সৃজিত মুখোপাধ্যায়, বাংলা সিনেমার অন্যতম জনপ্রিয় পরিচালক, তার নতুন সিনেমা ‘টেক্কা’র সাফল্য নিয়ে দারুণ ব্যস্ত ছিলেন দুর্গাপুজো মৌসুমে। এই সময় তিনি নানা অনুষ্ঠান, ইন্টারভিউ এবং প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে ছবির প্রচারে সময় কাটিয়েছেন। তার পরিচালিত ‘টেক্কা’ সিনেমাটি দর্শকদের বেশ প্রশংসা পেয়েছে এবং এখনও প্রেক্ষাগৃহে দর্শক টানছে। তবে পেশাগত ব্যস্ততার মাঝেও সৃজিতের ব্যক্তিগত জীবনের এক বিশেষ দিক সম্প্রতি আলোচনায় উঠে এসেছে, যেখানে সাপের প্রতি তার ভালবাসা এবং আকর্ষণের কথা ধরা পড়েছে।
সৃজিতের সরীসৃপদের প্রতি ভালোবাসা নতুন কিছু নয়। তার নিজের বাড়িতেও পাঁচটি বল পাইথন রয়েছে, যাদের তিনি খুব যত্ন করে বড় করে তুলছেন। সাপের প্রতি এই গভীর আগ্রহের কারণে, তিনি বিদেশ সফরে গেলে প্রায়ই একটি নতুন সাপ বাড়িতে নিয়ে আসেন। এবারও, লন্ডন সফরে গিয়েই তিনি উইলটন পেট শপ থেকে সাপ ও অন্যান্য সরীসৃপের সঙ্গে কিছু ছবি সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করেছেন। ছবিগুলোতে দেখা যায়, কখনও সাপকে তিনি গলায় জড়িয়ে নিয়েছেন, আবার কখনও সাপের মাথায় চুম্বন করছেন। এই ছবিগুলি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করার পর থেকেই নেটিজেনদের মধ্যে সাড়া ফেলেছে। অনেকে তার এই সাহসিকতার প্রশংসা করেছেন, আবার কেউ কেউ মজার মন্তব্যও করেছেন।
উল্লেখযোগ্যভাবে, একজন নেটিজেন তার পোস্টে মন্তব্য করে লিখেছিলেন, “এ বার শুধু ‘পারসলটাং’ রপ্ত করা বাকি।” এটি হ্যারি পটার সিরিজের একটি বিশেষ ভাষার রেফারেন্স, যার মাধ্যমে যাদুকররা সাপের সঙ্গে কথা বলতে পারে। এই মন্তব্যের জবাবে সৃজিত মজার ছলে লেখেন, “আমি ‘পারসলটাং’ ভাষায় দক্ষ। ভাবছি মনসামঙ্গলটাও ওই ভাষায় অনুবাদ করব। বাচ্চাগুলো পড়ুক।” এখানে ‘বাচ্চা’ বলতে সৃজিত আসলে তার পোষ্য সাপদের কথাই বলেছেন। তার এই মজার জবাব অনুরাগীদের মধ্যে হাস্যরসের খোরাক জুগিয়েছে।
কিন্তু সৃজিতের এই লন্ডন সফরের প্রধান উদ্দেশ্য কেবলমাত্র সাপের সঙ্গে সময় কাটানো নয়। জানা গেছে, তিনি মূলত কাজের জন্যই লন্ডন গিয়েছেন। সেখানে একটি বিদেশি প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে নতুন কাজ নিয়ে আলোচনা করতে। তাঁর প্রজেক্ট ‘টেক্কা’র সাফল্যের পর, সৃজিত আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় আরও বড় মাপের কাজ করতে আগ্রহী, যা বাংলা সিনেমার জন্যও একটি ইতিবাচক উদ্যোগ হতে পারে। লন্ডনের সঙ্গে সৃজিতের আগের থেকেই একটি বিশেষ সংযোগ রয়েছে, কারণ তিনি এর আগেও সেখানে শুটিং করেছেন এবং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবগুলোতে অংশগ্রহণ করেছেন।
