বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ায় এক বড় অংশ জুড়ে আছে ফুড ব্লগিং। পুরো দেশে কোথায় কেমন খাবার পাওয়া যায়, কেমন তার মান, দামই বা কেমন সেসবই জানা যায় ফুড ব্লগারদের ভিডিয়োতে। বাংলায় এই ফুড ব্লগিং ভাইরাল হয় ফুডকা ওরফে ইন্দ্রজিৎ লাহিড়ীর হাত ধরে।
জনপ্রিয় ইউটিউব চ্যানেল ফুডকার সঞ্চালক ইন্দ্রজিৎ লাহিড়ী। ভাইপোকে (মীর আফসার আলী) নিয়ে শহরের কোণে কোণে, তারপর রাজ্যের কোণে কোণে খাবারের সন্ধানে বেরোতেন। আজকাল রাজ্যের বাইরেও খাবার সন্ধান করতে যান ফুডকা। তবে ভাইপো সঙ্গ ছেড়েছে বেশ কয়েক দিন।
ফুডকার চ্যানেলের সবথেকে ভালো বিষয় হলো, তাঁর খাবার সম্পর্কে জ্ঞান। যেসমস্ত দোকান বা খাবারের স্বাদ তিনি গ্রহণ করেন তাঁদের উৎপত্তি ইতিহাস সম্পর্কেও জানান ফুডকা। ভদ্রলোক যে বরাবরই খাদ্যরসিক তা বেশ ভালই বোঝা যায়। সঙ্গে আছে তীক্ষ্ম গুণ বিচারের ক্ষমতা।
অকারণে স্বাদবিহীন খাবারকে সুস্বাদু বলে চালান না ইন্দ্রজিৎ বাবু। খুব ভালো, ভালো, মোটামুটি, খারাপ এই চারটি শব্দই খাবার ভেদে ব্যবহার করেন তিনি। এই বিষয়টি আজকাল ফুড ব্লগারদের ভেতর বিরল। সমস্ত খাবারকেই অসাধারণ বলে চালিয়ে দেন তাঁরা। সেদিক থেকে ইন্দ্রজিৎ বাবু প্রমোশনাল কাজ করলেও সেই খাবারকে মোটামুটি বলার ক্ষমতা রাখেন।
সত্যি বলার ব্যাপারে বরাবরই স্পষ্টবাদী ফুডকা। এবারে নিজের সোশ্যাল মিডিয়া পেজে কলকাতার এক রেস্তোরাঁর খাবার নিয়ে লিখলেন তিনি। সেখানে তিনি শুধু সেই রেস্তোরাঁ নয়, বরং এমন কাণ্ড ঘটানো সমস্ত রেস্তোরাঁকেই উদ্দেশ্য করেন। তুলে ধরেন কিছু অপ্রিয় সত্য কথা।
গত বুধবার একটা প্লেটে সাজানো চিকেন পকোড়ার ছবি নিজের ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুক পেজে পোস্ট করেন ইন্দ্রজিৎ লাহিড়ী। ক্যাপশনে লেখেন, ‘একটি অপ্রিয় কথা বলি। কলকাতার বেশিরভাগ পুরোনো হেরিটেজ খাবারের দোকান দেখি সারাক্ষন জিয়া নস্টাল। তাঁদের খাবার হয়তো একটা সময় ভালো ছিল, এখন যথেষ্ট সাধারণ – খারাপ না, সাধারণ। হয়তো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা আর নিজেদের মানিয়ে নিতে পারেননি – চানও নি। ফলে দোকানগুলো ভাঙাচোরা , খুব পরিষ্কার নয়। কিন্তু কাঁচামালের দামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দাম আর আজকের দিনে খুব একটা কম নয়। কারো নাম না নিয়েই বলছি – এটা একটা আশ্চর্য ব্যাপার। মানে ওইদামে কিন্তু এখন বেশ কিছু দোকানেই খাবার পাওয়া যায় – পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ভাবে। আমি ঠিক জানিনা , এটা আমাদের কাছে আনন্দের নাকি দুঃখের ব্যাপার। সব ব্যাপারে নস্টালজিয়া কাজ করেনা। এটা হয়তো ভাবার সময় এসেছে।’
সত্যি কথা বলতে কোনোদিনই দুবার ভাবেন না ইন্দ্রজিৎ লাহিড়ী। তাঁর এই গুণ সবথেকে ভালো বোঝা গিয়েছিল আরজিকর কান্ডের সময়। এবারে আরো একবার সত্যিকথা মুখের ওপরেই বলে দিলেন ফুডকা।ফুডকার এই মন্তব্যকে সমর্থন করেছেন অনেক নেটিজেনরাই। কলকাতার বিভিন্ন হেরিটেজ দোকানে যে খাবারের মান নিতান্তই কমে গেছে, সেই দাবি রয়েছে তাঁদেরও। আগে সেসব দোকানের খাবারের স্বাদ ছিলো ১০ গুণ বেশি।
তবে খাবারের মান যতই খারাপ হোক দামের দিক থেকে কিন্তু একফোঁটাও ছাড় দেয়না এসব দোকান। বেশি দাম নিয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে, পুষ্টিগুণ ছাড়া, বেস্বাদ খাবার খাওয়ানোকে একেবারেই সমর্থন করা যায় না। শুধুমাত্র হেরিটেজ জায়গা বা পূর্ববর্তী নাম ডাকের কারণেই এসব দোকান আজও টিকে আছে বলে ধারণা সকলেরই।
সোশ্যাল মিডিয়াতে এমন মন্তব্য করে কোনো নির্দিষ্ট রেস্তোরাঁর নাম নেননি ইন্দ্রজিৎ লাহিড়ী। তবে এই বিষয়টি নিয়ে যে ভাবনা চিন্তা করার সময় এসে গেছে সেকথা নিজের পোস্টে বেশ স্পষ্টই জানান ফুডকা।