পঙ্কজ ত্রিপাঠী, বলিউডের বর্তমান সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় এবং বহুমুখী অভিনেতা, তাঁর কেরিয়ারের প্রথম দিকে যে কঠোর সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে গিয়েছিলেন, তা খুব কম মানুষই জানেন। আজ যিনি মির্জাপুর, ক্রিমিনাল জাস্টিস, লুডো, রাজমা চাওল, কিংবা শেখ চিল্লি সিরিজের মতো জনপ্রিয় কাজের জন্য পরিচিত, তিনি তার প্রথম দিনগুলোতে একেবারেই আলাদা জীবনযাপন করতেন।
হোটেলে কাজ থেকে বলিউডের সাফল্য,পঙ্কজ ত্রিপাঠীর যাত্রা
পঙ্কজের কেরিয়ারের শুরুটা ছিল পাটনার একটি হোটেলে কাজ করা দিয়ে। ৯০-এর দশকের গোড়ায়, থিয়েটারের প্রতি গভীর ভালোবাসা সত্ত্বেও পঙ্কজ আর্থিক কারণে একটি হোটেলে রান্নাঘরে কাজ করতেন। তাঁর দিনের শুরু হতো হোটেলে, রাতের শিফট শেষে আবার সকালে থিয়েটারের কাজ করতেন। এটি ছিল এক কঠিন সময়, কারণ তাঁকে প্রতি দিন পনেরো ঘণ্টা কাজ করতে হতো, এবং একদিনের বিশ্রামের সুযোগ ছিল না। পঙ্কজ নিজের জীবনের এই সংগ্রামী দিকটি সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে তুলে ধরেছেন।
থিয়েটার ও হোটেল কাজের মাঝে পঙ্কজ ত্রিপাঠীর কঠোর পরিশ্রম..
পঙ্কজ ত্রিপাঠী যখন ওই হোটেলে কাজ করতেন, তখন তাঁর স্বপ্ন ছিল থিয়েটার আর অভিনয় নিয়ে, কিন্তু তাঁর হাতে ছিল না পর্যাপ্ত অর্থ, কেবল স্বপ্ন আর কঠোর পরিশ্রম। এমনকি, রাতে হোটেলে কাজ করার পর, দিনের মধ্যে থিয়েটারেও অংশ নিতেন। দিনে পাঁচ ঘণ্টা ঘুমাতেন এবং বাকি সময় কাটাতেন দুইটা থেকে সাতটা পর্যন্ত থিয়েটার শিখতে ও অভিনয় করতে। তাঁর সেই জীবনযাত্রা ছিল অত্যন্ত কঠিন, তবে তাঁর বিশ্বাস ছিল যে একদিন সফলতা আসবেই যদি পরিশ্রম চালিয়ে যাওয়া যায়।
হোটেলের সহকর্মীদের সঙ্গে পুনর্মিলন,পঙ্কজ ত্রিপাঠীর আবেগময় স্মৃতিচারণ….
এখন, যখন পঙ্কজ ত্রিপাঠী বলিউডে নিজের জায়গা পোক্ত করেছেন এবং প্রতিটি কাজের জন্য প্রশংসিত হচ্ছেন, তখন তাঁর পুরোনো সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে। সম্প্রতি তিনি সেই পাটনার হোটেলটিতে ফিরে গিয়েছিলেন, যেখানে তিনি প্রথম কাজ শুরু করেছিলেন। সেখানে গিয়ে পঙ্কজ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তিনি জানান, “আজ আমি সেই হোটেলে মেন গেট দিয়ে প্রবেশ করতে পেরেছি। আগে আমি পিছনের গেট দিয়ে ঢুকতাম, যখন কেউ আমাকে চিনত না, কিন্তু আজ আমি সেখানে একটি সম্মানজনক অতিথি হিসেবে ঢুকলাম। এমনকি, সেই হোটেলের জেনারেল ম্যানেজারও আমাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন।”
এই স্মৃতি ফিরে পেয়ে পঙ্কজ বলেছিলেন, “আমার চোখে জল চলে এসেছিল, কারণ আমি অনুভব করেছিলাম যে জীবনে সবকিছু সম্ভব, কঠোর পরিশ্রম আর নিষ্ঠা থাকলে সমস্ত কিছু অর্জন করা সম্ভব।” তাঁর এই বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয় যে, জীবনে সাফল্য অর্জন করতে গেলে কেবল প্রতিভা নয়, অনেক সময় কঠোর পরিশ্রম, অধ্যাবসায় এবং অধ্যয়নও প্রয়োজন।
এছাড়া, পঙ্কজ ত্রিপাঠী এক সাক্ষাৎকারে আরও বলেছেন যে, তাঁর প্রথম জীবন কেমন ছিল। তিনি বলেছেন, “আমার নাইট শিফট শেষ হয়ে যাওয়ার পর, আমি বাসায় ফিরে পাঁচ ঘণ্টা ঘুমাতাম। তারপর দুপুরে থিয়েটারে যেতাম, এবং ফের রাত ১১টা থেকে ৭টা পর্যন্ত হোটেলে কাজ করতাম। এই লম্বা সময় ধরে আমি এই কঠিন জীবনযাত্রা চালিয়ে গিয়েছিলাম।”
তিনি আরও জানান, এই কঠোর পরিশ্রম তাকে আজকের অবস্থানে পৌঁছাতে সাহায্য করেছে। পঙ্কজ ত্রিপাঠীর জীবনের এই সংগ্রামী গল্প আজ হাজার হাজার মানুষের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস। তাঁর কষ্ট, দৃঢ়তা, এবং কঠোর পরিশ্রমের ফলস্বরূপ, আজ তিনি বলিউডে সফল এবং জনপ্রিয় একজন অভিনেতা। তাঁর কথা থেকে আরও একটি শিক্ষা পাওয়া যায়, তা হলো, জীবনে কোনো লক্ষ্য অর্জন করতে হলে, সঠিক সময় এবং ধৈর্যের সাথে পরিশ্রম করা অত্যন্ত জরুরি।
পঙ্কজ ত্রিপাঠীর মতো অনেক অভিনেতা তাঁদের জীবনে নানা ধরনের সংগ্রাম পেরিয়ে আজকের অবস্থানে পৌঁছেছেন। পঙ্কজের জীবন আমাদের শেখায় যে, আমাদের কোনো স্বপ্নে পিছু হটলে চলবে না, বরং সব বাধা অতিক্রম করে সফলতা অর্জন করতে হবে।