বড়দিনে মুক্তি পাওয়া পরিচালক প্রতিম ডি. গুপ্তের থ্রিলার সিনেমা ‘চালচিত্র’ ইতিমধ্যেই দর্শকদের মন জয় করেছে। রহস্য, রোমাঞ্চ আর মানবিক আবেগের চমৎকার মিশ্রণে তৈরি এই সিনেমা সমালোচকদের প্রশংসাও কুড়িয়েছে। এবার পরিচালক প্রতিম আরও বড় পরিকল্পনা নিয়ে আসছেন। শোনা যাচ্ছে, তিনি ‘চালচিত্র’-এর সিক্যুয়েল এবং প্রিক্যুয়েল নিয়ে কাজ শুরু করতে চলেছেন।
কাহিনির সম্ভাবনা…..
‘চালচিত্র ২’-এ গল্প আরও গভীরে প্রবেশ করবে। প্রথম ছবিতে দর্শকেরা দেখেছে ভুবন হালদার নামের এক হোম বন্দি সাইকোপ্যাথের গল্প, যাকে নিয়ে রহস্য জমে উঠেছিল। এই চরিত্রটি প্রথম ছবির অন্যতম আকর্ষণ ছিল। পরিচালক প্রতিম চেয়েছেন, ভুবন হালদারের অতীত এবং তার মনস্তত্ত্বকে আরও বিশদে দেখাতে।
দ্বিতীয় ছবিতে ভুবনের অতীতের কাহিনি এবং বর্তমানের ঘটনাবলি মিলেমিশে যাবে। এতে রহস্য যেমন থাকবে, তেমনই থাকবে মানবিক আবেগের ছোঁয়া। প্রথম ছবিতে থাকা চরিত্রগুলোর মধ্য থেকে টোটা রায়চৌধুরী, শান্তনু মহেশ্বরী, ইন্দ্রজিৎ বসু এবং জিয়াউল ফারুক অপূর্বর চরিত্রগুলো নিশ্চিতভাবেই ফিরে আসবে। একটি বিশেষ দিক হলো, নাসিরের চরিত্রটি (অনির্বাণ চক্রবর্তীর অভিনীত) এই ছবিতে ফ্ল্যাশব্যাকের মাধ্যমে আসবে।
কীভাবে তার চরিত্রটি গল্পে জুড়ে থাকবে, তা নিয়ে পরিচালকের পরিকল্পনা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে এ নিয়ে দর্শকদের কৌতূহল বাড়ছে।
কপ-ফ্র্যাঞ্চাইজির ভবিষ্যৎ……
বাংলা সিনেমায় কপ-ফ্র্যাঞ্চাইজির ধারণা এখনো নতুন। প্রতিম ডি. গুপ্ত এই ধারায় নতুন উদাহরণ তৈরি করছেন। তাঁর প্রথম ছবি ‘চালচিত্র’ শুধু রহস্য ও থ্রিলের ওপর ভিত্তি করে নয়, বরং মানুষের মনোজগতে লুকিয়ে থাকা গভীর ক্ষত এবং হিংস্রতার উৎসও তুলে ধরেছে। এরকম থ্রিলার সিনেমা তৈরি করা সহজ কাজ নয়, কারণ বর্তমান দর্শকেরা ওটিটি প্ল্যাটফর্মে বিদেশি থ্রিলার দেখতে অভ্যস্ত।
‘চালচিত্র’ সিনেমার অনুপ্রেরণা….
প্রতিম ডি. গুপ্তের এই কাহিনির ধারণা এসেছে বিশ্বক মুখোপাধ্যায়ের লেখা ‘কেদার ফাইল্স’বই থেকে। তবে কাহিনি নির্মাণ এবং চিত্রনাট্যের বিশদ পরিকল্পনা একেবারেই পরিচালকের নিজস্ব। তিনি বলেছেন, এই সিনেমা দেশজ হলেও এর আবেদন আন্তর্জাতিক। সিনেমাপ্রেমীরা যেকোনো ভাষা ও সংস্কৃতির হয়েও এটি অনুভব করতে পারবেন। প্রথম সিনেমার সাফল্য….‘চালচিত্র’-এর সফলতার পেছনে একাধিক কারণ কাজ করেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো টানটান গল্প এবং চরিত্রগুলোর অভিনয়। বিশেষ করে ভুবন হালদার চরিত্রে ব্রাত্য বসুর অসাধারণ অভিনয় এবং টোটা রায়চৌধুরীর দৃঢ় উপস্থিতি দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। গল্পের প্রতিটি মোড়ে চমক ছিল, যা দর্শকদের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মনোযোগ ধরে রেখেছিল।
নতুন সিনেমার সম্ভাবনা….
‘চালচিত্র ২’-এর সিক্যুয়েল এবং প্রিক্যুয়েল একসঙ্গে আনার পরিকল্পনা বাংলায় আগে দেখা যায়নি। পরিচালক প্রতিম ডি. গুপ্ত এটিকে বড় পরিসরে তুলে ধরতে চান। এতে প্রথম ছবির রহস্য এবং রোমাঞ্চকে আরও বিস্তৃত করার সুযোগ থাকবে।
কবে মুক্তি পাবে?
যদিও ‘চালচিত্র ২’-এর নির্মাণ বা মুক্তির দিন-তারিখ নিয়ে এখনো কিছু ঘোষণা হয়নি, তবে টলিপাড়ায় জোর গুঞ্জন, খুব শিগগিরই এর কাজ শুরু হবে। প্রযোজনা সংস্থা এবং পরিচালকের দল ইতিমধ্যেই চিত্রনাট্যের পরিকল্পনা নিয়ে ব্যস্ত। এই সিক্যুয়েলের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হতে চলেছে ভুবন হালদারের অতীতের রহস্য উন্মোচন। সেইসঙ্গে পুরনো চরিত্রগুলোর মধ্যে সম্পর্কের নতুন দিকগুলোও সামনে আসবে। এটি এমন এক অভিজ্ঞতা দিতে পারে, যা দর্শকদের দীর্ঘদিন মনে থাকবে।
বাংলা সিনেমার গণ্ডি ক্রমশ প্রসারিত হচ্ছে। রহস্য আর থ্রিলার ধাঁচের গল্প এখন বাংলা দর্শকদের মন জয় করছে। প্রতিম ডি. গুপ্ত তাঁর ‘চালচিত্র’ সিনেমার মাধ্যমে এই ধারায় নতুন মাইলফলক তৈরি করেছেন। এবার তাঁর দ্বিতীয় প্রচেষ্টা কতটা সফল হয়, সেটাই দেখার অপেক্ষা।