শুরু হয়েছে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। সিনেমাপ্রেমী দর্শক থেকে শুরু করে পরিচালক ও বিভিন্ন কলা কুশলিদের দেখা মিলছে নন্দন-রবীন্দ্রসদন চত্বরে। ভালোবাসার শহরে সিনেমার প্রচারে এসেছেন পরিচালক ইমতিয়াজ আলি।
বরাবরই কলকাতা তাঁর প্রাণের কাছের শহর। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নন্দন চত্বরে সিনেমাপ্রেমীদের ভিড়। এরমাঝে ইমতিয়াজ আলি এলেন নিজের ছবি ‘মাই মেলবোর্ন’-এর প্রচারে। কলকাতায় ইমতিয়াজ কিন্তু একা আসেননি, তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরও দুই পরিচালক ওনির ও রিমা দাস। এদিন বাকিদের থেকে খানিকটা দেরি করেই ঢুকলেন ইমতিয়াজ আলি। স্ক্রিনিং শুরু হওয়ার মিনিট ১৫ আগে ঢুকলেন তিনি।
বাঙালি খাবার থেকে শুরু করে বাংলার সংস্কৃতি সবকিছুই বেশ ভালোবাসেন ইমতিয়াজ আলি!!
কলকাতায় ইমতিয়াজ আলির পরনে দেখা গেল ডেনিম সঙ্গে অলিভ রঙের জ্যাকেট। খুবই মিতভাষী তিনি। তবে কলকাতায় না থাকতে পারাকে নিজের দুর্ভাগ্য বললেন তিনি। অভিবাদন পর্ব মিটিয়ে বেশ দুঃখ করেই বললেন, ‘‘আপনারা ভাগ্যবান এই শহরে থাকেন। আমি তো থাকতে চাই, এমন সব খাবার মুম্বইয়ে মেলে না।’’ পরিচালক যে বাঙালি খাবারের বেশ ভক্ত তা ভালোই বোঝা গেল।
নন্দনে যাওয়ার আগে রাসেল স্ট্রিটে ঢুঁ মেরেছেন ইমতিয়াজ আলি। কলকাতার রাস্তার মালাই টোস্ট নাকি বড্ড পছন্দের তাঁর। ঝালমুড়ি পেলে তো কথাই নেই। আর কলকাতার বিরিয়ানি, চেলো কাবাবসহ খানকতক খাবারের নাম বলে তিনি বলেন সেসবই তাঁর বেশ পছন্দের। পরিচালককে আরও টানে কলকাতার সাহিত্য, এখানকার পুরোনো বাড়িঘর ও তার নকশা। যে কলকাতার খাবার থেকে মানুষ এতটা টানে, সেই শহরের চালচিত্র তাঁর মোটে একটি ছবিতেই ব্যবহৃত হয়েছে, সেটি ‘লভ আজ কাল’। শোনা মাত্রই বললেই, ‘‘হুম, ঠিক বলেছেন, আমি এ বার সত্যিই ভাবব। ইচ্ছে তো আছেই ফের কলকাতায় ছবি করার।’’
ইমতিয়াজের ছবিতে যেমন থাকে শহরের গল্প, তেমন থাকে জীবনের আঁকাবাঁকা গতিপথের গল্প, সঙ্গে থাকে কবি ও কবিতার প্রভাব। সে ‘রকস্টার’ হোক কিংবা ‘তামাশা’ অথবা ‘লায়লা মজনু’। পরিচালকের ছবি যে গভীর জীবনবোধের গল্প বলে যায় সেকথা বলাই বাহুল্য। আচ্ছা যে পরিচালকের সিনেমায় সংলাপে থাকে অন্তর্নিহিত কবিতা, সেই লেখক কি বাংলা কবিতা পড়েন? সে ক্ষেত্রে তাঁর পছন্দ রবি ঠাকুর।
মন খারাপ ইমতিয়াজ আলি -র
তবে কিছুটা ভারাক্রান্ত হৃদয়েই পরিচালক ইমতিয়াজ আলি বললেন, বিগত কয়েক বছর পরিচালকের উপলব্ধি, পূর্ব ভারতের সাহিত্য-শিল্প ঠিক যতটা কদর পাওয়ার কথা, তাঁরা সেই জায়গাটা পাচ্ছেন না। পূর্ব ভারতীয় শিল্পীদের পাশে থাকতে চান তিনি। বাংলা সিনেমার পাঁশে দাঁড়াতে চেয়ে সম্মতিসূচক বার্তা দিলেন পরিচালক। ইমতিয়াজ় বলেন, ‘‘আমি এখনকার কবি, চিত্রনাট্যকারদের গল্প বলব। থাকলে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করুন। সফল হবে কি ব্যর্থ, সে সব পরের বিষয়। আমি সত্যিই আগ্রহী।’’
তবে সংস্কৃতিমূখর এই রাজ্যে অর্থাৎ বাংলা ছবির অভিনেতা-অভিনেত্রী বলতে তাঁর কাছে এখনও যেন উত্তম-সুচিত্রা জুটিই দাগ কেটে যায়। তবে বাঙালি অভিনেতাদের নিয়ে চিন্তাভাবনা করবেন বলেই আশা দিয়ে গেলেন পরিচালক। ইদানিং বাংলা সিনেমা দেখা বন্ধ করে দিয়েছেন, পরিচালক। কলকাতায় এসে ইমতিয়াজ আলি জানালেন, তিনি বাংলা সিনেমার পাশে দাঁড়াতে চান।
শুধু রবীন্দ্রনাথ নয়, বিমল রায়, সত্যজিৎ রায় থেকে ঋত্বিক ঘটকের মতো পরিচালক লেখকদের অনুরাগী তিনি। কিন্তু বর্তমান প্রজন্মের বাংলা সিনেমা প্রসঙ্গে পরিচালক ইমতিয়াজ আলি বলেন, ‘‘বাংলা সিনেমাকে আরও বলিষ্ঠ হতে হবে। নিজের শিল্পের উপর মনোযোগ দিতে হবে। আমি এখন বাংলা সিনেমা দেখা বন্ধ করে দিয়েছি। হয়তো ভাল ছবি হয়, কিন্তু যে গৌরব ছিল বাংলা সিনেমার তা ফিরিয়ে আনতে হবে।’’
আরও পড়ুন
ইমতিয়াজ আলি র সিনেমা দেখলেন পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়!
যে প্রেক্ষাগৃহে তিনি বাংলা সিনেমা নিয়ে খানিক হতাশার কথা বললেন, সেই প্রেক্ষাগৃহে তখন ইমতিয়াজ় আলি, ওনিরদের ছবি ‘মাই মেলবোর্ন’ দেখার জন্য দর্শকাসনের প্রথম সারিতেই বসে রয়েছেন বাংলার জনপ্রিয় পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়। দেখা হল দুই পরিচালকের। পরস্পরকে জড়িয়ে ধরলেন তাঁরা। ইমতিয়াজ আলি জানান অন্যান্য বাংলা ছবি না দেখলেও, সৃজিতের ছবি তিনি দেখেন। ‘রাজকাহিনী’ দেখার পর থেকে তাঁর ছবির খোঁজখবর রাখেন ইমতিয়াজ।