সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ না হলে আজ কেউ জানতেই পারতো না পুরুষ দিবস বা বাবা দিবসের কথা। এইদিক থেকে পুরুষেরা সব সময়েই একটু নগন্য অথচ কাজি নজরুল ইসলাম বলেছিলেন ‘গাহি সাম্যের গান’। পৃথিবীতে যা সমস্ত মহৎ কাজ হয়েছে তা নারী পুরুষ উভয়ের দ্বারাই হয়েছে। অথচ এই সমাজ কৃতিত্ব শুধু নারী কেই দিয়ে যায়।
এসব সময় সত্যিই সোশ্যাল মিডিয়ার উপকারিতা বোধ হয়। আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবসের কথা আজ সকলে জেনেছে। একজন মহিলার জীবনেও যে একজন পুরুষ বড়সড় ভূমিকা রাখেন তা আজ সকলে বুঝতে শিখেছে। ফেসবুকের পাতায় এইনিয়ে লেখা বিভিন্ন প্রতিবেদন পরে আজ মানুষ এই দিনের যৌক্তিকতা বোঝেন। একজন মায়ের পাশাপাশি একজন বাবার হারভাঙ্গা খাটুনির কথা মানতে শেখেন।
পুরুষ দিবস, পুরুষদের নিয়ে বস্তাপঁচা চিন্তাধারা ভাঙ্গা হোক!
বাড়িতে স্ত্রী যেমন পরিবার ধরে রাখতে বড় ভুমিকা রাখেন তেমনি স্বামীর পরিবার পরিচালনার দক্ষতাও একটি সংসারে খুবই দরকারী। গত ১৯ নভেম্বর ছিল ‘আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস’। সোশ্যাল মিডিয়ায় সকলেই তাঁদের জীবনের পুরুষদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্ট লিখেছেন বড় বড় সেলিব্রিটিরাও। তাঁদের নিজস্ব জীবনে সেই সকল পুরুষদের ভূমিকা জানিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
তবে এদিন কিছুটা ব্যতিক্রমী হলেন বলিউডের পরিচালক করণ জোহর। গোটা বিশ্ব যখন পুরুষ দিবসের সেলিব্রেশনে ব্যস্ত তখনই সোশ্যাল মিডিয়ার পাতায় কলম চালালেন করণ। বরাবরই ভিন্নধর্মী চিন্তাধারার মানুষ পরিচালক করণ জোহর। আর সিনেমা পরিচালনার ক্ষেত্রেও বরাবরই বিভিন্ন সামাজিক নিয়ম ভেঙ্গেছেন তিনি। যদিও সেসব ভাবধারা সবসময় স্বীকৃতি পায়নি সমাজের মানুষের কাছে। তবে করণও দমে যাবার পাত্র নন। ছকভাঙ্গা চিন্তাধারা নিয়েই কাজ করে চলেছেন সবসময়।
গত বছর বড়পর্দায় মুক্তি পায় করণ জোহর পরিচালিত সিনেমা ‘রকি অউর রানী কি প্রেম কাহানি’। সিনেমাতে প্রধান ভুমিকায় অভিনয় করেছেন আলিয়া ভাট ও রনবীর সিং। নায়িকার বাবার চরিত্রে অভিনয় করেছেন বাংলার অভিনেতা টোটা রায়চৌধুরী। অভিনয়ের পাশাপাশি এই চরিত্র নিজের নৃত্যশৈলী দিয়ে মুগ্ধ করেছে দর্শকদের। এই ছবিতে একজন কত্থক নৃত্যশিল্পীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন টোটা।
বিশ্ব পুরুষ দিবসঃ সকলকে সাম্যের পথে হাঁটার আহ্বান জানালেন করণ
তাঁর ছন্দে পা মিলিয়েছিলেন অভিনেতা রনবীর সিংও। ছবির একটি দৃশ্যে ডোলা রে ডোলা গানে অসাধারন নৃত্য পরিবেশন করতে দেখা যায় টোটা ও রনবীরকে। পুরুষ দিবসে আবার সেই গানের ভিডিয়োই নিজের ইন্সটাগ্রাম হ্যান্ডেলে শেয়ার করলেন করণ। যেখানে দেখা গেল টোটা ও রনবীর, ‘দেবদাস’ ছবির মাধুরী দীক্ষিত ও ঐশ্বর্য রাইয়ের ‘ডোলা রে ডোলা’ গানের সঙ্গে নাচছেন।
এই সিনেমা মুক্তির সময়েই এই নাচ মন জিতেছিল দর্শকদের। পুরুষ মানুষ হয়ে, মেয়েদের গানে নেচে নজর কেড়েছিলেন রনবীর ও টোটা। এই নাচ যেমন প্রশংসিত হয়েছিল, তেমনই সমালোচনাও পেয়েছিল। পুরুষ দিবসে সেই সমালোচনার কথাই যেন মনে করিয়ে দিলেন করণ। তিনি স্পষ্ট লিখলেন, যেদিন পুরুষরা নিজেদের অন্তরের মাধুরী ও ঐশ্বর্যকে প্রকাশ্যে আনতে পারবেন, সেদিনই আসল পুরুষ দিবস। যাঁরা ন্যায়, সাম্য ধরে রেখে নারীর আত্মার আত্মীয় হয়ে উঠতে পারেন তাঁদেরকেই এই দিনটা উৎসর্গ করলাম।
পুরুষ দিবস ভেদাভেদ ঘুচে দিক
সত্যিই তো খেলাধুলো শুধুমাত্র ছেলেদের কাজ, নাচ করা মেয়েদের কাজ। এরম বিধান তো কোনো পুরাণেই লেখা নয়। নিছকই মানুষের তৈরী করা নিয়ম এগুলো। যে নিয়মের যৌক্তিকতা একেবারেই নেই। থাকলে আজ গোপী কৃষ্ণা থেকে বিরজু মহারাজের মতো অসাধারণ নৃত্য প্রতিভার অধিকারীরা জন্মাতেন না। তাই একজন মেয়ের যদি প্রানখুলে স্বাধীনচেতা হয়ে বাঁচার অধিকার থাকে তাহলে একজন পুরুষেরও সংস্কৃতিমনা হওয়ার অধিকার আছে, সংস্কৃতি চর্চার অধিকার আছে।
আরও পড়ুন
এই কথাগুলোই যেন আরো একবার জোর গলায় বললেন করণ। স্বাধীনভাবে প্রানখুলে একজন মেয়ের বাঁচতে পারায় যেমন নারী দিবসের স্বার্থকতা তেমনি নিজের মতো করে বাঁচতে পারলেই আসবে পুরুষ দিবসের স্বার্থকতা। পুরুষ মানুষ কাঁদে না, পুরুষের মন নরম হতে নেই, পুরুষ রান্না করে না বা পুরুষ সংস্কৃতিমনা নয় এসব কথা বরং ধীরে ধীরে বাক্সবন্দি হোক।