প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার হলিউডে যাত্রার পেছনে ছিল বলিউড ইন্ডাস্ট্রির ভিতরে ক্রমশ কঠিন হয়ে ওঠা পরিস্থিতি। একটি সময় ছিল যখন তিনি বলিউডের প্রথম সারির অভিনেত্রীদের মধ্যে ছিলেন এবং বড় প্রযোজনার চলচ্চিত্রে নিয়মিত কাজ করতেন। ‘ফ্যাশন’, ‘বরফি!’, ‘বাজিরাও মস্তানি’-র মতো সিনেমায় তার অভিনয় প্রশংসিত হয় এবং তিনি জাতীয় পুরস্কারও অর্জন করেন। কিন্তু এই উজ্জ্বল ক্যারিয়ার সত্ত্বেও তাকে বলিউডে একপ্রকার কোণঠাসা করে ফেলা হয়েছিল। ব্যক্তিগত মতবিরোধ, প্রভাবশালীদের বিরোধিতা এবং ইন্ডাস্ট্রির রাজনীতির কারণে তার হাতে কাজ কমে আসে। এ বিষয়টি তার মানসিকভাবে প্রভাবিত করছিল এবং তিনি অবশেষে সিদ্ধান্ত নেন ইন্ডাস্ট্রি থেকে কিছুটা বিরতি নিতে।
প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার বলিউডে সাফল্য এবং প্রতিকূলতার সম্মুখীন হওয়া….
প্রিয়াঙ্কার জন্য হলিউডে প্রথমদিকে পথচলা সহজ ছিল না। বলিউডে তিনি প্রধান চরিত্রে কাজ করতেন, কিন্তু হলিউডে ছোট চরিত্রে বা তুলনামূলকভাবে কম বাজেটের ছবি করতে শুরু করেন। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন কেন তিনি একটি সফল বলিউড ক্যারিয়ার ছেড়ে এমন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করছেন। প্রিয়াঙ্কা তার সোজাসাপ্টা উত্তর দেন – ইংরেজি ভাষায় ফিল্মোগ্রাফি তৈরি করতে এবং আন্তর্জাতিক মানের অভিজ্ঞতা অর্জন করাই ছিল তার লক্ষ্য। তিনি মনে করেন, এই অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য নিজের অবস্থান থেকে কিছুটা কম স্থানেও কাজ করতে প্রস্তুত থাকা জরুরি ছিল।
প্রিয়াঙ্কা জানান, বলিউডে তাকে যতটা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়েছে, হলিউডেও একদম নতুন একজন অভিনেত্রী হিসেবে তাকে ছোটখাটো চরিত্রে কাজ করতে রাজি হতে হয়েছে। যদিও হলিউডে তাকে শুরুতে ‘বি-গ্রেড’ ছবিতে কাজ করতে হয়েছিল, তবু তিনি এই কাজগুলো করতে অস্বীকার করেননি। তার মতে, নিজের প্রতিভা এবং কাজের প্রতি নিষ্ঠা দেখানোই হলিউডের মতো একটি ইন্ডাস্ট্রিতে দাঁড়ানোর প্রথম শর্ত।
‘কোয়ান্টিকো’ দিয়ে হলিউডে পরিচিতি অর্জন…
শুধুমাত্র নিজের দক্ষতা ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি ধীরে ধীরে হলিউডে নিজের জায়গা করে নেন। জনপ্রিয় টিভি সিরিজ ‘কোয়ান্টিকো’-তে প্রিয়াঙ্কার কাজ তাকে হলিউডে ব্যাপক পরিচিতি এনে দেয়। পরে ‘বেওয়াচ’, ‘দ্য ম্যাট্রিক্স রিসারেকশন্স’-এর মতো ছবিতে তার উপস্থিতি তাকে আরও প্রতিষ্ঠিত করে।
বর্তমানে ‘সিটাডেল’-এর মতো বড় প্রজেক্টে ডোয়েন জনসন এবং রিচার্ড ম্যাডেনের মতো তারকাদের সঙ্গে কাজ করে প্রিয়াঙ্কা প্রমাণ করেছেন যে প্রতিভা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে সাফল্য অর্জন সম্ভব। তার এই যাত্রা নতুন প্রজন্মের জন্যও এক অনুপ্রেরণার উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। বলিউড থেকে হলিউডে পাড়ি দেওয়া প্রিয়াঙ্কা প্রমাণ করেছেন যে নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য আত্মবিশ্বাস এবং কাজের প্রতি একাগ্রতা খুবই প্রয়োজন।
প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার এই হলিউড যাত্রা প্রমাণ করে যে নিজের ইচ্ছা এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে যে কোনো বাধাকে জয় করা সম্ভব। তিনি বলিউড বা হলিউড, উভয় জায়গায়ই সফলভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং বর্তমানে আন্তর্জাতিক মঞ্চে একজন অন্যতম ভারতীয় অভিনেত্রী হিসেবে তার পরিচিতি অক্ষুণ্ণ রেখেছেন।