ভারতে গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোইয়ের ছবি দেওয়া টি-শার্ট বিক্রি নিয়ে ই-কমার্স দুনিয়ায় চলছে প্রবল বিতর্ক। এই টি-শার্টগুলি ফ্লিপকার্ট ও মিশো-এর মতো জনপ্রিয় ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে বিক্রি হচ্ছে, যার কিছুতে ‘গ্যাংস্টার’ এবং ‘রিয়েল হিরো’ জাতীয় শব্দও ব্যবহৃত হয়েছে। এই টি-শার্টগুলির দাম মাত্র ১৭০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে হওয়ায় কম খরচে সহজেই তা বিভিন্ন বয়সের মানুষের মধ্যে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কিন্তু এতে যে বার্তা সমাজে পৌঁছাচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বহু মানুষ, বিশেষ করে সলমন খানের ভক্তরা।
লরেন্স বিষ্ণোই-এর নাম সম্প্রতি বেশ চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। তিনি বলিউড তারকা সলমন খানকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন এবং তাঁর বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালানোর চেষ্টাও করেছেন। অপরাধী হিসেবে তাঁর পরিচিতি থাকা সত্ত্বেও তিনি এখন একজন আলোচিত মুখ হয়ে উঠেছেন। ইন্টারনেট এবং সংবাদমাধ্যমের দৌলতে লরেন্স বিষ্ণোই-এর জনপ্রিয়তা অনেকটাই বেড়ে গেছে, এবং এই জনপ্রিয়তা এখন টি-শার্টের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে।
লরেন্স বিষ্ণোইয়ের ছবি দেওয়া টি-শার্ট বিক্রি নিয়ে সলমন ভক্তদের ক্ষোভ ….
সলমন খান ভক্তরা সোশ্যাল মিডিয়াতে এই বিষয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। একজন অপরাধীর ছবি বা নামকে প্রচারের মাধ্যমে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো কিভাবে নৈতিকতার সীমা লঙ্ঘন করছে, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তারা। অনেকে বলছেন, যখন সরকার ও পুলিশ বিভাগ যুবসমাজকে অপরাধ থেকে দূরে রাখার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, তখন একজন গ্যাংস্টারের ছবি দেওয়া টি-শার্ট বিক্রি করার ঘটনা মোটেই সঠিক বার্তা পাঠায় না। এই ধরনের পণ্য বিক্রি অপরাধী ব্যক্তিদের রোমান্টিসাইজ করে তোলে এবং তরুণ প্রজন্মের মনে অপরাধমূলক কাজের প্রতি আকর্ষণ বাড়ায়।
বিতর্কের মুখে মিশো বন্ধ করল বিক্রি, ফ্লিপকার্ট এখনও নিরব……
এমন টি-শার্ট বিক্রির নীতিগত দিক নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো বিশেষত অনলাইন বিক্রেতারা পণ্যের বিষয়বস্তু এবং তার বার্তা নিয়ে দায়িত্বশীল না হলে সমাজে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। ক্রেতাদের মতামত এবং সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে মিশো ইতোমধ্যে ওই টি-শার্টগুলো বিক্রি বন্ধ করেছে। তবে ফ্লিপকার্টের পক্ষ থেকে এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি, যা নিয়ে ক্রেতারা আরও হতাশ এবং ক্ষুব্ধ।
এটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, অতীতে অন্য দেশেও অপরাধী এবং গ্যাংস্টারদের ছবি বা নাম ব্যবহার করে পোশাক বা অন্যান্য পণ্য বিক্রি করার নজির রয়েছে। কিন্তু এমন ঘটনা সাধারণত বড় বিতর্কের সৃষ্টি করে, কারণ এটি সমাজের একটি অংশকে ভুল বার্তা দেয় এবং অনেক সময় আইনি সমস্যা তৈরি করে। বিশেষ করে ভারতে, যেখানে কিশোর-যুব সম্প্রদায়ের উপর প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, সেখানে এমন টি-শার্ট বাজারজাত করণ চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বর্তমানে এই বিতর্কটি সামাজিক মাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। অনেকেই চাইছেন, যেন ই-কমার্স সাইটগুলো অপরাধীর ছবি দেওয়া কোনো পণ্যকে অনুমোদন না দেয়। ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলোর উচিত সমাজের প্রতি তাদের দায়িত্ব ও নৈতিকতার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে এই ধরনের বিতর্কিত পণ্য থেকে দূরে থাকা।