বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোকে ব্যবসার উপযুক্ত সময় মনে করা হয়। ছোটো বড় সমস্ত ব্যবসায়ীই এসময়ের অপেক্ষা করে। একটু লাভের মুখ দেখবে বলে। বিনোদন জগতেও কিন্তু এর অন্যথা হয় না। পুজোর সময়টায় রাজ্যবাসীরা থাকেন ছুটির মেজাজে। পরিবারের সঙ্গে বা বন্ধুদের সঙ্গে ছুটির সময় পার হয় প্যান্ডেল হোপিং, খাওয়া দাওয়া, আড্ডা ও সিনেমা দেখার ভেতর দিয়ে। তাই পুজোর সময়টাই সিনেমার ব্যবসার উপযুক্ত সময় বলে মনে করেন পরিচালক।যেকোনো উৎসবের মরশুমই সিনেমা মুক্তির জন্য সুবিধাজনক বলে মনে করেন পরিচালক থেকে প্রযোজক। পুজোর মরশুমে তাই বাংলা সিনেমা মুক্তির চল অনেকদিনের। পুজোর সময় প্রচারেই ব্যস্ত থাকেন সিনেমার পরিচালক ও কলাকুশলীরা। চলতি বছরে পুজোর আবহ একটু ফিকে ছিল বটে। তবে এ বছরেও পুজোর সময় নতুন সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। যদিও পুজোর মরশুমে তা অন্যবারের তুলনায় খুবই কম। তবে যে তিনটিমাত্র বাংলা সিনেমা এই পুজোয় মুক্তি পেয়েছে তাঁদের প্রত্যেকটিই কিন্তু বেশ ভারী তারকা খচিত।গত কয়েক বছরে বাংলা সিনেমার প্রতি আগ্রহ বেড়েছে দর্শকের। পুজোতে যেহেতু বেশ ভালো মানের সিনেমা মুক্তি পায় তাই পুজোতে হলমুখী থাকেন দর্শকরাও। এ বছরের পুজোয় মুক্তিপ্রাপ্ত তিনটে ছবি হলো শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও নন্দিতা রায়ের ‘বহুরূপী’, সৃজিত মুখার্জীর ‘টেক্কা’ ও পথিকৃৎ বসুর ‘শাস্ত্রী’।
কিন্তু দর্শকের মন জিতলো কোন ছবি?
পুজোর বাজারে সৃজিতকে কি টেক্কা দিতে পারলো কেউ? প্রতিযোগিতায় এগিয়ে আছে কোন সিনেমা? তিনটি সিনেমাই মুক্তি পেয়েছে ৮ অক্টোবর অর্থাৎ পঞ্চমীতে।এই পুজোয় রাজ্যের মানুষের মন জিতলো কোন সিনেমা? বক্সঅফিসে সফল ব্যবসা করলো কোন সিনেমা? প্রতি দুর্গাপুজোতেই সিনেমার বাজারের অন্যতম আকর্ষণ থাকে পরিচালক সৃজিত মুখার্জীর নতুন কোনো আকর্ষণের ওপর। এই বছরেও তিনি হাজির হয়েছেন তার নতুন ছবি নিয়ে। সৃজিত পরিচালিত ছবি ‘টেক্কা’য় অভিনয় করেছেন বাঙালির হার্টথ্রব দেব। সাথে আছেন রুক্মিণী মৈত্র ও সবসময়ের বংক্রাশ স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। সৃজিতের পরিচালনায় দেব, রুক্মিণী ও স্বস্তিকার অভিনয় পুজোয় ভক্তদের জন্য উপরি পাওনা বটে। এবার পুজোয় মুক্তি পেয়েছে উইন্ডোজ প্রোডাকশনের শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও নন্দিতা রায়ের ‘বহুরূপী’।
