, দর্শক এই ধরনের সাবলীল গল্প নেবেন না। কিন্তু নির্মাতারা যদি পরীক্ষা করে না দেখেন তবে বুঝবেন কীকরে যে দর্শকের কি পছন্দ? আগে বাংলা ধারাবাহিকের টিআরপি ছিলো ১১ বা ১২। সেখান থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৭ এ। টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রি একটি বড় ইন্ডাস্ট্রি। প্রচুর সংসার নির্ভর করে এই ইন্ডাস্ট্রির ওপর। সেই ইন্ডাস্ট্রিকে নিয়ে এত ছেলেখেলা বেশীদিন সইবে না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সুদীপা।
কেন বাস্তব থেকে সরে আসছে বাংলা ধারাবাহিক?
সুদীপা বলেন, তিনি জানেন এরপর তাঁকে অনেকে খারাপ খারাপ কথা লিখবেন। হয়তো ট্রোলেরও শিকার হবেন আবার। কিন্তু এই ধারাবাহিকের পোস্টার দেখে তিনি আর থাকতে পারেননি। তিনি এই ইন্ডাস্ট্রিকে ভালবাসেন। এই ইন্ডাস্ট্রি তাঁকে অনেক কিছু দিয়েছে। তাঁর কাছে নিজের দায়বদ্ধতা প্রকাশ করেছেন সুদীপা। তিনি বলেন, সত্যিকারের মন খারাপ থেকে এত কিছু লিখলেন তিনি। আশেপাশে সবাই কত এগিয়ে গেছে । আর বাংলা এখনও মেয়েদের সবার মন জয় করার কাহিনী শোনাতে ব্যস্ত। আর কবে দিন বদলাবে সেই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সুদীপা।