পাকিস্তানের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী মাহিরা খান। তাঁর সুনাম শুধু পাকিস্তানেই সীমাবদ্ধ নয়, ভারতেও তিনি সমানভাবে জনপ্রিয়। বলিউড সুপারস্টার শাহরুখ খানের বিপরীতে ২০১৭ সালে মুক্তি পাওয়া ‘রইস’ ছবিতে তাঁর অভিনয় মুগ্ধ করেছিল দর্শকদের। তবে বলিউডে তাঁর উজ্জ্বল কেরিয়ার শুরু হওয়ার আগেই তাঁকে বিতর্কের মুখোমুখি হতে হয়।
রণবীর কাপুরের সঙ্গে তাঁর একটি ছবি ভাইরাল হওয়ায় পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছায় যে ভারতে তাঁর কাজ করা কার্যত নিষিদ্ধ হয়ে যায়।
কী ঘটেছিল?
২০১৭ সালে, রণবীর কাপুরের সঙ্গে মাহিরার একটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। ছবিতে দেখা যায়, মাহিরা এবং রণবীর একসঙ্গে ধূমপান করছেন। শুধু তাই নয়, ছবিতে মাহিরার পোশাক এবং ভঙ্গি নিয়েও কটূ মন্তব্য করেন অনেকেই। সেই সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় একের পর এক ট্রোল এবং সমালোচনার ঝড় ওঠে। নেটিজেনদের একাংশ তাঁকে ‘অশালীন’ এবং ‘অপেশাদার’ বলে কটাক্ষ করেন। এই ঘটনার জেরে মাহিরা মানসিকভাবে বেশ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, “সেই সময়টা আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্তগুলোর একটি ছিল। ছবি ভাইরাল হওয়ার পরে যেভাবে মানুষ আমাকে আক্রমণ করেছিল, তা সহ্য করা সত্যিই কঠিন ছিল।”
ব্যক্তিগত জীবনের প্রভাব ….
মাহিরার মতে, রণবীরের সঙ্গে ছবির কারণে বিতর্ক শুরু হলেও এই ঘটনা তাঁর জীবনের বড় একটি শিক্ষা হয়ে দাঁড়ায়। তিনি বলেন, “আমার জীবন ভিন্ন রকম একটা যাত্রা। এই যাত্রায় অনেক চড়াই-উতরাই এসেছে। বিবাহবিচ্ছেদ, সন্তানের দায়িত্ব একা পালন করা, আর এসবের মাঝেই সমাজের সমালোচনা মেনে নেওয়া—সব কিছুই আমাকে শক্তিশালী করেছে।” রণবীরের সঙ্গে সেই ছবি নিয়ে তিনি কোনো ভুল বোঝাবুঝি না করতে অনুরোধ করেন। তাঁর মতে, এটি ছিল একেবারেই একটি ব্যক্তিগত মুহূর্ত, যা প্রকাশ্যে চলে আসার ফলে অপ্রত্যাশিত কষ্টের মুখোমুখি হতে হয়েছিল।
ভারতে নিষেধাজ্ঞার কারণ ….
রণবীরের সঙ্গে সেই ছবি ভাইরাল হওয়ার পরই ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের অবনতির কারণে পাকিস্তানি শিল্পীদের ভারতে কাজ করার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। মাহিরার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। যদিও মাহিরা মনে করেন, নিষেধাজ্ঞার পেছনে কেবল ওই ছবির কারণ নয়, বরং রাজনৈতিক পরিস্থিতিও বড় ভূমিকা পালন করেছিল।
তবে ভারতে নিষিদ্ধ হওয়ার পরও বলিউডে তাঁর জনপ্রিয়তা কমেনি। রইস ছবিতে তাঁর অভিনয়ের জন্য আজও তিনি প্রশংসিত হন। মাহিরা বলেন, “আমি মনে করি, শিল্পীদের জন্য কোনো সীমান্ত থাকা উচিত নয়। আমরা কাজের মাধ্যমেই একে অপরের সঙ্গে যুক্ত থাকি।”
পরিস্থিতি কীভাবে সামলালেন?
মাহিরা জানিয়েছেন, কঠিন সময় তাঁকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। প্রথম দিকে ট্রোল এবং সমালোচনার জন্য ভেঙে পড়লেও সময়ের সঙ্গে তিনি এগিয়ে যেতে শিখেছেন। তিনি বলেন, “আমার ভক্তরা সবসময় আমার পাশে থেকেছে। তাঁদের সমর্থন আমাকে সাহস জুগিয়েছে।” এখনও সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে নিয়ে ট্রোল বা কটূক্তি করা হয়, তবে এসব নিয়ে তিনি আর মাথা ঘামান না। তাঁর মতে, জীবন চলার পথে এমন ঘটনা আসতেই পারে। গুরুত্বপূর্ণ হলো, সেই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসা।
বর্তমানে মাহিরা নিজের দেশ পাকিস্তানে অভিনয়ে মন দিয়েছেন। সিনেমা, টেলিভিশন এবং ওয়েব সিরিজের মাধ্যমে তিনি বারবার প্রমাণ করেছেন যে তাঁর প্রতিভার কোনো তুলনা নেই। অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি সামাজিক কাজকর্মেও যুক্ত। নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের উদ্দেশ্যে বার্তা দেন যে, “কঠিন সময় আসবেই, কিন্তু নিজেকে হারাতে দেওয়া যাবে না।”
রণবীর কাপুরের সঙ্গে সেই ছবি নিয়ে বিতর্ক আজ অতীত। কিন্তু সেই ঘটনা মাহিরাকে আরও পরিণত করেছে। জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবিলা করে তিনি প্রমাণ করেছেন, সাহস এবং আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান সম্ভব।
মাহিরা খান একজন প্রতিভাবান শিল্পী, যিনি শুধু নিজের অভিনয় দক্ষতাই নয়, বরং জীবনের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে মানুষের মন জয় করেছেন। রণবীরের সঙ্গে ভাইরাল হওয়া ছবি হয়তো একসময় তাঁর জন্য বড় সমস্যা ছিল, কিন্তু সেই ঘটনা আজ তাঁকে আরও শক্তিশালী করেছে। তাঁর যাত্রা প্রমাণ করে, বাধা যত বড়ই হোক, ইচ্ছাশক্তি এবং অধ্যবসায়ের জোরে সব কিছু সম্ভব।