কখনো কবির সিং আবার কখনো অ্যানিমাল, পরিচালক সন্দীপ রেড্ডি ভাঙ্গার সিনেমায় নারীবিদ্বেষ যেন খুব সাধারণ বিষয়। ভারতীয় প্রেক্ষাগৃহে এসব ছবির ব্যবসাও বেশ রমরমিয়ে চলে। এতো হিংসা পরায়ন সিনেমা দেখে দর্শক পরে সমালোচনা করেন বটে, তবে তার বহু আগেই ব্যবসা সফল হয়ে যায় এসব সিনেমা। সেই বিষয়েই এবার কথা বললেন গীতিকার জাভেদ আখতার।
বক্সঅফিসে তোলপাড় ফেলেছিল রণবীর কাপুরের ছবি ‘অ্যানিম্যাল’। কিন্তু সেই ছবির গায়ে লেগেছে ‘নারীবিদ্বেষী’ তকমা। কখনও রক্তের বন্যা, কখনও প্রেয়সীকে যন্ত্রণা দিয়ে প্রেমের উদ্যাপন তুলে ধরা হয়েছে ছবিতে। সঙ্গে আরও ছিল বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের গল্প। তাই নেটাগরিকের একাংশের রোষের মুখে পড়েছিলেন পরিচালক সন্দীপ রেড্ডি ভাঙ্গা। তবে সে রোষ খুব একটা ভারী ছিলো না, তার আগেই বড়পর্দায় বেশ ভালো ব্যবসা করে নিয়েছে এই সিনেমা।তবে যেসব ধরনের গল্প এই সিনেমায় দেখানো হয়েছে এবং দর্শক সেগুলো ভালোবেসেছেন তাতে বলাই যায় এইরকম গল্প ভালো লাগা সমাজের জন্য বেশ ক্ষতিকর বিষয়।
জাভেদ আখতারের রোষের মুখে সন্দীপ
এবারে জনপ্রিয় গীতিকার জাভেদ আখতার এই ছবির সমালোচনা করলেন। ফের এক বার এই সিনেমা শিকার হলো তাঁর নিন্দার। তিনি বললেন, বিকৃত মস্তিষ্কের নির্মাতারাই নাকি ‘অ্যানিম্যাল’-এর মতো ছবি তৈরি করেন। সরাসরি সিনেমার নাম উল্লেখ করে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করলেন জাভেদ।
অ্যানিমাল সিনেমা ফের তোপের মুখে পড়লো জাভেদ আখতারের। ছবির নির্মাতাদের ‘বিকৃত’ মস্তিষ্কের বলেও কটাক্ষ করেছেন জাভেদ আখতার। সমাজ যখন এগোচ্ছে, মানুষের ভাবনা চিন্তার অগ্রগতি হচ্ছে, তখন ‘অ্যানিম্যাল’-এর মতো ছবিও হচ্ছে। সেই ছবি ভিড় করে মানুষ দেখতেও যাচ্ছে। আক্ষেপের সুরে জানান বর্ষীয়ান গীতিকার।
সিনেমা দেখে মানুষ সবসময়ই অনুপ্রাণিত হতে চেষ্টা করে। এই জন্য সিনেমাতে যা দেখানো হয়, তা বেশ ভেবেচিন্তেই দেখানো উচিত। সিনেমাতে দেখানো হিংসে দেখে যদি সাধারণ জনগণের মনও সেই দিকেই প্রবুদ্ধ হয় তবে তা সমাজের জন্য বেশ বিপজ্জনক।
অ্যানিমালকে তাঁক করে বিদ্রুপ জাভেদের!
জাভেদ বলেছেন, “১৫ জন মিলে এমন ছবি বানাচ্ছেন, যেখানে কোনও মূল্যবোধ নেই। ১০-১২ জন মিলে একটি গানের জন্য অশ্লীল দৃশ্য তৈরি করছেন। ১৪০ কোটি মানুষের মধ্যে ১৫ জন বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ থাকতেই পারে। সত্যি বলতে সেটা একদমই সমস্যা নয়। এতে কিছুই যায় আসে না। কিন্তু বাজারে এমন ছবি যখন সফল হয়, তখন সেটা হয়ে দাঁড়ায় চিন্তার কারণ।”
জাভেদ জানিয়েছেন ২০ ও ৩০-এর দশকেও অশ্লীল গান তৈরি হয়েছে। কিন্তু মানুষ সেই সময় সেগুলি গ্রহণ করেনি। কিন্তু বর্তমান দিনে এসব সিনেমা দেখে খুশি হয় মানুষ। কোথাও গিয়ে দেশের জনগণের মস্তিষ্কও এমনই হয়ে যাচ্ছে। সমাজের কথা ভেবে এই ধরনের সিনেমা বানানো বন্ধও করবেন না পরিচালক সন্দীপ রেড্ডি। তিনি বলেছেন, তিনি যেমন এরকম সিনেমা বানাচ্ছেন তেমনি দর্শকও কিন্তু এই ধরনের সিনেমা বেশ আগ্রহ নিয়ে দেখছেন।
এই প্রথমবার নয়, এর আগেও ‘অ্যানিম্যাল’-এর নাম না করে জাভেদ বলেছিলেন, ‘‘কী ধরনের চরিত্র তৈরি করলে সমাজ তার প্রশংসা করবে, সেটা বোঝা নতুন চলচ্চিত্র নির্মাতাদের কাছে এখন সব থেকে বড় বিষয়। উদাহরণ হিসেবে কোনও ছবিতে এক পুরুষ চরিত্র এক জন মহিলাকে যদি তার জুতো চাটতে বলে, কিংবা পুরুষটি মহিলাকে চড় মারে, তার পর সেই ছবি যদি সুপারহিট হয়, তা হলে সেটা বিপজ্জনক বিষয়।’’