পরনে লাল রঙের জামা – প্যান্ট। চুলে বাঁধা লাল ফিতে। মায়ের কোলে শিশুটি হাসছে । একটা মিষ্টি বাচ্চা মেয়ের হাসি মুগ্ধ করবে যে কাওকে। তবে মজার বিষয় হলো ছবিটি কোনো বাচ্চা মেয়ের নয়। তাহলে ছবিটি কার? ছবিতে আছেন বাংলার জনপ্রিয় একজন পরিচালক ও অভিনেতা। টলিউডের ভীষণ চেনা মুখ তিনি। তাঁর ছেলেবেলার ছবি এটি।সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের ছেলেবেলার এই ছবিটি পোস্ট করেছেন বাংলার জনপ্রিয় পরিচালক ও অভিনেতা তথাগত মুখোপাধ্যায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় শৈশবের এই ছবি ভালো লেগেছে সবার। ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘ভাগ্যিস মেয়ে হয়ে জন্মাইনি,’।
তবে এমন একটি কথা বলার পেছনে কারণ কি?
অভিনেতার ছেলেবেলার এই ছবিটি, সমুদ্রের ধারে তোলা। ছোটবেলার এই ছবি এক ঝলকে দেখলে যে কেউ মনে করবেন, এটি কোনও টলিউড অভিনেত্রীর ছবি। তবে আসল সত্য হলো, এই ইন্ডাস্ট্রির এক জনপ্রিয় পরিচালকের এটা ছোটবেলার ছবি। যিনি অভিনেতাও বটে। অভিনেতা তথাগত মুখোপাধ্যায় এই ছবি শেয়ার করে দীর্ঘ এক লেখা লিখেছেন। যেখানে পরিচালক জানিয়েছেন, ভাগ্যিস তিনি মেয়ে হয়ে জন্মাননি। তথাগত আরও কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য জানান তাঁর বিষয়ে। তথাগত মুখোপাধ্যায় রবিবার তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া পেজে নিজের শৈশবের ছবি শেয়ার করেন সকলের সঙ্গে। যেখানে তাঁকে তাঁর মা একেবারে মেয়ের মতো করেই সাজিয়েছেন। ছবির ক্যাপশনে তথাগত লিখেছেন, ভাগ্যিস মেয়ে হয়ে জন্মাইনি। তাঁর ছোটবেলার ছবিটা পুরীর সমুদ্রের ধারে তোলা। তাঁর মা চেয়েছিল দ্বিতীয় সন্তান যেন মেয়েই হয়, কিন্তু জন্ম হয়েছিল তাঁর , অর্থাৎ ছেলে জন্ম নেয়।ছোটবেলায় নাকি খুব লম্বা চুল ছিল তাঁর। তাই অধিকাংশ সময় তাঁর মা চুল ফিতে দিয়ে বেঁধে,এমন পোশাক পরিয়ে,টিপ পরিয়ে রাখত। যাতে খুব কম সময়ের জন্য হলেও সাধারণ লোকজন ভুল করে বলে ফেলে “ভীষন মিস্টি মেয়ে আপনার”। ব্যাপারটার প্রমাণ নাকি আরও অজস্র পুরনো ছবিতে পেয়েছেন অভিনেতা।পরিচালক-অভিনেতা আরও বলেন যে তিনি বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের ব্যাপারটা বদলে গেলেও তথাগতর মননে সেই মেয়েলি ভাবনাগুলো থেকেই গিয়েছিল। তাঁর চিন্তা-ভাবনা, কিছু আঁকড়ে ধরার প্রবণতা একেবারে মেয়েদের মতো। সেকথা পরিচালককে তাঁর দিদি, বান্ধবী, প্রেমিকা, স্ত্রী সকলেই জানিয়েছেন। এরপরই তথাগত জানিয়েছেন, যেহেতু আমি মেয়ে নই তাই যাচাই করে উঠতে পারিনি “মেয়েদের মতোন” না হলে আর হলে ঠিক কিরকমটা হয়।
তবে তথাগত আরও বলেন, ভাগ্যিস তিনি মেয়ে হননি,নইলে তাঁকে ভাবতে হোতো জয়নগরের মেয়েটা তিনি হতেই পারতো, কিংবা রাজারহাটের বা আর জি করের মেয়েটা, অথবা কামদুনি, মনিপুর, উত্তরপ্রদেশ, আসলে গোটা ভারতবর্ষের যে কোনো অঞ্চলের যে কোনো বয়সের মেয়ে।তথাগত লিখেছেন যে পুরুষ হয়ে জন্মানোর জন্য তাঁর মায়ের আজ নিশ্চিত থাকার কথা। তবে তথাগত এও জানিয়েছেন যে তাঁর মা খুশি নন। কারণ ছেলে জন্মাবার কারণে তথাগতর মা গল্প করার বন্ধু পাননি, সমব্যথী পায়নি, অল্প বয়সের কষ্টের গল্প বোঝার লোক পায়নি। জড়িয়ে ধরে কাঁদার লোক পায়নি, যন্ত্রণা বোঝার সমমনস্ক সচেতন মন পায়নি, একই দুঃখ ভাগ করার মতো মানুষ পায়নি। পরিচালক জানান, তাঁর মা শুধু পেয়েছে এই সমাজে তাঁর সন্তানের ধর্ষিত না হওয়ার নিশ্চিন্তি। আরজি কর-কাণ্ড থেকে ঝাড়গ্রামে হাতি নিধনের মতো ঘৃণ্য ঘটনার বরাবরই প্রতিবাদ করে এসেছেন পরিচালক তথাগত।
সোশ্যাল মিডিয়ায় বিস্ফোরক পোস্ট থেকে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ, সবেতেই দেখা গিয়েছে তাঁকে। পরিচালনার পাশাপাশি অভিনয়ও করছেন। বহু বছর পর এবারে তথাগতকে দেখা যাবে বাংলা ধারাবাহিকে অভিনয় করতে। সান বাংলায় কোন সে আলোর স্বপ্ন নিয়ে ধারাবাহিকে পায়েল দে-এর বিপরীতে অভিনয় করবেন তথাগত।
প্রতিবেদন : প্রিয়াংকা সরকার