শান ও অরিজিৎ সিং-এর সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে উঠে এসেছে বলিউড সংগীত জগতের কিছু অজানা গল্প। শানের সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে ২০১৭-১৮ সালের একটি ঘটনার উল্লেখ করেন, যা সংগীতপ্রেমীদের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। শান সেই সময়ের কথা মনে করে বলেন যে, একটি অ্যাওয়ার্ড সেরেমনিতে অংশগ্রহণ করতে গিয়েছিলেন, যেখানে তিনি দেখেন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঘিরে দর্শকদের প্রচুর উচ্ছ্বাস। শান তখনও অরিজিৎ সিং-এর ব্যাপারে ভালোভাবে জানতেন না এবং তাই এমন কৌতূহল প্রকাশ করেন। তিনি এক পরিচিতজনের কাছে জানতে চান, “ছেলেটা কে?” শানের এই প্রশ্ন শুনে সেই পরিচিতজন অবাক হয়েছিলেন। কারণ, অরিজিৎ তখন বলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় গায়ক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। শান পরে বুঝতে পারেন, অরিজিৎ-ই সেই গায়ক, যিনি ‘তুমি হি হো’ গেয়ে রাতারাতি বলিউডে পরিচিতি লাভ করেছিলেন।
অ্যাওয়ার্ড সেরেমানিতে উভয় শিল্পীকে একই পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়েছিল। কিন্তু শানকে অবাক করে দিয়ে, অরিজিৎ নিজেই এসে শানের কাছে সেলফির অনুরোধ করেন। শান তখন ভাবছিলেন, অরিজিৎ-এর মতো জনপ্রিয় গায়কের সঙ্গে হয়তো তাকেই ছবি তুলতে যেতে হবে। কিন্তু অরিজিৎ-এর এই বিনয়ী আচরণে তিনি মুগ্ধ হন। শান বলেন, এই ঘটনার মাধ্যমেই বুঝতে পেরেছিলেন যে অরিজিৎ কতটা মাটির মানুষ এবং বিনম্র। অরিজিৎ-এর মতো একজন শিল্পী, যিনি তখন বলিউডে শীর্ষে ছিলেন, তবুও নিজের শিকড়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
অরিজিৎ সিং-এর সম্পর্কে শান আরও জানান যে, তিনি বরাবরই নিজের ব্যক্তিগত জীবনকে মিডিয়ার আলো থেকে দূরে রাখতে পছন্দ করেন। তাঁর জীবনের অনেকটাই ব্যক্তিগত এবং সাদামাটা। অরিজিৎ এর এই বৈশিষ্ট্য তাঁর ভক্তদের মধ্যে একটি বিশেষ অনুভূতি সৃষ্টি করেছে। মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জে জন্মানো এই বাঙালি গায়ক নিজের শিকড়ের প্রতি অত্যন্ত নিবেদিত। যদিও তিনি বলিউডে নিজের একচেটিয়া আধিপত্য তৈরি করেছেন, তবু অরিজিৎ নিজের মূল পরিচয়ের প্রতি বিশ্বাসী।
শান বলেন, অরিজিৎ তার কর্মজীবনে এক নতুন মান তৈরি করেছেন এবং বলিউড সংগীত ইন্ডাস্ট্রিতে তার অবদান অমূল্য। তাঁর মতে, বর্তমান সময়ে সংগীতের জগতে অনেকেই র্যাপার বা ব্যান্ডের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা অর্জন করছেন, যেখানে অরিজিৎ হলেন শেষ মানুষ, যিনি মূলত ফিল্ম মিউজিক থেকেই তারকা খ্যাতি পেয়েছেন। শানের মতে, আজকাল অধিকাংশ নতুন শিল্পী অ্যালবাম বা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম থেকে খ্যাতি অর্জন করে থাকেন। কিন্তু অরিজিৎ-এর ক্ষেত্রে, তাঁর চলচ্চিত্রের গানই তাঁকে সাফল্য এনে দিয়েছে।
অরিজিৎ-এর সাফল্যের গল্প শুধু তাঁর কণ্ঠের জাদুর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, তাঁর ব্যক্তিত্বেও রয়েছে। তিনি সিনিয়রদের প্রতি সবসময় সম্মান দেখিয়ে এসেছেন এবং অন্য শিল্পীদের অবদানকেও গুরুত্ব দিয়েছেন। শান বলেন, অরিজিৎ যে পরিমাণ বিনম্র এবং বন্ধুসুলভ, তা তাঁর জনপ্রিয়তার পিছনে একটি বড় কারণ। একজন সুপারস্টার হয়েও তিনি কখনো নিজেকে বড় কিছু ভাবেননি, বরং নিজের কাজের প্রতি সৎ থেকেছেন এবং নিজের যোগ্যতা দিয়ে একটি আলাদা পরিচিতি গড়ে তুলেছেন।
শান ও অরিজিৎ-এর এই কাহিনি প্রমাণ করে যে, সাফল্য এবং জনপ্রিয়তার সঙ্গে মানবিকতা এবং বিনম্রতা কতটা জরুরি। অরিজিৎ-এর মতো শিল্পীর কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়া যায় যে, আসল সাফল্য মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নেওয়াতে এবং মাটির কাছাকাছি থাকা সত্ত্বেও শীর্ষে উঠতে। শানের বক্তব্যে প্রকাশ পায় যে, অরিজিৎ-এর মধ্যে এই দুটি দিকই সমানভাবে রয়েছে, যা তাঁকে আরও বিশেষ করে তুলেছে।