দেবীপক্ষের শুরু হলেই বাঙালিরা আশায় বুক বাঁধে। মা এসে সব দুঃখ মুছে দেবেন। আরও একবার নতুন করে জীবন সাজিয়ে নেবার আশায় থাকে বাংলার প্রতিটি মানুষ। নতুন উদ্যমে শুরু হয় পথচলা। এবারে মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে নতুন জীবন শুরু করলেন বাংলার অনেক তারকাই। দেবীপক্ষের মধ্যেই নতুন জীবনের শুভ সূচনা হলো।পুজোর আবহেই গাঁটছড়া বাঁধলেন কয়েকটি টেলিতারকা জুটি।
পুরো বাংলা যখন উৎসবের সুরে মগ্ন তখনই জীবনের সানাই বাজলো এই তারকাদের জীবনে!
সমস্ত বাঙালি যখন তাঁদের প্রধান উৎসব নিয়ে ব্যস্ত ঠিক তখনই এই টলি তারকারাও মেতে উঠলেন নিজেদের জীবনের শ্রেষ্ঠ উৎসবে। গোটা শহর যখন পুজোর আবহে উৎসবের মেজাজে, তার মধ্যেই কোন তারকারা বাঁধলেন গাঁটছড়া?বিবাহ অভিযান শুরু হয় গত শুক্রবার, ৪ অক্টোবর প্রিয়াঙ্কা মিত্রর রেজিস্ট্রির মাধ্যমে। আইনি ভাবে বিয়ে সারলেন ছোট পর্দার চিনি। টেলিভিশনের বেশ পরিচিত মুখ প্রিয়াঙ্কা মিত্র। বিয়ে করলেন ছোট পর্দারই আরেক জনপ্রিয় অভিনেতা শুভ্রজিৎ সাহাকে। এর আগে জুন মাসেই এক জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমে তাঁদের প্রেম ও বিয়ের দিন জানিয়েছিলেন অভিনেত্রী। বলেছিলেন অক্টোবরেই এঙ্গেজমেন্ট ও রেজিস্ট্রি সেরে নেবেন এই তারকা জুটি। সেইমতোই আংটিবদল, রেজিস্ট্রি বিয়ে এবং আশীর্বাদ পর্ব। দুই পরিবার থেকে আয়োজন করেই সবটা হবে বলেও জানিয়েছিলেন অভিনেত্রী।
প্রিয়াঙ্কা ও শুভ্রজিতের প্রেম কাহিনী
প্রিয়াঙ্কা ও শুভ্রজিতের প্রেম কাহিনী বেশ কয়েক মাসের। সোশ্যাল মিডিয়ার দরুন প্রেমিক দম্পতির অনেক মুহূর্তের খোঁজই পেয়েছেন ভক্তরা। তবে এর আগে প্রিয়াঙ্কার সাথে প্রেমের সম্পর্কে ছিলেন ইউটিউবার ও অভিনেতা সায়ন্ত মোদক। তবে সে সম্পর্কের ইতি ঘটেছে বেশ অনেকদিন। একসময় বেশ ভালো বন্ধু ছিলেন সায়ন্ত এবং শুভ্রজিত। সেই বন্ধুত্বেরও অবসান ঘটেছে অনেকদিন। তবে প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে সম্পর্কের কারণেই বন্ধুত্বে ফাটল ধরেছে কিনা সেবিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানা যায় নি। অতীত পেছনে ফেলে জীবনটাকে এবার নতুন করে গুছিয়ে নিলেন প্রিয়াঙ্কা ও শুভ্রজিৎ।
আংটি বদলের সময় প্রিয়াঙ্কা সেজেছিলেন পাশ্চাত্য সাজে। খোলা চুলে ছিলো ছোটো ছোটো সাদা ফুল। অভিনেত্রীর পরনে ছিল পিচরঙা সিক্যুইনের গাউন। সাথে হালকা গয়না। হবু বরও কিন্তু কম যায় না। পাশ্চাত্য সাজে বেশ নজরকাড়া সেজেছিলেন তিনিও। কালো ব্লেজার আর সাদা শার্টে শুভ্রজিতও বেশ নজরবন্দি হয়েছেন ভক্তদের। প্রথমে এই সাজেই আংটিবদল সারেন তাঁরা। এরপর আসে আশীর্বাদ ও রেজিস্ট্রির পালা। এবারে কিন্তু বেশ সাবেকি সাজে এই পর্বের জন্য তৈরি হন তারকা জুটি। গোলাপি বেনারসি এবং সোনার গয়নায় চিনির মতোই মিষ্টি লাগছিলো অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কাকে। অন্যদিকে সাদা শেরওয়ানি পরে ভারতীয় সাজে অভিনেতা শুভ্রজিতও ছিলেন অনবদ্য। পুজোতে জোড়ায় প্যান্ডেল হপিংয়ে বেরিয়েছিলেন তাঁরা। বিজয়াতে লাল শাড়ি পাঞ্জাবিতে সেজেছিলেন দুজনেই। একসাথে ভক্তদের “শুভ বিজয়া” জানান সোশ্যাল মিডিয়ায়।
পুজোর আগেই সাতপাকে বাঁধা পড়লেন আরেক অভিনেত্রী রূপসা চট্টোপাধ্যায়।
