দূর্গা পুজো যদি কলকাতার হয়, তো জগদ্ধাত্রী পুজো চন্দননগরের। তাই পুজোর সময় শহরে না থাকলে শহরকে মিস করেন সেখানকার নিবাসীরা। ছোটবেলার কথা মনে পড়লে বয়ে যায় মন খারাপের সুর। ছেলেবেলার পুজোর দিনগুলো নিয়ে লিখলেন অভিনেতা সুদীপ সরকার। ছোটপর্দার জনপ্রিয় এই খলনায়কের ছেলেবেলার কাটানো জগদ্ধাত্রী পুজোর দিনগুলো মনে পড়ে তাঁর।
কর্মসূত্রে কলকাতায় এসে পসার জমালেও আজও নাড়ির টান কিন্তু চুঁচুড়াকে ঘিরেই। আগে সেখানেই তাঁর বাড়ি ছিল। পরে বাবার অবসর এবং তাঁর কলেজে ভর্তি হওয়ার পর তাঁদের ঠিকানা বদলে হয়ে যায় উত্তর চন্দননগরের একদম সীমান্তবর্তী এলাকা। অর্থাৎ চুঁচুড়া এবং চন্দননগরের মাঝামাঝি সীমানাঘেঁষাই।
জীবন থেকে হারিয়ে গেছে জগদ্ধাত্রী পুজো
সুদীপের কলকাতায় চলে আসা বহু আগেই। ২০১৬ সালে তাঁর মা-বাবাও চলে আসেন কলকাতায়। চন্দননগরের বাড়িটাও আর নেই তাঁদের। জগদ্ধাত্রী পুজোর স্মৃতি তত দিনই রঙিন ছিল যত দিন তিনি চুঁচুড়াতে ছিলেন। কলকাতায় আসার পর আলাদাভাবে উদযাপন করা হয়ে ওঠেনি, বহুদিন হয়ে গেল। লেখার জন্য সেই স্মৃতিটুকুই তাঁর সম্বল।
অভিনেতা লেখেন চুঁচুড়া-চন্দননগরে তাঁর জগদ্ধাত্রী পুজোটা কাটত খুব মজা করে। কলেজের বন্ধুদের সঙ্গে একসঙ্গে ঠাকুর দেখতে বেরোনো, আড্ডা দেওয়া প্রতিটা মুহূর্তই ছিল দারুণ। পুজোর কয়েকটা দিন চন্দননগরের সাজসজ্জা নিয়ে আর বেশিকিছু লেখেননি তিনি। সেখানে জগদ্ধাত্রী মায়ের ভাসানের সময় গোটা জিটি রোড বন্ধ করে রেখে শোভাযাত্রা চলত। যদিও এখনও তা হয়। সেই সময়ে তাঁরাও ওই শোভাযাত্রার সঙ্গে সঙ্গেই পা মেলাতেন এবং একদম চলে যেতেন গঙ্গার ধার পর্যন্ত। সঙ্গে চেনা-অচেনা, সকলের সঙ্গেই জমিয়ে নাচ-গানও হতো। অভিনেতার জীবনে সে এক আলাদাই আনন্দ ছিলো।
উঠতি বয়সে লুকিয়ে লুকিয়ে ধূমপানও করেছেন ভিড়ের মধ্যেই। প্রেমের রং তখনও তাঁর জীবনে লাগেনি। বন্ধুরাই ছিল তাঁর সর্বক্ষণের সঙ্গী। এমনিতেও প্রেমিকাকে নিয়ে জগদ্ধাত্রী পুজোর ভিড়ে মিশে যাওয়াটা একটু আতঙ্কের ছিল বৈকি, পাছে যদি কেউ চিনে ফেলে। অভিনেতা লেখেন তাঁদের মফস্বলের ছেলেমেয়েদের মনে এই একটা ভয় আছে আর কি।
শোভাযাত্রায় চেয়ারের ব্যবসা
শোভাযাত্রাকে ঘিরেই আরও একটা মজার ঘটনা লেখেন সুদীপ। ওই সময়ে ওই শোভাযাত্রাটাই কিছু মানুষের ব্যবসা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। যে রাস্তা জুড়ে শোভাযাত্রাটা হচ্ছে, তাঁর কিছু বন্ধুর বাড়ি ওই রাস্তার ধারে ছিল। অনেকে দর্শকদের বসার জন্য চেয়ার ভাড়া দিতেন। অর্থাৎ আপনি যদি চান একেবারে সামনের সারিতে বসে ঠাকুর দেখবেন, বেশি কিছু নয়, সামান্য কিছু মূল্যের বিনিময়ে আপনাকে সেখানে বসার জায়গা করে দেবে সেই বাড়ির মানুষেরাই।
মূল্যই নির্ধারন করত কোন সারিতে আপনার স্থান হবে! কখনও ১০০, কখনও ১৫০। আবার সেখানেও চলত দরদাম। ভাবা যায়! তবে এর মধ্যেও অনেকে ছিলেন যাঁরা ভাল মনেই চেয়ার বসিয়ে রাখতেন বাড়ির সামনে। তবে সুদীপ বা তাঁর বন্ধুদের আর বসার সময় কোথায়। তাঁরা চলে যেতেন একেবারে ঘাট পর্যন্ত।
আরও পড়ুন
কলকাতায় চলে আসার পর সবটাই এখন তাঁর কাছে স্মৃতি। মাঝে দু’এক বার সেখানে যাওয়ার সৌভাগ্য তাঁর হয়েছে। তবে সেটা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের বিচারক হিসেবে। এ ছাড়া আর ইচ্ছে থাকলেও কাজের ব্যস্ততার কারণে কোনও দিন যাওয়া হয়ে ওঠেনি চন্দননগর। চন্দননগরের ঝাঁ-চকচকে আলোকসজ্জা, সাবান জলের বুদবুদ আর ভেঁপুর আওয়াজের মধ্যেই থেকে গিয়েছে সুদীপের জগদ্ধাত্রী পুজো ও ছেলেবেলা।
স্লট পরিবর্তনের প্রভাবে টি.আর.পি তালিকায় বড় পরিবর্তন
November 7, 2024[…] […]