ঋদ্ধি সেন সম্প্রতি তাঁর মা রেশমি সেনের জন্মদিন উপলক্ষে একটি আবেগপূর্ণ পোস্ট শেয়ার করেছেন। ঋদ্ধি তার এই বিশেষ পোস্টের মাধ্যমে মাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি জীবন, সম্পর্ক এবং আত্মপরিচয়ের গভীরতা নিয়ে তাঁর চিন্তাভাবনা তুলে ধরেছেন। মায়ের জন্মদিনকে তিনি তাঁর নিজ অস্তিত্বের মূল উৎসের দিন হিসেবে দেখেন এবং এই উপলক্ষ্যে একটি গভীর অনুভূতির বার্তা শেয়ার করেছেন।
ঋদ্ধি তাঁর পোস্টে রেশমি সেনের একগুচ্ছ ছবি শেয়ার করেছেন। ছবিগুলিতে বিভিন্ন সময়ে রেশমির জীবন এবং তাঁর মা হিসেবে ভূমিকার কিছু মুহূর্ত ধরা পড়েছে। একটি ছবিতে রেশমি ছোট্ট ঋদ্ধিকে কোলে নিয়ে তাঁর কান্না থামাচ্ছেন, আর অন্য একটি ছবিতে তাঁকে মঞ্চে অভিনয় করতে দেখা যাচ্ছে। এই সব ছবির মধ্যে রেশমির তরুণী বয়সের একটি ছবিও রয়েছে, যা মায়ের জীবনের একটি বিশেষ অধ্যায়কে প্রতিফলিত করে। ঋদ্ধি মনে করেন, মা হিসেবে রেশমি শুধু সন্তানকে বড় করে তোলেননি, বরং নিজের অভিজ্ঞতা এবং ভালোবাসার মাধ্যমে তাঁদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে সুন্দর করে তুলেছেন।
জন্মদিনের বিষয়ে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি অনেকটাই আলাদা। ঋদ্ধি জন্মদিনকে শুধুমাত্র একটি উদ্যাপনের দিন হিসেবে দেখেন না। তাঁর কাছে এটি হলো নিজেকে উপলব্ধি করার, নিজের সত্তার সঙ্গে গভীর আলাপচারিতা করার একটি বিশেষ দিন। তিনি মনে করেন, আমাদের জীবনে এমন কিছু দিন থাকে যখন আমরা নিজের সঙ্গে একান্তে সময় কাটাতে চাই, নিজের ছায়াসঙ্গীর সঙ্গে কথা বলতে চাই। এই ‘ছায়াসঙ্গী’ শব্দটি তিনি এমন এক সত্তার জন্য ব্যবহার করেছেন, যা আমাদের অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকে, যা আমাদের অস্তিত্বকে জাগ্রত করে। এই দৃষ্টিভঙ্গি তাঁর মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসার একটি গভীর প্রকাশ।
ঋদ্ধি তাঁর পোস্টে আরও লিখেছেন, “কিছুদিন এমন থাকে যেই দিনটা শুধু নিজের আর ছায়াসঙ্গীর। হয়তো রোজকার দৃশ্য, শব্দ, আলো, আঁধারের জগতে সর্বাঙ্গে সরীসৃপের মতো লেপ্টে থাকা সমাজের দেওয়া পরিচিতির প্রলেপ ধুয়ে ফেলার ফাঁকে স্নানঘরে দেখা মেলে ছায়াসঙ্গীর। আয়নার ঘষা কাচের মধ্যে হাতছানি দিয়ে ডেকে যায়, পরিচিতি নামক প্যারাসাইটের জঠরের ঘুম থেকে উঠে পড়তে বলে বারবার, জেগে ওঠার দিনগুলোর নাম হয়তো জন্মদিন।” এই অংশটি থেকে বোঝা যায় যে, ঋদ্ধির কাছে জন্মদিন মানে শুধু আনন্দ নয়, বরং নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করার দিন।
