জন্মবার্ষিকী হোক আর বিবাহবার্ষিকী, সন্তানের জীবনে মায়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাই নিজেদের জীবনের যেকোনো বিশেষ দিনে মাকে মনে করেন সন্তানরা। সদ্য মা হারা হয়েছেন অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। বিবাহবার্ষিকীর প্রাকলগ্নে তাই মা কে মনে করলেন অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। জনপ্রিয় এক সংবাদমাধ্যমের কাছে মাকে নিয়ে অজানা সব গল্প করলেন অভিনেত্রী।
অভিনেত্রী ঋতুপর্না সেনগুপ্ত জীবনের ২৫ টি বসন্ত পার করলেন স্বামী সঞ্জয় চক্রবর্তীর সঙ্গে। অভিনেত্রী বলেন, নায়িকা জীবন কিন্তু খুব কঠিন। সেই জীবনের সঙ্গে অন্য পেশার কোনও মানুষের জীবন মেলানো আরও কঠিন। কোনও ভাবে দুটো জীবন মিলে গেলে তার থেকে ভাল আর কিছুই হতে পারে না। ২৫ বছর সঞ্জয় চক্রবর্তী, অর্থাৎ ঋতুর স্বামীর সঙ্গে এক ছাদের নীচে কাটানোর পর নিজেদের দাম্পত্য নিয়ে এটাই ঋতুপর্ণার উপলব্ধি।
কিভাবে এসেছিল অভিনেত্রী ঋতুপর্ণার বিয়ের প্রস্তাব?
সঞ্জয়ের সঙ্গে নিজের মেয়েবেলা থেকেই পরিচিত ঋতুপর্ণা। যখন তিনি সপ্তম শ্রেণিতে পড়েন, সঞ্জয় তখন ছিলেন ক্লাস টেনে। তখন থেকেই তাঁদের একে অপরের বাড়িতে যাওয়াআসা। তাঁর স্বামী নাকি বরাবরের গুরুগম্ভীর মানুষ, পড়াশোনায় ভাল ছিলেন, পরে বিদেশে চলে গিয়েছিলেন পড়ালেখার দরুন। অভিনেত্রীর বাবার একটাই চাওয়া, ছেলেকে শিক্ষিত হতে হবে। অন্যদিকে মায়ের দাবি ছিল, সেই সঙ্গে ভাল পরিবারেরও হওয়া যাই।
সঞ্জয়বাবু যখন অভিনেত্রীর বাড়িতে এসে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, ঋতুপর্ণার মা-বাবা আর দ্বিতীয় বার ভাবেনি। যে দিন সঞ্জয় ঋতুপর্ণার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলেন সে দিন নাকি আমি বাড়িতেই ছিলেন না ঋতুপর্ণা। শুটিংয়ে ব্যস্ত সময় পার করছিলেন তিনি। এই জায়গা থেকেই অভিনেত্রী বলেন, নায়িকার সঙ্গে ঘর কথা খুব সহজ কথা নয়। সঞ্জয়ও কিন্তু নিজের কাজে প্রচণ্ড ব্যস্ত থাকেন। সেকথা নিজেই স্বীকার করেছেন অভিনেত্রী। তবু সে একা হাতে নিজের বাড়ি, আবার তাঁর শ্বশুরবাড়ি সামলে গিয়েছে।
তা হলে কি কিছুই মনোমালিন্য হয়নি এই দম্পতির? কথা কাটাকাটিও হয়নি? অবশ্যই হয়েছে। অভিনেত্রী বলেন রাগে-অভিমানে তাঁরাও সাময়িক সময়ের জন্য বিপরীত মেরুর বাসিন্দা হয়েছেন। আবার সব মিটেও গিয়েছে। তবে অভিনেত্রীর মায়ের সঙ্গে নাকি সঞ্জয়ের বেশ ভাল সম্পর্ক ছিল। তিনি ঋতুপর্ণার মাকে খুব মান্য করেন। আবার বন্ধুর মতো ভালোবাসেন। সেজন্যই বিবাহবার্ষিকীর দিনে, তাঁদের খুব মনখারাপ।
মা নেই বলে, ২৫ বছরের বিবাহবার্ষিকীতে কোনও উদযাপন নেই। কলকাতাতেই আছেন দুজনে। নিজেদের কাছের কয়েক জন বলেছেন, দেখা করতে আসবেন, ব্যস, ওই পর্যন্তই তাঁদের উদযাপন। অভিনেত্রীর মা চোখে হারাত সঞ্জয়কে। দম্পতির যখনই ঝগড়া হয়েছে অভিনেত্রীর মা-বাবা দু’জনেই নাকি সঞ্জয়ের পক্ষে থাকতেন। উল্টে নিজেদের মেয়েকে ধমকে বলতেন, “সঞ্জয় ভুল হতেই পারে না। শিক্ষিত, তোর থেকে বয়সে বড়। অভিজ্ঞতাও বেশি। ওর কথা শুনে চলবি। একদম ওর বিরুদ্ধে কিছু বলতে আসবি না।” স্বামীর বিরুদ্ধেও অভিযোগ তোলেন ঋতুপর্ণা। তিনিও নাকি রাগারাগি হলেই শ্বাশুড়িমাকে সালিশি জানাতেন।
জামাইষষ্ঠীতে জামাইয়ের জন্য এলাহী আয়োজন শ্বাশুড়িমায়ের
জামাইষষ্ঠীতে নিজে হাতে রেঁধেবেড়ে জামাইকে খাওয়াতে খুব ভালবাসতেন ঋতুপর্ণার মা। জামাই সঞ্জয় ফিশফ্রাই খেতে ভালবাসে। কলকাতায় থাকলে নিজের হাতে ফ্রাই বেঁধে, ভেজে খাওয়াত। আবার তাঁরা সিঙ্গাপুরে থাকতেও নাকি তিনি ফ্রোজেন ফিশফ্রাই বাক্সে ভরে পাঠিয়ে দিত। ঋতুপর্ণা যেন ভেজে জামাইকে খাওয়ান। সঞ্জয় আমেরিকায় অনেকটা সময় কাটিয়েছেন। খাওয়াদাওয়া সে দেশের মতো হয়ে গিয়েছে। এ দিকে শ্বাশুড়িমা তো জামাইয়ের জন্য রকমারি রান্না করতেন। সঞ্জয়ের খাওয়ার অভ্যাস বদলে গিয়েছে জেনে আবার নিজে পাতলা করে স্ট্যু রেঁধে দিয়েছে। শুরুতে তাই জামাই শাশুড়িকে প্রায়ই অনুরোধ জানাত, “যেন আসামীকে শাস্তি দেওয়া! এত খাবার খাওয়া যায়? আমি এত খেতে পারি না।”
খুঁটিনাটি আরও অনেক কথাই মা ও জীবনসঙ্গীকে নিয়ে বললেন অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। শ্বাশুড়ি মায়ের মন খারাপ হলে জামাই সঞ্জয় কেমন তাঁকে নিয়ে ঘুরতে যেতেন সেকথা জানালেন। টুকটাক শরীর খারাপ হলেও অভিনেত্রীর মাকে ডাক্তার খানায় নিয়ে যেতেন তাঁর জামাই। তাঁর মা ওপর থেকে দেখে খুশি হবেন তাঁর মেয়ে জামাই একে অপরের হাতে হাত রেখে মন খুলে বাঁচছে এই বলে ঋতুপর্ণা তাঁর কথা শেষ করেন।