লন্ডনে পৌঁছে, কাজের ব্যস্ততার ফাঁকে সৃজিত ভ্রমণেরও পরিকল্পনা করেছেন। ভ্রমণের সময় তিনি বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ব্রিটেনের সংস্কৃতির সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করার চেষ্টা করছেন। লন্ডন ভ্রমণের এই অভিজ্ঞতা তাকে ব্যক্তিগত এবং সৃষ্টিশীল উভয় দিক থেকেই সমৃদ্ধ করছে। তার সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করা পোস্টগুলিতেও তার ভ্রমণের বিভিন্ন মুহূর্ত ধরা পড়েছে। কখনও দেখা যাচ্ছে তিনি লন্ডনের কোনো ঐতিহাসিক স্থাপনার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন, আবার কখনও দেখা যাচ্ছে, তিনি উইলটন পেট শপের মতো বিশেষ জায়গায় সরীসৃপদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন।
সৃজিতের এই সফর এবং তার সরীসৃপ প্রেমের গল্প সমানভাবে আলোচনায় এসেছে। তার পোষ্য সাপদের প্রতি ভালোবাসা এবং তাদের সঙ্গে কাটানো মুহূর্তের ছবি দেখে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, তিনি কি লন্ডন থেকে আরও একটি সাপ নিয়ে ফিরবেন? যদিও সৃজিত এই বিষয়ে সরাসরি কিছু জানাননি, তবে তার পোস্টের বিষয়বস্তু এবং লন্ডনের পেট শপে যাওয়ার বিষয়টি থেকে অনেকেই এই ধারণা করছেন। তার এই সরীসৃপ-প্রেম এবং সাহসিকতা যে একেবারেই আলাদা এবং অনন্য, তা স্পষ্টভাবে বোঝা যায়।
বাংলা সাহিত্যের প্রতি সৃজিতের গভীর ভালোবাসাও নতুন নয়। তিনি ইতিমধ্যেই অনেক সাহিত্যিক রচনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। এইবার, নেটিজেনদের ‘মনসামঙ্গল’ অনুবাদের প্রস্তাবকে মজার ছলে গ্রহণ করলেও, এতে তার সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ স্পষ্ট হয়। ‘মনসামঙ্গল’ হল মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের একটি বিখ্যাত রচনা, যেখানে দেবী মনসার কাহিনী এবং সাপের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। সৃজিত যদি সত্যিই কখনও ‘মনসামঙ্গল’ নিয়ে কিছু কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন, তবে সেটি বাংলা সাহিত্য এবং সংস্কৃতির ক্ষেত্রে একটি বিশেষ সংযোজন হতে পারে।
কাজ এবং ব্যক্তিগত ভালোবাসার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে সৃজিত বরাবরই দক্ষ। তিনি যখনই কোনো নতুন প্রজেক্টে হাত দেন, তখনই সেটিতে নিজের সমস্ত সৃজনশীলতাকে ঢেলে দেন। একইভাবে, সরীসৃপদের প্রতি তার ভালোবাসাও তার ব্যক্তিগত জীবনের অংশ হিসেবে ফুটে ওঠে। তার এই ভালোবাসা থেকে বোঝা যায়, প্রকৃতির প্রতি এবং জীবের প্রতি তার এক ধরণের সংযোগ রয়েছে, যা অনেকের কাছে অস্বাভাবিক বা সাহসী বলে মনে হতে পারে।
সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের এই লন্ডন সফর এবং সরীসৃপ প্রেমের গল্প তার ভক্তদের এবং চলচ্চিত্রপ্রেমীদের মধ্যে আলোড়ন তুলেছে। তার ভিন্নধর্মী শখ, সাহসিকতা, এবং সৃজনশীল প্রকৃতির জন্য সৃজিত বরাবরই চর্চায় থাকেন। আর এই সফর ও তার সরীসৃপ প্রেম তাকে আরও একবার নতুন আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে।