একঝাঁক তরুণ–তরুণী ক্রমাগত দিয়ে চলেছেন পুশ–আপ। ঠিক তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে সংখ্যা গুনছেন মিলিন্দ সোমন। একটা নির্দিষ্ট সংখ্যায় পৌঁছনোর পর তবেই মিলছে ছাড়। প্রথমবার এমন দৃশ্য দেখলে মনে হতেই পারে, ফিটনেস অ্যাওয়ারনেস বাড়াতে এমনটা করছেন অভিনেতা–মডেল। বা কেউ কেউ এমনটাও ভাবতে পারেন যে তিনি হয়তো শরীর চর্চার ক্লাস নিচ্ছেন বা ট্রেনিং দিচ্ছেন।
তবে এর কোনোটাই নয়। প্রথমে না বুঝলেও কিছুক্ষণ পর কিন্তু ভুল ভাঙবেই। পুশ–আপ শেষ করেই একে–একে সেলফির লাইনে দাঁড়ালেন সেইসব তরুন তরুণীরা। উৎসাহীদের সঙ্গে হাসিমুখে ছবি তুলছেন মিলিন্দ। পুরো বিষয়টা যদি এখনো বোধগম্য না হয় তাহলে বুঝিয়ে বলা যাক। আসলে সেলফির জন্য এমন শর্ত রাখেন মিলিন্দ সোমান। সংবাদমাধ্যম কর্মী প্রশ্ন করতেই হাসিমুখে মিলিন্দ বললেন, ‘একদমই। মেয়েদের জন্য ১০টা, আর ছেলেদের জন্য ২০টা পুশ–আপ। বিষয়টা কিন্তু খুবই সোজা।’
কলকাতাকে কিন্তু বেজায় ভালোবাসেন মিলিন্দ সোমন
‘জেবিজি কলকাতা ওয়ার্ল্ড ১০’ দৌড় প্রতিযোগিতার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর মিলিন্দ সোমন। সেই সুবাদেই এবার তিনি ঘুরে গেলেন কলকাতা শহরে।একফাঁকে সংবাদমাধ্যমের কাছে কলকাতার প্রতি নিজের ভালোবাসা ব্যক্ত করেন মিলিন্দ সোমন। কলকাতার কথা শুনলেই প্রথম তাঁর মাথায় কী আসে ? প্রশ্ন শেষের আগেই তাঁর উত্তর আসে ‘কষা মাংস, মাংসের ঝোল’। মিলিন্দ বলেন বাড়িতে ভেজিটেরিয়ান খাবার বেশি খেলেও ট্রাভেল করতে বেরোলে তিনি ননভেজ খান। সাথে একথাও স্বীকার করেন যে, কষা মাংসের স্বাদ তাঁর দারুণ লাগে। এছাড়াও তিনি জানান, বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে গিয়ে সেখানকার লোকাল কোনও ডিশ এক্সপেরিমেন্ট করতে সব সময়ে খুব ভালো লাগে তাঁর।
এরপর ফিটনেস এনথুজিয়াস্ট আরও বলেন, আটের দশক থেকে কলকাতায় আসা যাওয়া আছে তাঁর। এখানে এসে বরাবরই দারুণ অভ্যর্থনা পেয়েছেন বলেও জানান তিনি। কলকাতাকে বরাবরই খুব ভালো লাগে তাঁর। এখানকার মানুষ ও খাওয়া–দাওয়া তাঁর দারুণ পছন্দের। তবে একটু অপূর্ণতার সুরে বলেন শহরটা খুব বেশি ঘুরে দেখার সুযোগ তাঁর হয়নি। তবে পার্ক স্ট্রিট, ময়দানের মতো কিছু জায়গা ঘুরে দেখার সুযোগ হয়েছে।
৬০ বছর বয়সেও অনুরাগীর সংখ্যা ঊর্ধ্বমুখী!