মায়ের প্রতি তাঁর প্রশ্নগুলোও ছিল গভীর। তিনি রেশমিকে জিজ্ঞাসা করেন, “জীবনের প্রসব বেদনার ফসল স্বরূপ তোমার গাছে থেকেছে শুধুই নতুন পাতা। এত যত্ন করে কী করে জল দিয়ে গেলে এতগুলো বছর ধরে?” এই প্রশ্নের মাধ্যমে তিনি মায়ের আত্মত্যাগ এবং ভালোবাসার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। মা হিসেবে রেশমি যে যত্ন এবং স্নেহ দিয়ে ঋদ্ধিকে বড় করে তুলেছেন, সেটাই ঋদ্ধির এই প্রশ্নে প্রতিফলিত।
ঋদ্ধির সামাজিক চেতনা এবং চারপাশের ঘটনার প্রতি তাঁর সংবেদনশীল মনোভাবও এই পোস্টে প্রকাশ পায়। তিনি লিখেছেন, “সভ্যতার অগ্রগতিতে শুকিয়ে আসছে নদী। একদিন সব নদী শুকিয়ে গেলেও তোমার কাছে গেলে জল পাব ঠিক, জানি।” এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি বুঝিয়েছেন যে, যতই সময়ের পরিবর্তন হোক না কেন, মায়ের স্নেহ এবং ভালোবাসা চিরকাল অমলিন থাকবে। সভ্যতার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মানসিকতা এবং প্রাকৃতিক সম্পদ হয়তো ক্ষয়প্রাপ্ত হতে পারে, কিন্তু মায়ের ভালোবাসা সেই চিরন্তন অনুভূতি যা কখনো শুকিয়ে যায় না।
ঋদ্ধির এই পোস্ট তাঁর শৈশবের স্মৃতিচারণেও পূর্ণ। তিনি মনে করেন, ছোটবেলায় মায়ের সঙ্গে কাটানো প্রতিটি মুহূর্তই তাঁর জীবনে বিশেষ ছিল। পোস্টে উল্লেখ করেন, “ছোটবেলায় তোমার সঙ্গে ‘লায়ন কিং’ দেখতে দেখতে কতবার ভেবেছি, তুমি না থাকলে কত কী হতো না।” এই স্মৃতিচারণ মায়ের সঙ্গে তাঁর গভীর সংযোগ এবং সম্পর্কের অনুরাগকে তুলে ধরে। তিনি বুঝতে পারেন যে, মায়ের উপস্থিতি তাঁর জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং এখনও আছে।
ঋদ্ধি মনে করেন, জন্মদিনকে উদযাপন করার সেরা উপায় হলো নিজের এবং নিজের মনের গভীর সত্তার সঙ্গে সময় কাটানো। তাই তিনি তাঁর মাকে পরামর্শ দেন, “আজকের দিনটায় থাকুক শুধু তুমি আর তোমার ছায়াসঙ্গী। আলো আর অন্ধকার, দুটোই একান্তই তোমার, কারণ তোমার ছোট্ট বাগানটার উপর অধিকার একমাত্র এই দু’জনের।” এর মাধ্যমে ঋদ্ধি বোঝাতে চেয়েছেন, জীবন কখনো শুধুমাত্র আনন্দের নয়, বরং আমাদের জীবনের প্রত্যেকটি মুহূর্ত, সুখ-দুঃখ, আলো-অন্ধকারের সমন্বয়েই পূর্ণ।
এই পোস্টের মাধ্যমে ঋদ্ধি তাঁর মায়ের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে, তিনি জন্মদিনের উপলক্ষকে একটি মানসিক যাত্রার প্রতীক হিসেবে তুলে ধরেছেন, যা আমাদের প্রত্যেকের জন্য গভীর অর্থপূর্ণ হতে পারে। এই পোস্ট শুধু মায়ের প্রতি ভালোবাসার প্রতিফলন নয়, বরং জীবনের প্রতি এক ধরণের দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গিরও প্রকাশ, যা ঋদ্ধির ব্যক্তিত্বের একটি বিশেষ দিককে প্রকাশ করে।