২০২৪-এর পুজো মরসুমে মুক্তি পেয়েছে বেশ কিছু ছবি, তাদের মধ্যে বক্স অফিসে সবথেকে বেশি সাফল্য পেয়েছে ‘বহুরুপী’ সিনেমাটি। শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং নন্দিতা রায়ের যৌথ পরিচালনায় নির্মিত এই ছবিটি দর্শকদের মন জয় করেছে । শিবপ্রসাদের অভিনয় তার পুরো ক্যারিয়ারে বিশেষ প্রশংসিত হয়েছে এবং অনেকেই বলছেন, এটি তার সেরা পারফরম্যান্স।
শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ইন্ডাস্ট্রিতে প্রথমে অভিনেতা হিসেবে তার পথচলা শুরু করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি পরিচালক হিসেবে নিজের পরিচিতি গড়ে তুললেও, তার অভিনয়ের প্রতিভা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আড়ালে থেকেই গিয়েছিল। ‘বহুরূপী’ সিনেমায়, তিনি একজন বহুমুখী চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যা দর্শকদের জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা হিসেবে এসেছে। তার চরিত্রের মধ্যে থাকা পরিবর্তনশীলতার সঙ্গে ছবির গল্পও দর্শকদের আকর্ষণ করে রেখেছে।
এই ছবির সফলতার আরেকটি দিক হলো তার বাণিজ্যিক ভাবনা এবং বিনোদনের অনুপ্রবেশ। অপরাজিতা আঢ্য, শিবপ্রসাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং তার সহঅভিনেত্রী, এক খোলা চিঠিতে শিবপ্রসাদের কাজের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, ‘বহুরূপী’ একটি কমার্শিয়াল ছবি, যেখানে শিবপ্রসাদের অভিনয় নিখুঁতভাবে ফুটে উঠেছে। অপরাজিতা তার চিঠিতে উল্লেখ করেছেন যে, শিবপ্রসাদের অভিনয়ের সমস্ত দিক—লুক, শরীরী ভাষা, এবং সংলাপ বলার ধরন—সবকিছুই অত্যন্ত প্রভাবশালী। তাঁর মতে, শিবপ্রসাদ তাঁর নিজের চরিত্রের মাধ্যমে ছবির নাম “বহুরূপী”কে সত্যিকার অর্থে জীবন্ত করে তুলেছেন।
শুধু অপরাজিতাই নন, টলিউডের আরো অনেক তারকাও শিবপ্রসাদের অভিনয়ের প্রশংসা করেছেন। বিশেষ স্ক্রিনিংয়ে উপস্থিত ছিলেন শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায় এবং শ্রাবন্তী চ্যাটার্জির মতো অভিনেত্রীরা, যারা এই ছবির অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। শুভশ্রী বলেন, “গল্পটা খুব সুন্দর, স্ক্রিনপ্লে অনবদ্য। আর অভিনয়? সকলে দুর্দান্ত। শিবুদাকে আমি বলব, এই ধরনের আরো ছবি দেখতে চাই।” তার মন্তব্যে স্পষ্ট যে, শিবপ্রসাদ এবং নন্দিতার যৌথ পরিচালনার এই কাজ টলিউডে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। শ্রাবন্তীও শিবপ্রসাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন। তিনি বলেন, “শিবুদা একাই একশো। এই ছবির ট্রেলার প্রথম দেখার পর থেকেই আমি বলেছিলাম, পুজোর সেরা ছবি হতে চলেছে ‘বহুরূপী’।”
ছবির কাহিনী, সংলাপ এবং চরিত্রায়ণ ছাড়াও এই সিনেমার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের প্রযোজনা সংস্থা উইন্ডোজ প্রোডাকশনের দক্ষতা। উইন্ডোজ প্রোডাকশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, ‘বহুরূপী’ সিনেমাটি মুক্তির প্রথম ১০ দিনেই ১০ কোটির বেশি আয় করে ফেলেছে এবং ১২ কোটির দিকে এগোচ্ছে। এটি উইন্ডোজের অন্যতম সফল ছবিগুলির মধ্যে একটি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দর্শকদের প্রতিক্রিয়া, প্রচার এবং ছবির বিপণন কৌশল সব মিলিয়ে “বহুরূপী” বক্স অফিসে ঝড় তুলেছে।
এই ছবির গল্প এবং শিবপ্রসাদের অভিনয়ের বিশেষত্ব দর্শকদের আকৃষ্ট করেছে। “বহুরূপী” ছবির প্রধান সংলাপ “এরম তাকাস না, বিয়ে দিয়ে দেব, কেন্দে মরে যাবি” ইতোমধ্যেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। দর্শকদের মনে এই সংলাপটি দাগ কেটেছে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় এটি নিয়ে প্রচুর আলোচনা হয়েছে। সিনেমাটির সংলাপ ও চরিত্রের এই ধরনের শক্তিশালী উপস্থিতি ছবিটিকে দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনায় রাখতে সহায়তা করেছে।
শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং নন্দিতা রায় একত্রে টলিউডে যে ধরণের সামাজিক সচেতনতা সমৃদ্ধ ছবি উপহার দিয়েছেন, সেগুলি বরাবরই দর্শকদের মধ্যে একটি বিশেষ স্থান করে নিয়েছে। তবে, ‘বহুরূপী’ একটু ভিন্ন। এটি একদিকে সামাজিক বার্তা বহন করে, অন্যদিকে বাণিজ্যিক দিক থেকেও সফল। এরকম একটি ছবির মাধ্যমে তারা প্রমাণ করেছেন যে, বিনোদনমূলক এবং বাণিজ্যিকভাবে সফল ছবি নির্মাণের ক্ষেত্রেও তাদের দক্ষতা রয়েছে।
এই সাফল্যের মধ্য দিয়ে শিবপ্রসাদ আবার প্রমাণ করেছেন যে, তিনি শুধু একজন সফল পরিচালকই নন, বরং একজন দক্ষ অভিনেতাও। তার অভিনয়ের প্রশংসা করে অনেকেই বলছেন, “বহুরূপী” ছবির মাধ্যমে টলিউড এক নতুন শিবপ্রসাদকে পেয়েছে। এই ছবিটি তার কেরিয়ারে একটি বিশেষ মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সব মিলিয়ে, ‘বহুরূপী’ সিনেমাটি শুধুমাত্র শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং নন্দিতা রায়ের জন্যই নয়, বরং পুরো টলিউড ইন্ডাস্ট্রির জন্যও একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এটি একটি প্রমাণ যে, ভালো গল্প এবং অভিনয় সবসময় দর্শকদের মন জয় করতে সক্ষম। শিবপ্রসাদের অভিনয়ের নতুন রূপ দেখে দর্শক এবং সহ-অভিনেত্রীদের উচ্ছ্বাস এই ছবির সাফল্যের অন্যতম প্রধান কারণ। ‘বহুরূপী’ এখন শুধুই একটি সিনেমা নয়, বরং শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের অভিনেতা পরিচয়ের পুনরুজ্জীবনের সাক্ষী।