এবারে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরে টোটা রায়চৌধুরী ফিরছেন ফেলুদার চরিত্রে। আর কিছুদিনের মধ্যেই হতে চলেছে ওয়েব সিরিজের রিলিজ। তার আগে টিম ফেলুদার আড্ডা ও সাক্ষাৎকার দিলেন জনপ্রিয় এক সংবাদ মাধ্যমের কাছে।
সিনেমার পর এবারে ফের ওয়েব সিরিজে হাজির হচ্ছেন বাঙালির প্রিয় প্রদোষচন্দ্র মিত্র। সৃজিত মুখোপাধ্যায়, অনির্বাণ চক্রবর্তী, কল্পন মিত্র, রজতাভ দত্ত ও ঋদ্ধি সেন। প্রত্যেকের মুখেই শোনা গেল শুটিংয়ের সময় নিজেদের নানা মজার অভিজ্ঞতা। সংবাদ মাধ্যমের কাছে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর ও দর্শকের কৌতূহলও এদিন মেটান ওয়েব সিরিজের কলা কুশলিরা।
‘ভূস্বর্গ ভয়ংকর’ এই প্রজন্মের জন্য কতটা প্রাসঙ্গিক? সংবাদমাধ্যমের এমন প্রশ্নে পরিচালক সৃজিত মুখার্জি বলেন, ৮৭ সালের কাশ্মীরের প্রেক্ষাপটে তিনি তৈরি করেছেন এই সিরিজ। সেই সময়ের কাশ্মীর মানে বোঝাই যাচ্ছে সে বড় সুখের সময় নয়। সে ক্ষেত্রে যা–যা অ্যাডাপ্টেশন, ইন্টারপ্রিটেশন প্রয়োজন, সেসবই করেছেন।
নিজেকে আদিম যুগের মানুষ বললেন রজতাভ!
রজতাভ দত্ত আবার নিজেকে পুরোনো বলে বসলেন। বলেন, “আমি তো আদি যুগের। তিনজন ফেলুদার সঙ্গে কাজ করে ফেলেছি। এটা আমার তৃতীয় ফেলুদার সঙ্গে কাজ করা। নিঃসন্দেহে প্রাসঙ্গিক, নয়তো এত জনপ্রিয়তা পায় কী করে?”
অভিনেতা ঋদ্ধি সেন সংবাদমাধ্যমকে জানায় এই প্রজন্ম বড় হয়েছে ফেলুদা-ব্যোমকেশ নিয়ে। তিনি নিজেও বড় হয়েছেন ফেলুদা’র গল্প পড়ে বা দেখে। নিজেদের ছোটবেলার বিরাট অংশ জুড়ে ছিল ফেলুদা। একছুটে একবার ছোটোবেলার স্মৃতিও আওড়ে নেন তিনি। বলেন, তাঁর মনে পরে তিনি প্রথম যেবার পুরী বেড়াতে যান, তখন যাওয়ার সময়ে ‘হত্যাপুরী’ পড়েছিলেন, সেটা তাঁর জীবনের একটা রোমহর্ষক অভিজ্ঞতা।
বারবার ফেলুদা’কেই বাছা হয় কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে সৃজিত বলেন, ফেলুদা তৈরির নেপথ্যে ভালো বা খারাপ কোনও সমালোচনা তাঁর ক্ষেত্রে মোটিভেশন হিসেবে কাজ করে না। ফেলুদার ক্ষেত্রে বিষয়টা তাঁর ছোটবেলার প্রতি ট্রিবিউট, তাঁর স্মৃতিচারণ, নিজের ইনোসেন্সকে খুঁজে পাওয়া।
রজতাভ বলেন, ফেলুদা যখন লেখা হয়েছে, তখন তো গুগল ছিল না। ফলে তখন তাঁদের হাতে ফেলুদা শিক্ষামূলক বই হিসেবে তুলে দেওয়া হতো, পড়াশোনার বাইরে গল্পের মাধ্যমে অনেক কিছু জানার জন্য।
ঋদ্ধি বলেন, ছোটবেলায় সাধারণ জ্ঞানের পরীক্ষা দিতেন যখন, তাঁর অনেক উত্তর ওই ফেলুদার বই থেকেই জেনে মনে রাখতেন। কারণ হিসেবে ঋদ্ধি জানায় অবশ্যই ‘ফেলুদা’ যিনি লিখেছেন, সত্যজিৎ রায়, তাঁর জ্ঞানের পরিধিটা এতটাই বহুমুখী, যে একটা বইয়ে তিনি নানাবিধ জিনিস দারুণ ভাবে রেখে গিয়েছেন।
শুটিং সেটে চরিত্রদের মধ্যে অফস্ক্রিন রসায়ন কেমন ছিল প্রশ্নের উত্তরে সৃজিত বলেন, আসলে ‘ছিন্নমস্তার অভিশাপ’ থেকেই তিনি নাকি সকল কলা কুশলীদের একরকম জোর করে বন্ধু হতে বাধ্য করেছেন। একটা সময়ের পর আর জোর করতে হয়নি, তাঁরা বন্ধু হয়ে উঠেছিলেন।
সংবাদমাধ্যম আরও জিজ্ঞেস করে, যদি বর্তমান সময়ে সৃজিত মুখোপাধ্যায় ফেলুদা লিখতেন, নতুন কী–কী দিতেন? তখন সৃজিত বলেন, ফাইভ জি গোছের খুব স্ট্রং ইন্টারনেট কানেকশন দিতেন নাকি তিনি। কারণ উনি খুব রিসার্চ করতে ভালোবাসেন। বিশেষ করে পুরোনো কলকাতা নিয়ে। একটা ল্যাপটপ বা আইপ্যাড তো থাকতই বা ফোন।
একেন বাবু থেকে জটায়ুতে ফেরা কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিলো?
ফেলুদার সিরিজে জটায়ুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন অনির্বাণ চক্রবর্তী যেখানে তিনি নিজে স্বতন্ত্র একটা গোয়েন্দা চরিত্রে অভিনয় করেন। তার পর দুই ভিন্ন ধরনের চরিত্রকে ব্যালান্স করার ব্যাপারে অনির্বাণ কি বললেন? অনির্বাণ বলেন, দুটো মানুষ আলাদা। একেনবাবু নিজে একজন গোয়েন্দা। অন্য দিকে লালমোহনবাবু আদতে একজন লেখক, যে এক গোয়েন্দার খুব ভালো বন্ধু। ফলে গল্পে দুই চরিত্রের অবদান সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাই এ নিয়ে ক্ল্যাশ হওয়ার জায়গা নেই।