বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়াদের অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রসঙ্গীতের রিমিক্স এবং রাম ভজন পরিবেশনা নিয়ে বড় ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ, এই অনুষ্ঠান মূলত বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছাত্রছাত্রীদের জন্য আয়োজন করা হলেও তাঁদেরকে অনুষ্ঠানে সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে। বরং অন্যদের দিয়ে এই অনুষ্ঠান পরিচালিত হয়েছে, যা বিশ্বভারতীর প্রথা এবং ঐতিহ্যের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
বিশ্বভারতী এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যেখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং ব্রাহ্ম আন্দোলনের আদর্শ মেনে চলে। এখানকার ঐতিহ্য অনুযায়ী, রবীন্দ্রসঙ্গীতের রিমিক্স বা কোনো ধর্মীয় গান পরিবেশনা করা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। তবুও, বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের জন্য আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে এমন কর্মকাণ্ড হওয়ায় ছাত্রছাত্রী এবং প্রাক্তনীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। এই অনুষ্ঠানটি দুই দিন ধরে বিনয় ভবনের প্রেক্ষাগৃহে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এটি আয়োজন করা হয়েছিল এমএডের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জাতীয় আলোচনাসভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হিসেবে।
কিন্তু, অনুষ্ঠানে যাঁদের অংশগ্রহণের কথা ছিল, তাঁদের অধিকাংশকেই বাদ দেওয়া হয়। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছাত্রছাত্রীদের বক্তব্য অনুযায়ী, তাঁরা এই অনুষ্ঠানের জন্য কোনো আমন্ত্রণই পাননি। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়া সৌরভ পান অভিযোগ করেছেন যে, এই অনুষ্ঠানের জন্য যাঁদের নাম ব্যবহার করা হয়েছে, বাস্তবে তাঁদের কোনো ভূমিকা ছিল না। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, এ ধরণের ঘটনার মাধ্যমে তাঁদের প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবজ্ঞা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের অনুষ্ঠানে উপেক্ষা, বিশ্বভারতী তে ক্ষোভের ঝড়….
বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এই অনুষ্ঠানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সরিতা আনন্দ নামে এক অধ্যাপককে। কিন্তু, তাঁর বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের হেনস্তার অভিযোগ রয়েছে এবং তাঁর নামে মামলা চলছে। তাই, এমন একজন ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেওয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
বিশ্বভারতীর প্রথা অনুসারে, এখানে কোনো দেবদেবীর জয়গান বা রবীন্দ্রসঙ্গীতের রিমিক্স পরিবেশনা করা হয় না। এটি দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। ফলে, এ ধরণের কার্যকলাপ বিশ্বভারতীর ঐতিহ্যের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন বলেই অনেকে মনে করছেন। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে না পারা এক ছাত্র, বামনদীপ্ত পাল, বলেন যে, ছোটবেলা থেকেই তাঁরা বিভিন্ন লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে এগিয়ে এসেছেন।
কিন্তু, এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে তাঁদের বাদ দেওয়া তাঁদের জন্য অত্যন্ত অপমানজনক।
আরও পড়ুন
বিশ্বভারতীর ছাত্রদের প্রতিবাদ, অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে সমালোচনা…
বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৃণমূল ছাত্র পরিষদও তাদের সমর্থন জানিয়েছে। তাঁদের দাবি, এ ধরণের ঘটনাকে মেনে নেওয়া যায় না এবং ভবিষ্যতে এ নিয়ে আরও বড় ধরনের আন্দোলন হতে পারে। তবে, এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ আধিকারিক বা বিনয় ভবনের অধ্যক্ষ কোনো প্রতিক্রিয়া দেননি। ফলে, ছাত্রছাত্রী এবং প্রাক্তনীরা ক্ষুব্ধ এবং তাঁরা উচ্চ কর্তৃপক্ষের কাছে এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
বিশ্বভারতীর এই বিতর্ক সাধারণ মানুষের মধ্যেও প্রশ্ন তুলেছে। অনেকেই মনে করছেন যে, এই ঘটনাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের অধিকারের প্রতি এক ধরনের অবমাননা। যদি এর বিরুদ্ধে শীঘ্রই কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে বিষয়টি আরও বড় আকার ধারণ করতে পারে।