রোমিও জুলিয়েটের প্রেম কাহিনী বরাবরই মর্মান্তিক প্রেম কাহিনী বলে প্রচলিত। এবারে সেই মর্মান্তিক গল্প নিয়ে তৈরি হলো ওয়েব সিরিজের গল্প তালমার রোমিও জুলিয়েট। এর আগেও বহুবার এই গল্প অবলম্বনে সিনেমা নাটক হয়েছে। এবারে অনির্বাণ ভট্টাচার্যর প্রযোজনায় এই গল্পের নামে তৈরি হলো ওয়েব সিরিজ তালমার রোমিও জুলিয়েট।
আবারো পর্দায় এসেছে চেনা রোমিও জুলিয়েটের গল্প
১৫৯৭ থেকে ২০২৪, ইতালির ভেরোনা থেকে উত্তরবঙ্গের তালমা। রোমিও-জুলিয়েট ফিরে এল আরও একবার, এবারে বাংলায়। রানা আর জাহানারা হয়ে।
হইচইয়ে সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া ওয়েব সিরিজ তালমার রোমিও জুলিয়েট। পরিচালক অর্পণ গড়াই ও দিক নির্দেশনায় ছিলেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য। কলমে ছিলেন দুর্বার শর্মা। তবে এই সিরিজের সঙ্গে উইলিয়াম শেক্সপিয়রের কালজয়ী রচনার মিল নেই একফোঁটাও। শুধু নামের আদল ছাড়া এতে মূল গল্পের নির্যাসটুকুই আছে শুধু।
গল্পের প্রেক্ষাপট হলো, এক ছবির মতো পাহাড়ি গ্রামে দুই পরিবারের নৃশংস শত্রুতার, তুমুল হিংস্রতার গল্প। হিংসার সঙ্গে কমেডির মিশ্রণ রয়েছে। আদিবাসী গ্রামের প্রান্তিক জীবন, আধা মফস্বলী সংস্কৃতির গল্প বলা হয়েছে এই সিরিজে।
জলপাইগুড়ির এক প্রত্যন্ত গ্রাম, পাহাড়িয়া প্রকৃতি যতটাই চোখজুড়োনো, এ গল্পে ঠিক ততটাই বিদ্বেষে মোড়া দুই পরিবারের সম্পর্ক। কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের চরিত্র (বাদল মজুমদার) এবং জয়দীপ মুখার্জীর চরিত্র (লিয়াকতের) শত্রুতা গড়িয়েছে পরের প্রজন্মেও। বাদলের বড় ছেলে সোমনাথ (অনুজয় চট্টোপাধ্যায়) এবং লিয়াকতের ভাইপো মোস্তাক (অনির্বাণ ভট্টাচার্য) সেই পারিবারিক ধরা বজায় রেখে নৃশংসতা চালিয়ে যাচ্ছেন।
প্রেমে মাখা ওয়েব সিরিজ তালমার রোমিও জুলিয়েট, কতটা ভালো লাগলো দর্শকের?
এ দিকে সবসময় হানাহানি, চোখরাঙানির ফাঁক গলে জন্ম নেয় এক মিষ্টি প্রেম। তাতেই বুক ভরে শ্বাস নিতে চায় বাদলের ছোট ছেলে রানা (দেবদত্ত রাহা) আর লিয়াকতের মেয়ে জাহানারা (হিয়া রায়)। যার পরিণতি হয়ে ওঠে ভয়ানক।
পার্শ্বচরিত্রের গল্প দেখিয়ে মূল গল্পে পৌঁছতে পৌঁছতেই কেটে যায় সিরিজের প্রায় তিন-তিনটে পর্ব। অনির্বাণ আর অর্পণের জুটি বড্ড বেশি সময় নিয়েছে চরিত্রদের, তাদের প্রেম, পারিবারিক টানাপোড়েন, হিংসা-নৃশংসতা থেকে যৌনতাকে চেনাতে। পাঁচ পর্বের এই সিরিজ দেখতে বসে প্রথম দিকে তাই দর্শক ধৈর্য হারাতেই পারে। এখন আর দর্শকের ক্লাইম্যাক্স দেখার ধৈর্য থাকে না। তাই সিরিজে এই ঝুঁকিটা নিয়ে নির্মাতারা বেশ সাহসের পরিচয় দিয়েছেন।
একেকটা পর্বের দৈর্ঘ্যও সমান নয়। সেই সঙ্গে শুরুর দিকে হেলেদুলে গল্প বলার ধরন এবং শেষের দিকে দীর্ঘতম পর্বে এসে ক্লাইম্যাক্সে তাড়াহুড়ো করে শেষ করা গল্প নিয়ে কিছুটা অসন্তুষ্টি আছে দর্শকের। এ জায়গাটা আরও একটু সুতো ছড়িয়ে গল্প বললে মন্দ লাগত না।
আরও পড়ুন
তবে এ সিরিজে পাওয়ার খাতায় এক নম্বরে থাকছে সৌমিক হালদারের ক্যামেরা। যার চোখে জীবন্ত হয়ে ওঠে এক প্রত্যন্ত পাহাড়ি গ্রামের পাঁচালী। তার সবুজ প্রকৃতি, বাংলা-রাজবংশী সংস্কৃতির মিলমিশ, জঙ্গলের আলো-আঁধারিতে পুরুষালি বিক্রমের দাপট, সবটাই ধরা দেয় অনবদ্য হয়ে। শুধু যদি চড়া রঙে আবেগের ওঠাপড়াকে চিনিয়ে চেওয়ার পতি ছকটুকু না থাকত!