আরজিকর কাণ্ডে প্রথম থেকেই সোচ্চার অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী। পাশে থেকেছেন দিদি বিদীপ্তা চক্রবর্তী ও স্বামী বিরসা দাশগুপ্ত। প্রতিকী অনশনেও যোগ দিয়েছিলেন তাঁরা। বরাবরই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন তাঁরা সকলেই। আরজিকর আন্দোলনে বেশ সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিয়েছেন সুদীপ্তা। সংবাদ মাধ্যমের সামনে বলেছেন চাঁচাছোলা প্রচুর সত্যি কথা। কারো অপমানের জবাব কি করে দিতে হয় তা বেশ ভালো মতোই জানা আছে সুদীপ্তার।
কি বলা হয়েছিল সুদীপ্তাকে?
এবারে ভাইরাল হলো তাঁর প্রায় দু’বছর আগের একটি পোস্টের মন্তব্য। যেখানে একজন নেটিজেন তাঁকে কটাক্ষ করে মন্তব্য করেছেন। তবে সুদীপ্তাও ছেড়ে দেবার পাত্রী নন। ভদ্রভাবে বেশ কড়া জবাব দিয়েছেন সে নেটিজেনকে। সেই মন্তব্যের স্ক্রিনশটই এবার ভাইরাল হলো। এরআগে কালার্স বাংলায় একটি রান্নার শো সঞ্চালনা করতেন সুদীপ্তা চক্রবর্তী। শোয়ের প্রথম পর্ব সম্প্রচারিত হওয়ার পর তিনি সেই শো নিয়ে তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া পেজে একটি পোস্ট করেন। সেই পোস্টেই তাঁকে বেশ খোঁচা মেরে মন্তব্য করেন এক ব্যক্তি। মন্তব্যে বলেছেন, সুদীপ্তা নাকি নিজের জন্য ঠিক কাজই পেয়েছে। বাড়িওয়ালি ছবিতে যেহেতু তিনি রান্নার কাজ করতেন সেখান থেকেই তাঁর রান্নার হাতেখড়ি বলে মন্তব্য করেন এই ব্যক্তি।
কি উত্তর দিলেন সুদীপ্তা?
সুদীপ্তাও ছেড়ে দেবার পাত্রী নন। মন্তব্যের উত্তর বেশ গুছিয়েই লিখলেন তিনি। বাড়িওয়ালি ছবিতে তিনি যে রান্নার কাজ করেননি বরং সেই চরিত্রে অভিনয় করেছেন সেই কথাই লিখলেন তিনি। এমনকি সেই চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন সেকথাও জানাতে ভোলেননি তিনি। স্বয়ং রাষ্ট্রপতি তার হাতে পুরস্কার তুলে দিয়েছিলেন। তিনি জানান তাঁর অভিনয়ের হাতেখড়ি অনেক আগে।তবে সেই শো’তে তিনি রান্না করছেন না বরং সঞ্চালনা করছেন সেকথাও বলেন নিজেই। আরও বলেন রান্না করা বেশ কঠিন একটি কাজ। এই কাজটিকে যাঁরা ছোটো করে দেখে তাঁরা যে নেহাতই অশিক্ষিত সেটাও বলেন তিনি। সেই ব্যক্তি নিজে রান্না জানলে যে রান্নার কাজটাকে এতো ছোটো করে দেখতে পারতেন না এবং রান্নাকে সম্মানের চোখে দেখতেন সেকথাও জানান তিনি। সুদীপ্তা সেই ব্যক্তিকে উপদেশ দেন যাদের জন্য সে দুবেলা খেতে পায় তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে। উল্লেখ্য নেটিজেনকে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠার পরামর্শও দেন সুদীপ্তা।প্রতিবাদের এই মরশুমে সুদীপ্তাকে সমর্থন করেছেন অনেকেই। তাঁর প্রতিবাদী মনোভাব এবং স্পষ্টবাদিতাকে ভালোবাসেন অনুরাগীরা। এক ভক্ত সুদীপ্তার এই মন্তব্যের স্ক্রিনশট শেয়ার করে বলেছেন, ‘চড় মারতে সবসময় যে গায়ের জোর লাগে তা নয়, কিছু ক্ষেত্রে চড় মারার জন্য শিক্ষাই যথেষ্ট।’ সেই ভক্তর পোস্টে আবার আরেকজন মন্তব্য করেছেন, লোকের হাতে স্মার্টফোন আর নেট চলে এসে তাঁরা লঘু গুরু জ্ঞান হারিয়েছেন। নিজেদের দিকে না তাকিয়েই অবলীলায় শিল্পীদের ছোটো করতে তাঁদের বাঁধে না।
আরজিকর কান্ড ঘিরেই এর আগে অভিনেতা কাঞ্চন মল্লিককেও বেশ ধুয়ে দিয়েছিলেন তিনি। তৃণমূল বিধায়ক কাঞ্চন বলেছিলেন,
শাসকদলের বিরুদ্ধে যারা তাঁরা সরকারী বেতন কেন নিচ্ছে? তারকারাই কেন গ্রহণ করছে সরকারী পুরস্কার?
কাঞ্চন মল্লিকের এই মন্তব্যে বেশ ভালো বিতর্ক শুরু হয়েছিল সে সময়। কাঞ্চনকে উদ্দ্যেশ্য করে সেসময় সুদীপ্তা বলেছিলেন তাঁর সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখা আর সম্ভব নয়। তাঁর অতি দ্রুত মানসিক আরোগ্যও কামনা করেছিলো সুদীপ্তা। শুধু কাঞ্চনকে ত্যাগ করেই থেমে থাকেননি তিনি। জাতীয় পুরস্কার ফেরত দেবার সিদ্ধান্তও নিয়েছিলেন অভিনেত্রী। আবার যৌন হেনস্তার বিরুদ্ধেও গর্জে ওঠেন অভিনেত্রী। বেশ কয়েক বছর আগে গোটা দেশে সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয়েছিল ‘হ্যাশট্যাগ মিটু’ আন্দোলন। যৌন হেনস্থার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে তারকারা সরব হয়েছিলেন। কয়েকদিন আগে ফের ‘মিটু’ নিয়ে সরব হয়েছিলেন টলিপাড়ার একাধিক শিল্পীরা। সেই সময়ই এক মর্মান্তিক ঘটনা সামনে এনেছিলেন সুদীপ্তা।
সুদীপ্তার হাত ধরেই ইন্ড্রাস্ট্রিতে আসা এক কেশসজ্জা শিল্পী গায়ে আগুন দিয়ে আত্নহত্যার চেষ্টা করেন। বাড়িতে ছিল তাঁর অসুস্থ স্বামী। দেনায় জর্জরিত হয়ে এ পথ অবলম্বন করেছিলেন তিনি। একটি অডিও রেকর্ড তিনি সকলকে পাঠান, যেটিতে বলেছিলেন তিনি তিন মাসের জন্য সাসপেন্ডেড ছিলেন। তবে তাঁর কারণ অজানা। তবে তিন মাস পর নতুন কাজের কথা হলেও সে বাঁধাপ্রাপ্ত হন। কেশসজ্জা বিভাগের সভাপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছিলেন তিনি। সুদীপ্তা বলেন তিনি এর শেষ দেখে ছাড়বেন। নাহলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবেন না বলেও জানান তিনি। বরাবরই নিজের প্রতিবাদী মনোভাব ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোষ না করার জন্য ভক্তরা ভালোবাসে তাঁকে।
প্রতিবেদন : প্রিয়াংকা সরকার