‘বহুরূপী’ এই বছরের পুজোয় অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠেছে। শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং নন্দিতা রায় পরিচালিত এই ছবি, মুক্তির পর থেকেই দর্শকদের মধ্যে বিপুল সাড়া ফেলেছে। বিশেষ করে, এটি বাঙালি দর্শকদের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছে। ছবির গল্প, অভিনয় এবং মিউজিক অ্যালবাম—সবকিছুই প্রশংসা পেয়েছে সমালোচক এবং সাধারণ দর্শকদের কাছ থেকে।
প্রথম সপ্তাহ থেকেই হাউসফুল ‘বহুরূপী’ কী বলছেন সমালোচকরা?
শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, যিনি ছবির পরিচালক ও অভিনেতা, তিনি ছবির সাফল্যের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে জানান, এই সাফল্য সম্ভব হয়েছে কেবলমাত্র মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার কারণে। তাঁর মতে, ‘বহুরূপী’র গল্প ও তার উপস্থাপনা দর্শকদের আবেগকে স্পর্শ করতে সক্ষম হয়েছে। শিবপ্রসাদ বলেন, “সবার মুখে মুখে ছবিটির কথা ঘুরছে, সেটাই ভীষণভাবে কাজে দিয়েছে। সব বয়সের মানুষই ছবিটি দেখছেন এবং তা নিয়ে আলোচনা করছেন।” এটি প্রমাণ করে যে, সিনেমাটির প্রতি মানুষের আগ্রহ কতটা বেশি।
শুধু কলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গ নয়, এই ছবি ভারতের অন্যান্য রাজ্যেও সমানভাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এমনকি বিদেশের প্রবাসী বাঙালিদের কাছ থেকেও ‘বহুরূপী’র জন্য প্রশংসার বার্তা আসছে। শিবপ্রসাদ মনে করেন, প্রবাসী বাঙালিদের কাছ থেকে এই ভালোবাসা পাওয়া তাঁর এবং নন্দিতার জন্য বিশেষ সম্মানের। তিনি বলেন, “বাড়ি থেকে দূরে থেকেও বাংলা ছবির স্বাদ তাঁরা পাচ্ছেন, এটাই তো কোথাও গিয়ে মানুষকে তাঁর শিকড়ের সঙ্গে জুড়ে রাখে।” এই অনুভবই তাঁদের কাজের প্রতি উৎসাহ যোগায় এবং বাঙালি সংস্কৃতিকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
‘বহুরূপী’র কাহিনীতে এক বাস্তব ব্যাঙ্ক ডাকাতের গল্প তুলে ধরা হয়েছে, যেটি একজন বহুরূপীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। ছবিতে শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের পাশাপাশি আবির চট্টোপাধ্যায়, ঋতাভরী চক্রবর্তী, কৌশানী মুখোপাধ্যায়ের মতো শিল্পীদের অভিনয় দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। প্রতিটি চরিত্রের অভিনয় এবং গল্পের গভীরতা, ছবিটিকে আরও প্রভাবশালী করে তুলেছে। বহুরূপী সমাজের কিছু আড়াল থাকা দিককে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা দর্শকদের কাছে নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে এসেছে।
বহুরূপী”-র সাফল্যের পেছনে কী রহস্য? জানালেন শিবপ্রসাদ
ছবিটির বক্স অফিস সাফল্যও উল্লেখযোগ্য। মুক্তির পর থেকে ‘বহুরূপী’ খুবই ভালো ব্যবসা করছে। যদিও দীপাবলিতে বড় বাজেটের হিন্দি সিনেমা ‘সিংঘম এগেন’এবং ‘ভুল ভুলাইয়া ৩’-এর মতো ছবিগুলির মুক্তির পরিকল্পনা রয়েছে, তবে শিবপ্রসাদ এই প্রতিযোগিতা নিয়ে খুব একটা উদ্বিগ্ন নন। তিনি মনে করেন, একটি ভালো সিনেমার প্রতি দর্শকদের আগ্রহ সবসময় থাকে, এবং প্রেক্ষাগৃহগুলোও এমন ছবিগুলিকে প্রদর্শন করতে আগ্রহী থাকে যা ভালো ব্যবসা করছে। তাঁর মতে, “যে ছবি ভালো ব্যবসা দিচ্ছে, সেগুলো হল মালিকরা সরিয়ে দেয় না। তাই তাঁর ধারণা, নতুন ছবি এলেও সেটার প্রভাব বহুরূপীর ব্যবসায় পড়বে না।”
শিবপ্রসাদের এই আত্মবিশ্বাসের কারণ হতে পারে ছবিটির গল্প এবং বাঙালি দর্শকদের কাছে এর গ্রহণযোগ্যতা। তাঁর মতে, এই ছবি শুধু বিনোদন দেওয়ার জন্য নয়, বরং দর্শকদের আবেগের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করার জন্য তৈরি হয়েছে। সিনেমার মিউজিক অ্যালবামও অত্যন্ত প্রশংসিত হয়েছে, যা ছবিটির প্রতি দর্শকদের আরও আকৃষ্ট করেছে। মিউজিকের প্রতিটি গানই ছবির আবেগকে আরও জীবন্ত করে তুলেছে, যা শ্রোতাদের মনে জায়গা করে নিয়েছে।
বাঙালি সংস্কৃতির ছোঁয়া নিয়ে বিশ্বমঞ্চে ‘বহুরূপী’…
‘বহুরূপী’ কেবল একটি সিনেমা নয়, এটি বাংলা সংস্কৃতি এবং আবেগের প্রতিনিধিত্ব করে। ছবিটির সাফল্য বাঙালি চলচ্চিত্রের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হয়ে দাঁড়িয়েছে,, যা শিবপ্রসাদ ও নন্দিতার জন্য একটি বড় প্রাপ্তি। এর মাধ্যমে তাঁরা প্রমাণ করেছেন যে, বাংলা সিনেমা আজও তার সৃজনশীলতা ও সংবেদনশীলতার জন্য মানুষের মনে বিশেষ স্থান ধরে রাখতে সক্ষম।