গতবারের পুজোয় তাঁদের সিনেমা ‘রক্তবীজ’ বক্সঅফিসে বেশ ভালো সাফল্য পেয়েছিল। এবার দ্বিতীয়বারের মতো পুজোয় সিনেমা মুক্তি পেলো তাঁদের। ছবিতে অভিনয় করেছেন আবির চট্টোপাধ্যায়, ঋতাভরী চক্রবর্তী, কৌশানি মুখোপাধ্যায় এবং অবশ্যই শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় নিজে। তাঁর সমস্ত ছবিতেই তিনি পরিচালনা ও অভিনয় দুইই করেন। আর শিবপ্রসাদ নন্দিতা জুটির সিনেমা সবসময়ই মন জিতেছে দর্শকদের। অনবদ্য চরিত্রায়ন এবং গল্পে দর্শক সাড়া দিয়েছে বারবার।পুজোয় মুক্তিপ্রাপ্ত আরেক সিনেমা পথিকৃৎ বসুর ‘শাস্ত্রী’। সিনেমাটিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করে স্বয়ং মিঠুন চক্রবর্তী। কিছুদিন আগে অভিনয়ে ‘দাদাসাহেব ফালকে’ পুরস্কার পান তিনি। দেবারতি মুখোপাধ্যায়ের ছোট গল্প ‘দোলগোবিন্দবাবুর চশমা’ অবলম্বনে তৈরি হয়েছে এই সিনেমার গল্প। সুরিন্দর ফিল্মস ও সোহমস এন্টারটেনমেন্ট অ্যান্ড ক্রিয়েটিভ সলিউশনস এর ব্যানারে প্রযোজনা করেছেন নিসপাল সিং ও সোহম চক্রবর্তী। সিনেমায় আরও অভিনয় করেছেন অনির্বাণ চক্রবর্তী, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, রজতাভ দত্ত ও দেবশ্রী রায়।
দীর্ঘ ১৬ বছর পর ভক্তরা আবার পর্দায় দেখছেন মিঠুন দেবশ্রী জুটিকে।এবার পুজোর তিনটে ছবিই তাবড় তাবড় সব অভিনেতাদের দখলে। বাংলার জনপ্রিয় সব মুখ তিনটে ছবিতে থাকলেও বাজিমাত করলো শিবপ্রসাদ নন্দিতার ‘বহুরূপী’। জানা গেছে প্রথম তিন দিনেই সৃজিতকে ‘টেক্কা’ দিয়ে এগিয়ে গেছে ‘বহুরূপী’। দেব এন্টারটেনমেন্ট ভেঞ্চার্সের তরফ থেকে প্রথম তিনদিনে ‘টেক্কা’র ব্যবসার পরিমাণ সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টে জানানো হয়। যে ব্যবসার অঙ্ক মোটামুটি দেড় কোটি পেরিয়ে গিয়েছিল। তবে শিবপ্রসাদ নন্দিতার ‘বহুরূপী’ প্রথম তিনদিনেই কিন্তু ২ কোটির বেশি ব্যবসা করেছে বলে জানা গেছে।পুজোতে বাঙালি দর্শক বেশ ভালই সিনেমায় উৎসাহী হয়েছেন।
সংবাদমাধ্যমকে সেকথা জানিয়েছেন বিভিন্ন সিঙ্গেল স্ক্রিনের কতৃপক্ষ। তাঁরা জানান তিনটে ছবিই বেশ ভালো ব্যবসা করছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভালো রিভিউয়ের পর আগ্রহ বাড়ছে দর্শকদের। কিছু প্রেক্ষাগৃহে তো ‘বহুরূপী’ ও ‘টেক্কা’ হাউজফুল। তবে ‘শাস্ত্রী’ পুরোপুরি হাউজফুল না হলেও বাংলা সিনেমা হিসেবে বেশ ভালো সাড়া পেয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। তবে ‘বহুরূপী’ ও ‘টেক্কা’র মধ্যে ঊনিশ-বিশের তফাত রয়েছে বলে জানান তাঁরা। উৎসবের মরশুমে তিনটে ছবির এই সাফল্য বেশ লাভজনক পিভিআর ও প্রেক্ষাগৃহ মালিকদের জন্যও। তাঁরা চান বেশ কদিন যেন এই সাফল্য বজায় থাকে।এরমধ্যে ১১ অক্টোবর বলিউডের দুটি ছবি মুক্তি পেয়েছে।
আলিয়া ভাটের ‘জিগরা’ এবং রাজকুমার রাও ও তৃপ্তি দিমরির ‘ভিকি বিদ্যা কা ও ওয়ালা ভিডিয়ো’। তবে বাংলার ব্যবসায় খুব একটা লাভ জোগাতে পারেনি এর কোনোটিই। আশা করা যাচ্ছে অন্তত পুজোর রেশ যতদিন আছে ততদিন পশ্চিম বাংলায় বাংলা ছবিই বক্সঅফিস কাঁপাবে। এখনো অবধি সিনেমাগুলোর সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট ও এক জনপ্রিয় অনলাইন টিকিট বিক্রি সংস্থা অনুযায়ী মোটামুটি হাউজফুল চলছে পুজোয় মুক্তিপ্রাপ্ত তিনটে বাংলা ছবিই।
প্রতিবেদন : প্রিয়াংকা সরকার