ছোটপর্দার জনপ্রিয় মুখ রূপসা। একসময় মিষ্টি নায়িকার চরিত্রে আর এখন মোটামুটি খলনায়িকার চরিত্রে তাঁর অভিনয় মন জিতেছে দর্শকের। তবে রূপসার বেটার হাফ অভিনয় জগতের নন। যদিও আজকাল যুগলে ফটোশ্যুট করেন এই দম্পতি। অনেক ব্র্যান্ডের হয়েও আজকাল ক্যামেরার সামনে ধরা দিচ্ছেন সায়নদীপ সরকার। শ্রীমতির পাল্লায় পরেই এই পথে নতুন করে চলতে শুরু করেছেন তিনি। পুজোর আগেই চার হাত এক হলো রূপসা চট্টোপাধ্যায় এবং সায়নদীপ সরকারের।
আইনি মতে এক বছর আগেই বিয়ে সেরেছিলেন তাঁরা। প্রায় একবছর ধরে চলেছে এই স্বামী-স্ত্রীর প্রি ওয়েডিং শ্যুট। গঙ্গার বুকে রেজিস্ট্রি বিয়ে ও ফটোশ্যুট। এরপর ময়দান, উত্তর কলকাতার অলিগলি, ইকোপার্কসহ বাংলার আরও অনেক জায়গায় চলে তাঁদের প্রি ওয়েডিং শ্যুট। আইবুড়ো ভাত পর্বও চলেছে অনেকদিন। পুজোর আবহে সামাজিক ভাবে, পুরো হিন্দু রীতিতে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলেন তাঁরা। হই হই করে সম্পন্ন হয় বিয়ের অনুষ্ঠান। সিনেমার মতো ছিলো তাঁর মেহেন্দি থেকে হলুদের অনুষ্ঠান। অভিনেত্রীর বিয়ে বলে কথা।
এরপর গত ৩ অক্টোবর বিয়ের পিঁড়িতে বসেন অভিনেত্রী। রাজকন্যার মতো প্রবেশ করেন বিয়ের আসরে। পরনে ছিল গাঢ় খয়েরি রঙ্গা বেনারসি আর সোনার গয়না। পাত্র পড়েছিলেন ঘিয়ে রঙের ধুতি আর পাঞ্জাবি। বাঙালিয়ানায় মোড়া সাবেকি সাজে দুজনকেই লাগছিলো অনবদ্য।এরপর রবিবার, ৬ অক্টোবর ছিল দুজনের রিসিপশনের অনুষ্ঠান। সেখানে অভিনেত্রী কিন্তু পশ্চিমা সাজই সেজেছিলেন। ঘিয়ে রঙের ঝলমলে গাউনের সঙ্গে গলাভর্তি সোনার অলঙ্কারে সেজে উঠেছিলেন রূপসা। একই রঙের শেরওয়ানিতে নজর কেড়েছিলেন বর সায়নদীপও। বিয়ের পরই দুর্গোৎসবে মেতে ওঠেন রূপসা। বাঙালি বউয়ের মতো দুর্গাপুজোয় সাজেন তিনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভক্তদের জন্য ছবিও দিয়েছেন। বিজয়াতে বেশ রং মিলিয়ে শাড়ি পাঞ্জাবিতে সেজেছিলেন দুজনে। সেই মুহূর্তের তাঁদের সেই ভিডিও মন জিতেছে ভক্তদের।
এর পরে তালিকায় আছে টেলিভিশন জগতের আরেক জনপ্রিয় অভিনেত্রী স্বীকৃতি মজুমদার
ধারাবাহিকের বাইরে সমাজমাধ্যম ও ওটিটিতেও কিন্তু এই অভিনেত্রী বেশ জনপ্রিয়। মেয়েবেলা ধারাবাহিকে মৌ’এর চরিত্রের পর বাংলার বর্তমান ক্রাশের খেতাব পেয়েছেন এই অভিনেত্রী। তবে ডোডো দা নয়, মৌ বিয়ে করলেন অবাঙালি রাহুলকে।যদিও বিয়েটা গোপনেই সেরেছেন অভিনেত্রী। এখনও তাঁর সোশ্যাল মিডিয়ায় বিয়ের কোনো ছবি দেখা যায় নি। অবাঙালি মতে বিয়ে হল ‘খেলাঘর’ ধারাবাহিকের ‘পূর্ণা’র।
তবে পাত্র কিন্তু টেলিভিশন জগতের কেউ নয়। অভিনেত্রীর স্বামীর নাম রাহুল। তবে নিজের খুশির মুহূর্তে এতো গোপনীয়তা কেন সেটা এখনও জানা যায় নি।বিয়ের দিন অভিনেত্রীর পরনে ছিলো সাদা শাড়ি, সঙ্গে ভারী গয়না। অবাঙালি বিয়ের সাজেই সেজেছিলেন স্বীকৃতি। তাঁদের বিয়ের সাজ ও ছবির কিন্তু অনেকটাই মিল রয়েছে বলিউড অভিনেত্রী কিয়ারা আডভানি ও অভিনেতা সিদ্ধার্থ মালহোত্রার বিয়ের সাজের সঙ্গে।তবে বাঙালির বিয়ের মুকুট ও গাছকৌটো ছিল তাঁর হাতে। অভিনেত্রীর স্বামীও মিল করে একই রঙের শেরওয়ানিতে সাজেন। প্রীতিভোজের দিন অবশ্য ফিউশন পোশাকে দেখা গেল দুজনকেই।
প্রতিবেদন: প্রিয়াংকা সরকার
