হিন্দু নিপীড়ন নিয়ে তোলপাড় ওপার বাংলার অবস্থা। একের পর এক কাণ্ড ঘটছে সে দেশে। হিন্দুদের ন্যায় বিচারের দায়ে কথা বলায় ইসকনের চিন্ময়কৃষ্ণ দাশ এখন সে দেশের ভাষায় দেশদ্রোহী। পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে।
এখানেই শেষ হয়নি সে দেশের কর্মকান্ড। ভারত সেদেশের হিন্দুদের মোদত দিচ্ছে এমন অভিযোগে তাঁরা ভারতীয় জাতীয় পতাকার অপমান করে বসতেও দ্বিধা বোধ করলো না। বাংলাদেশের একটি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ দ্বারে আঁকা রয়েছে ভারতের তেরেঙ্গার ছবি। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের সময় সেই তেরেঙ্গাতে পা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করছেন সেখানকার শিক্ষার্থীরা। এই ঘটনায় শোরগোল পড়ে গেছে পুরো ভারত জুড়ে।
জাতীয় পতাকার অবমাননায় বাংলাদেশকে ধিক্কার জানিয়েছে ভারতের সমস্ত নাগরিক
তেরেঙ্গার অবমাননায় বাংলাদেশের প্রতি ক্ষুব্ধ ভারতীয় সাধারণ জনতা। প্রতিবেশী দেশের এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন দেশের তারকা মহলও। বাদ যায়নি শিল্পী বা বুদ্ধিজীবীরাও। আর সেটাই তো স্বাভাবিক। সমস্ত কিছুর আগে তো দেশ। ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনার পতনের পর থেকেই সে দেশের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক খারাপ হয়েছে ভারতের। হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশে হিন্দুদের শোচনীয় অবস্থা। এরই মধ্যে তাঁরা ভারতকে নিয়ে কাটাছেঁড়া করে যাচ্ছে। এই নিয়ে কথা বলেছেন ভারতের তারকা মহলের অনেকে। কবিতার ভাষায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন কবীর সুমন।
নিন্দায় মুখর হয়েছে ভারতের সব মহল। ঘৃণা জানিয়ে সোশাল মিডিয়ায় পোস্টের ছড়াছড়ি। দুই বাংলার জনপ্রিয় সঙ্গীতকার কবীর সুমনও এনিয়ে পোস্ট করেছেন। তবে তাঁর সুর খানিকটা ভিন্ন। তিনি মনে করছেন, ‘পতাকায় নয় কিছুই শুরু/ পতাকায় নয় শেষ’। তারমানে কি জাতীয় পতাকার এহেন অপমানকে তিনি ঠিক গুরুত্ব দিচ্ছেন না? পতাকার অবমাননার জন্য সে দেশের সঙ্গে যে সমস্ত ধরনের সম্পর্কই ত্যাগ দেওয়া উচিত সেকথা কি তাঁর মনে হচ্ছে না?
এ প্রসঙ্গে পর পর দুটি পোস্ট লিখেছেন কবীর সুমন। এর একটিতে কবীর সুমন তুলেছেন ‘ফেলানি’র প্রসঙ্গ। তাঁর রচনায় উঠেছে পতাকাহীন কোনও নতুন দেশের কল্পনা। তিনি লিখেছেন –”পতাকার চেয়ে বড় ফেলানির বুক/ সেটা তাক করেছিল কার বন্দুক।/ কাঁটাতারে ঝুলছিল মেয়েটা আমার/ দেশের বুলেট দেশপ্রেমের খামার।/ কার দেশ কার ফ্ল্যাগ কার কাঁটাতার/ কোথায় রইল ঝুলে ফেলানি আমার।/ পরের জন্মে মেয়ে আমি আর তুমি/ ফ্ল্যাগহীন কোনও দেশে খুঁজে পাবো ভূমি।”
তেরেঙ্গার অপমানে প্রতিবাদ জানাতে আবারো গানের ভাষা ব্যাবহার করলেন কবীর সুমন
কবীর সুমনের লেখাতে রয়েছেন বাংলাদেশের শহিদ আবু সঈদও। এই পোস্টের শেষে তাই তাঁর দৃঢ়প্রতিজ্ঞ উচ্চারণ – তিনি কবীর সুমন, পরের জন্মে যে ফেলানির বাবা হবে আর আবু সঈদের মতো ঘাতকের সামনে বুক পেতে দেবে।
পরের আরেকটি পোস্টে পতাকার প্রকৃত রূপ উঠে এসেছে কবীর সুমনের লেখনীতে। সেখানে তাঁর মত, ”কোন্ পতাকায় লাথি দেয় কেউ/ কোন্ পতাকায় ফুল/ আমার প্রেমের পতাকা তোমার/ এলোমেলো হওয়া চুল/ পতাকায় নয় কিছুই শুরু/ পতাকায় নয় শেষ/ আমিই ভারতবর্ষ প্রিয়া/ আমিই বাংলাদেশ”।
কবীর সুমনের নতুন লেখা এইসব প্রতিবাদী গান কিছুটা ধোঁয়াশায় ভরা। তিনি ঠিক কি বলতে চাইছেন, কোন পক্ষে থাকছেন, টা বোঝা দায়। অনেকে তো এও বুঝতে পারছেন না তিনি কি এহেন কবিতায় সম্প্রীতির আভাস দিচ্ছেন? জাতীয় পতাকা অবমাননার প্রতিবাদে এমন প্রেমের গান নিয়ে তাই সমালোচনা কম হচ্ছে না। তবে ‘চিরপ্রেমিক’ কবীর সুমন আগেও প্রতিবাদের হাতিয়ার হিসেবে প্রেমকে তুলে ধরেছিলেন। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটল না।