মডেল অভিনেতার বয়স প্রায় ৬০ বছরের কাছে। তবে এই বয়সে এসেও অনুরাগীর সংখ্যায় কিন্তু কমতি নেই। বরং সেই অনুরাগী তালিকায় মহিলা সংখ্যা একটু বেশিই বেশি। এবিষয়ে জানতে চাইলে মিলিন্দ বলেন, ‘সত্যিই জানি না কেন। মনে হয়, একটার কারণ নস্ট্যালজিয়া। অনেকেই তাঁদের তরুণ বয়সে আমার একাধিক কাজ দেখেছেন। আর দ্বিতীয় কারণ অবশ্যই ফিটনেস। হয়তো আমি যে জিনিসগুলো করি, তেমনটা করতে বেশি লোকজনকে দেখেননি অনেকে। কোনও অভিনেতা–অভিনেত্রী পুরো ম্যারাথন দৌড়ন না, যা খানিক বিস্ময়ের। আশা রাখি তাঁরা পরে করবেন।’
মিলিন্দের যে বিষয়টি সবথেকে অবাককর তা হলো তিনি খালি পায়ে দৌড়ন। সে বিষয়ে মিলিন্দ বলেন, তিনি নাকি সহজে কমফর্টেবল জুতো পান না। তাই খালি পায়েই দৌড়ন। বরফে বা উত্তপ্ত বালিতে দৌড়তে হলে পায়ের প্রোটেকশনের জন্য জুতো তো লাগেই। তাই সেসসময় তিনি অবশ্যই জুতো পড়েন। তবে অন্যসময় পা কিন্তু তাঁর খালিই থাকে। মিলিন্দের মতে খালি পায়ে দৌড়নোটা মোটেই কষ্টের নয়, বরং ভালো লাগার অনুভূতি।
মিলিন্দের কাছে ফিটনেস মানে শুধুই সিক্স প্যাক বা চওড়া বাইসেপস নয়। তাঁর কাছে ফিটনেস হলো শারীরিক ও মানসিক ভাবে আরও বেশি চাঙ্গা থাকার উপায়। ভোরবেলা ঘুম থেকে ওঠার অভ্যেসও তাঁর নেই। এই অভিনেতার একটিই বদঅভ্যেস তিনি নাকি তাড়াতাড়ি সকালে উঠতে পারেন না। আটটা নাগাদ উঠে দৌড়তে যান। জিমে যেতেও মোটে ভালো লাগে না এই ফিটনেস ফ্রিকারের। তবে সারাদিনে বেশ কয়েকবার অল্প কয়েক মিনিটের এক্সারসাইজ় করেন ষাটোর্ধ এই অভিনেতা।এটিকে মাইক্রো ওয়ার্কআউট নামে ডাকা যেতে পারে।
খাবারের তালিকায় কি থাকে জিজ্ঞেস করলে মিলিন্দ বলেছেন, ‘রোজ ফল খাই। প্রায় দুই থেকে আড়াই কিলো। তার পরেও খিদে পেলে আলুর পরোটা, খিচুরি, যেমনটা ইচ্ছে খাই।’ তবে মিষ্টি নিয়ে খানিক দুর্বলতা রয়েছে তাঁর। মিলিন্দের কথায়, ‘চকোলেট মুজ়ের মতো ওয়েস্টার্ন সুইট, কেক পছন্দ করি। তার সঙ্গে ক্ষীর, জিলিপি, গুলাব জামুন পছন্দের। আর কলকাতায় এলেই চমচম খাই।’
অভিনয়ের কাজ এই মুহূর্তে খুব বেশি করছেন না মিলিন্দ সোমন। তবে এবারেও আক্ষেপের সুর ভেসে ওঠে তাঁর কন্ঠে। তাঁর কথায়, ‘খুব বেশি কাজ করছি না। আর বাঙালি পরিচালকরাও তো কাজ নিয়ে সে ভাবে এগিয়ে আসেন না। ঋতুপর্ণ ঘোষ দারুণ একটা স্ক্রিপ্ট নিয়ে এসেছিলেন। কাজের কথাও খানিক এগিয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত উনি মারা যান। কাজটাও আর করা হয়নি। চরিত্রটা দারুণ ছিল, করতে পারলে খুব খুশি হতাম।’