সুজিত সরকারের অমিতাভ বচ্চন ও অভিষেক বচ্চনের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক এবং মজাদার। একজন পরিচালকের জন্য, প্রথমবার একটি সিনেমার সেটে কিংবদন্তি অভিনেতার সঙ্গে কাজ করা যেমন গর্বের, তেমনই চ্যালেঞ্জিং। সুজিতের ক্ষেত্রেও তেমনটাই ছিল। অমিতাভ বচ্চন, যাঁকে পুরো ভারতবর্ষ একজন কিংবদন্তি অভিনেতা হিসেবে চেনে, তাঁর সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে প্রথম দিনেই সুজিত ভীষণ নার্ভাস ছিলেন। তিনি নিজেই বলেছেন, প্রথম দিন “অ্যাকশন” বলার সাহস পাচ্ছিলেন না। তবে, অমিতাভ বচ্চনের মতো একজন বড় মাপের অভিনেতা তাঁর এই দ্বিধা দূর করতে সাহায্য করেন। তিনি নিজেই মজার ছলে সুজিতকে বলেন, “অ্যাই সুজিত! আমাকে অ্যাকশন বলো।”
এরপর থেকেই সুজিতের ভয় কেটে যায় এবং তিনি ধীরে ধীরে কাজটা আরামদায়কভাবে করতে পারেন। একজন অভিজ্ঞ অভিনেতার কাছ থেকে এমন সহযোগিতা সত্যিই বিরল।
অভিষেক বচ্চনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক…..
অন্যদিকে, অভিষেক বচ্চনের সঙ্গে সুজিতের সম্পর্ক অনেক সহজ ও বন্ধুত্বপূর্ণ। অভিষেক তাঁর বন্ধু, এবং সেটে তাঁদের মুহূর্তগুলো ছিল একেবারে প্রাণবন্ত।
সুজিত বলেছিলেন, শুটিংয়ের ফাঁকে অভিষেক পাশের সেট থেকে এসে বলত, “সুজিতদা, চলো একসঙ্গে লাঞ্চ করি।” শুধু কাজ নয়, তাঁরা একসঙ্গে খেলাধুলাও করতেন। এই সহজ সম্পর্কের কারণেই অভিষেককে পরিচালনা করতে সুজিতের কখনো অসুবিধা হয়নি। সুজিত সরকারের মতে, সিনেমা বানানোর সময় তিনি কখনোই বক্স অফিস সাফল্যের কথা ভাবেন না। তাঁর মূল লক্ষ্য থাকে গল্প এবং চরিত্রের প্রয়োজন মেটানো।
অভিষেক বচ্চনকে তিনি এই সিনেমার জন্য বেছে নিয়েছিলেন কারণ তিনি মনে করেছিলেন অভিষেক এই চরিত্রটির সঙ্গে মানানসই এবং এটি ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারবেন। তিনি বলেন, “আমি গল্প অনুযায়ী চরিত্র নির্বাচন করি। আমি মনে করি, এই সিনেমায় দর্শক অভিষেকের এক নতুন রূপ দেখবেন। তিনি এই চরিত্রে একেবারে ডুবে গিয়েছিলেন।”
শুটিং সেটে মজার মুহূর্ত, বচ্চন পরিবারের সঙ্গে স্মৃতি….
অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে একটি মজার ঘটনা শেয়ার করে সুজিত জানান, একবার তিনি বচ্চনদের বাড়িতে গিয়েছিলেন।
অমিতাভ তখন মজা করে তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “সুজিত, আমার স্ক্রিপ্ট কোথায়?” সুজিতও হাসতে হাসতে উত্তর দিয়েছিলেন, “স্যার, আপনার জন্য এখনও লিখছি। আপাতত এটি অভিষেকের জন্য।” এই মুহূর্তটি তাঁদের সম্পর্কের মজার এবং সহজ একটি দিক তুলে ধরে।এই অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায়, কাজের পরিবেশ যেমন পেশাদার হওয়া উচিত, তেমনই সেটি সহজ ও বন্ধুত্বপূর্ণ হওয়া প্রয়োজন। একজন পরিচালক এবং অভিনেতার সম্পর্ক যদি বন্ধুসুলভ হয়, তাহলে কাজ করাটা অনেক বেশি মসৃণ হয়ে ওঠে।
সুজিত সরকারের অভিজ্ঞতা সেই কথাটাই প্রমাণ করে।এই গল্প শুধু একজন পরিচালকের অভিজ্ঞতা নয়, বরং একজন মানুষের ভেতরের অনুভূতিও প্রকাশ করে। যেখানে তিনি তাঁর ভয়, সংকোচ এবং চ্যালেঞ্জগুলোকে কাটিয়ে উঠে নিজের কাজটাকে সেরা করার চেষ্টা করেছেন। অমিতাভ বচ্চনের সহযোগিতা, অভিষেকের বন্ধুত্ব, এবং সুজিতের গল্পের প্রতি ভালোবাসা—সবকিছু মিলিয়ে এই অভিজ্ঞতা নিঃসন্দেহে খুবই হৃদয়গ্রাহী এবং শিক্ষণীয়।