পিতৃপক্ষের অবসান ঘটে মাতৃপক্ষ শুরু হয়েছে। আজ চতুর্থী, মাকে বরণ করে নেবার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে বাংলায়। পাড়ার ক্লাব থেকে শুরু করে বাড়ির পুজো, শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে সর্বত্র। বাংলার অনেক তারকার বাড়িতেই মা দুর্গার আরাধনা হয়। মায়ের পুজোয় এবার কি পরিকল্পনা রন্ধনপটিয়সী সুদীপা চট্টোপাধ্যায়ের?
বিগত নয় বছর ধরে অগ্নিদেব চট্টোপাধ্যায় ও সুদীপা চট্টোপাধ্যায়ের বালিগঞ্জের বাড়িতে মহা সমারোহে অনুষ্ঠিত হয় দুর্গাপুজো। আগে এই পুজো হত তাঁদের আদিবাড়িতে। ঢাকা, বিক্রমপুরে। সেই পুজোই নয় বছর আগে কলকাতার বাড়িতে স্থানান্তরিত হয়। তো হিসেব করলে তাঁদের এই পুজো এবার ১৪৫ বছরে পা দেবে।
তবে সেই উপলক্ষ্যে খুব একটা ধুমধামের সঙ্গে এবারের পুজো পালন করছেন না সুদীপা চট্টোপাধ্যায়। আগেই এক জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যমে তিনি বলেছিলেন, এবার তাঁর বাড়ির দুর্গাপুজোতে খুব একটা ধুমধাম হবে না। তাঁর মা তাঁকে ছেড়ে গেছেন এ বছর। মা’কে ছাড়া এটি তাঁর প্রথম পুজো। সাথে তিলোত্তমা কান্ডেও মন ভালো নেই তাঁর। বিচারপ্রার্থীদের দলে রয়েছে তাঁর নামও।
তবে মন ভালো না থাকলেও বাড়ির মেয়ে তো বাড়ি ফিরবেই। তাই উমার আগমনে কিছুটা উদযাপন তো করতেই হবে। তবে এবার পুরো পুজোটাই একটু ব্যক্তিগতভাবেই সারবেন তাঁরা। যদি দর্শনার্থীরা আসতে চান তাঁরা আসবেন। সুদীপার কথায়, মা যাঁকে দর্শন দিতে চান কেউই তাঁকে বাঁধা দিতে পারেনা। তাই ভক্তরা আসবেন, মায়ের দর্শন করবেন, প্রসাদ নিয়ে চলে যাবেন। ঠিক যে রকম কোভিডের সময় হয়েছিল। সুদীপা বলেন উমাও বুঝবে কেন তাঁর মন ভালো নেই আর কেন তাঁর জন্য এই স্বল্প আয়োজন এবার।
অন্যবছর ষষ্ঠী থেকেই তাঁর বাড়িতে দেখা যায় তারকাদের ভীড়। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত নাকি কলকাতায় থাকলেই পুজোয় তাঁর বাড়িতে আসেন। তবে এবার সেই দৃশ্যের ব্যতিক্রম ঘটবে হয়তো।
অষ্টমীর রাতে তাঁদের বাড়িতে গানবাজনার আসর বসে, যা এবছর বন্ধ থাকবে। আবার নবমীতে বসে অতিথিদের নিয়ে পুজো আড্ডা। সেই নিশিঠেকও এবার বসছে না তাঁদের বাড়িতে। তবে অন্যবারের মতো নিয়মমেনে মায়ের আরাধনা হবে। পুজোর আয়োজনে কোনওরকম ত্রুটি রাখবেন না এই তারকাদম্পতি। তবে হইহুল্লোড় কতটা হবে সেটা এখনো ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।
সুদীপার বাড়িতে মা সাজেন পুরো সোনার গয়নায়। মায়ের মাথার মুকুট থেকে শুরু করে পা অবধি সমস্ত গয়নাই হয় সোনার। আবার হাতের সব অস্ত্র রূপোতে গড়া। মায়ের এক হাতে থাকে ত্রিশূল আর অন্য হাতে থাকে পদ্ম ফুল। সুদীপার বাড়িতে মায়ের ভোগের ধরনটাও কিন্তু বেশ অন্যরকম। উমাকে নিজের মেয়েই ভাবেন সুদীপা। তাই বাড়ির মেয়ের মতোই আদর করে মাছ-মাংস খাওয়ান।
এমনিতে একেক দিন একেকরকম চাল দিয়ে ভোগ দেওয়া হয় মা’কে। এই চাল কিন্তু আসে তাঁদের বাংলাদেশের বাড়ি থেকেও। আর অষ্টমীর সন্ধিপুজোর পর থেকে শুরু হয় মাছ-মাংসের ভোগ। যেমন নবমীতে মা দুর্গার ভোগে থাকে পদ্মার ইলিশ আর দশমীতে আবার গঙ্গার ইলিশ। ভাত ইলিশ খেয়ে মা বিদায় নেন চট্টোপাধ্যায় বাড়ি থেকে।
এ বছর পুজোয় নতুন জামা-কাপড় কেনেন নি সুদীপা। শুধু মায়ের পুজোর সময় নতুন একটা শাড়ি পরতে হয় নয়তো ভোগ রান্না করা যায় না, তাই একেবারে সাদামাটা একটা সুতির শাড়ি নিয়েছেন। বরণের সময় যে গয়নাগাঁটি পরতেন সেগুলোও এবার লকার থেকে আনেননি। যেটুকু না পরলেই নয় সেটুকু পরেই মাকে বরণ করবেন বলে জানিয়েছেন।
প্রতিবছর লাল পাড় সাদা শাড়ি পরে মাকে বরন করেন অভিনেত্রী। তবে মায়ের সাজে কোনও পরিবর্তন হবে না। সুদীপা বলেন ছোটো ছেলে আদিদেবও কিছুটা পরিস্থিতি বুঝতে পারছে। উপহার ছাড়া তাঁরও নতুন জামা হয় নি। পঞ্চমীর দিন সুদীপা-অগ্নিদেবের বাড়িতে উমা আসবেন। প্রতিবছরের মতো এবারের স্বামী আর ছেলেকে নিয়ে পুজোয় মাতেন সুদীপা। এবারের পুজোতেও তাঁদের আনন্দঘন মুহূর্ত দেখার আশায় ভক্তরা।
প্রতিবেদন : প্রিয়াংকা সরকার