এ প্রজন্মের অত্যন্ত জনপ্রিয় গায়ক অরিজিৎ সিং।তাঁর কণ্ঠে বিভিন্ন ঘরানার গান শুনে বারবার মোহিত হয়ে ওঠেন অনুরাগীরা। তবে এবার যেন একটু ব্যতিক্রম হলো।বাংলা সঙ্গীত জগতের এক অন্যতম গান হলো “আমি শুনেছি সেদিন তুমি”। সকল প্রজন্মের কাছে মৌসুমী ভৌমিকের গাওয়া এই গান মনে দাগ কেটে যায়। এবার সেই গানই গাইতে শোনা গেল অরিজিৎ সিংকে। তাঁর কণ্ঠে এই শুনে মোটেই খুশি নন গানের স্রষ্টা স্বয়ং মৌসুমী ভৌমিক। বললেন, “শুনে বমি পাচ্ছে”।
অরিজিৎ সিং এর গানে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স!
সম্প্রতি, নিজের সোশ্যাল মিডিয়ার পাতায় একটি ইউটিউব চ্যানেলের লিংক পোস্ট করেন। সেখানে শোনা গিয়েছে অরিজিৎ সিং এর কণ্ঠে আমি শুনেছি সেদিন তুমি গানটি। এই গান আদৌ অরিজিৎ সিং নিজে গেয়েছেন কী না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে গায়িকা মৌসুমী ভৌমিকের।নিজের পোস্টে গায়িকা লিখেছেন, “পুরো গানটি শুনলাম। আমার মনে হয় এটি “এআই”-এর সাহায্যে তৈরি। বমি বমি পাচ্ছে। আমি আসলেই একেবারেই পিছিয়ে পড়ছি”। তাঁর এই পোস্টে সমর্থন জানিয়েছেন অনুরাগী থেকে নেটিজেনরা।
কী করছে “এ আই”
প্রসঙ্গত, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স অথবা “এআই”। বর্তমানে অত্যন্ত প্রচলিত একটি প্রযুক্তি। কবিতা থেকে গল্প। এমনকি গানের সুর পর্যন্ত করে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার। চাইলে যেকোনও গানে অন্য গায়কের কন্ঠও ব্যবহার করে হুবহু সেই গানও গেয়ে দিতে পারবে এই এআই।
ইউটিউব অথবা সোশ্যাল মিডিয়ার পর্দায় চোখ রাখলে এরকম অজস্র উদাহরণ দেখা যায়।হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, কিশোরকুমার, মহম্মদ রফি সহ বহু কিংবদন্তী গায়ক গায়িকাদের কন্ঠও ব্যবহৃত হচ্ছে বিভিন্ন গানে। বার বার এহেন ঘটনায় কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে সঙ্গীত শিল্পীমহলের একাংশের।
সম্প্রতি, কয়েকমাস আগে কাজী নজরুল ইসলামের লেখা “কারার ঐ লৌহ কপাট” গানে নিজস্ব সুরে তৈরি করে চরম বিতর্কের মুখে পড়তে হয়েছিল মিউজিক কম্পোসার এ আর রহমানকে। আর এ বার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্য নিয়ে প্রয়াত শিল্পীদের কণ্ঠস্বর ব্যবহার করে নতুন গানের সৃষ্টি করেছেন এ আর রহমান। একদিকে এটি যেমন প্রশংসনীয়, অন্যদিকে আবার এই কৃত্রিম প্রযুক্তিতে হ্রাস না টানলে ভবিষ্যতে বড়সড় বিপদের সম্মুখীন হতে হবে বলে আশঙ্কা করছেন একাধিক শিল্পীরা। ইতিমধ্যেই আইনি উপায় নিজের গান এবং কন্ঠস্বরকে সংরক্ষণ করছেন কুমার শানু। সেই পথেই এবার হাঁটার কথা ভাবছেন মুম্বইয়ের একাধিক শিল্পীরা।
এদিকে এখনই সচেতন না হলে ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি যে সঙ্গীত জগতে যথেষ্ট প্রভাব ফেলতে পারে তা মনে করছেন কলকাতার একাধিক শিল্পীরাও।এসবের পাশাপাশি যেসব কণ্ঠী শিল্পীরা রয়েছেন। যাদের রুজিরোজগারের একমাত্র উপায় এটি। তাঁদের নিয়ে অবশ্য কোনও সমস্যা নেই শিল্পীদের।
তবে প্রশ্ন উঠছে আইনি পথ অনুসরন করলে দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হবে না তো কণ্ঠী শিল্পীদের। সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে এমনটাই মনে করেন রূপঙ্কর এবং ইমন। এই সমস্যার সমাধান করতে সকলে সংগঠিত হয় এই বিষয়েটির ওপর নজর দিতে হবে শিল্পীদেরকেই। এখন না হলেও ভবিষ্যতে এই আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের হাত থেকে নিজেদের কন্ঠ এবং গান আগলে রাখতে আইনি পথ অবলম্বনই একমাত্র ভরসা বলে মনে করছেন শিল্পীরা।তবে আইনি পথ অবলম্বন করার পরেও এআই আবারও কারোর কন্ঠ বা গান ব্যবহার করবে না সেটার ওপর নজর রাখা আদৌ কি সম্ভব? সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে শিল্পীমহলে।