খুব বেশি দিন আগের কথা নয়, ভর সন্ধেবেলা কলকাতার মেট্রো স্টেশনে দুই প্রেমিক প্রেমিকা একে অপরের ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। আর এই নিয়েই এবার যত কান্ড। বাংলার মানুষ দু ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছেন। কেউ সমর্থন করছেন চুম্বনরত প্রেমিক যুগলকে আবার কেউ বিপক্ষে আওয়াজ তুলছেন। নানা মুনির নানা মত যাকে বলে আরকি। বড়দিনের শহরে প্রায় সপ্তাহখানেক হতে চললো এই কান্ডের জোর চর্চা চলছে।
তবে এই বিষয়টিকে মোটেই ভালোভাবে নেননি বর্ষীয়ান অভিনেত্রী মমতা শঙ্কর। সম্প্রতি সংবাদ মাধ্যমের একটি সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী বলেছিলেন, ‘জন্তুরাও বোধহয় আমাদের থেকে অনেক ভালো।’ এবারে অভিনেত্রীর এ হেন মন্তব্যের বিরুদ্ধে সরাসরি নাম করেই সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হলেন তরুণ অভিনেতা ঋদ্ধি সেন। কি বললেন তিনি?
চুমু বিতর্কে কি বলেছিলেন মমতা শঙ্কর?
তবে এবারই প্রথম নয়, কয়েক মাস আগের কথা মেয়েদের শাড়ির আঁচল নামিয়ে পরা নিয়ে কুমন্তব্য করে বসেন মমতা। সেই নিয়েও জোর বিতর্কে জড়িয়েছিলেন তিনি। স্বস্তিকা মুখার্জি থেকে শুরু করে নারীবাদী অনেক শিল্পী এবং সাধারণ জনগণ তাঁর ওই কথার বিপক্ষে আওয়াজ তুলেছিলেন। আর এ বার মেট্রো স্টেশনে জনসমক্ষে চুমু প্রসঙ্গে কথা বলে ফের বিতর্কে জড়ান অভিনেত্রী।
চুমু কান্ড নিয়ে তাঁর বক্তব্যে তিনি বলেছিলেন, তিনি এই বিষয়টিকে মোটেও সমর্থন করেননা। এরপর নাকি তরুণ সমাজের সাহস আরও বেড়ে যাবে। পশুদের সঙ্গে তুলনা টেনে তিনি বলেন, জন্তুরাও নাকি এই সমাজের লোকেদের থেকে ভালো। একটু আব্রু থাকবে না? আর অভিনেত্রীর এহেন মন্তব্যেই সরগরম হলো নেট পাড়া। তাঁর মতামত নিয়ে দিনকয়েক ধরেই নানা চর্চা চলছিল নেটদুনিয়ায়। এবারে অভিনেত্রীর এই মন্তব্যের বিরুদ্ধে পাল্টা জবাব দিতে সোশাল মিডিয়ায় কলম ধরলেন ঋদ্ধি।
মমতার বিরুদ্ধে সমাজমাধ্যমে কলম ধরলেন ঋদ্ধি! কি লিখলেন তিনি?
ঋদ্ধি লেখেন, ‘৭৮তম স্বাধীনতা দিবস পার করা এক দেশের মেট্রো স্টেশনে দু’জন স্বাধীন নাগরিককে চুমু খেতে দেখে শ্রদ্ধেয় মমতা শঙ্করের মূল্যবোধে আঘাত লেগেছে। আজকাল এই মূল্যবোধের ব্যাপারটা খুব মজার। যে যাঁর ব্যক্তিগত মূল্যবোধের ধারণাকে একটা জাতির উপর চাপিয়ে দিচ্ছে ইচ্ছেমতো। কারুর মূল্যবোধের জমিতে যদি পঞ্চাশ তলা হাই রাইজ়ের জায়গা এবং উচ্চতা জুড়ে স্থান পায় ‘পুরাণ’। তাহলে সে গোটা দেশের জমির ইতিহাস এবং বর্তমানের উপর চাপিয়ে দিতে চাইছে সেই মূল্যবোধ। আবার কেউ কেউ অন্যের মূল্যবোধের মন্ত্র শুনে বোমা মেরে উড়িয়ে দিচ্ছে আস্ত একটা হাই রাইজ এবং তার ভিতরে বসবাস করা কিছু সহ নাগরিককে।’
ঋদ্ধি আরও প্রশ্ন তুলেছেন সেই ব্যক্তির মানসিকতা নিয়ে, যিনি সেদিন ওই ভিডিয়োটি করেছিলেন। তাঁর কথায়, ‘কাউকে কোনও রকম আঘাত না করে বা কারও কোনও ক্ষতি না করে যে যুবক-যুবতী শুধুমাত্র একে অপরের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করেছিলেন, তাদের সেই একান্ত মুহূর্তেকে ভিডিয়ো করে ছেড়ে দিলেন যে ব্যক্তি, তার আচরণ শ্রদ্ধেয় মমতা শঙ্করের মূল্যবোধে আঘাত করলো না? ওঁর মতে শিশুদের মন বিষিয়ে যাবে প্রকাশ্যে ভালোবাসা দেখলে আর শিশু মন মূল্যবোধ শিখবে ভালোবাসাকে গোপনে প্রকাশ করে হিংসাকে বুকে বাজিয়ে ভরা আলোয় প্রকাশ করা যায় দেখে?’
প্রকাশ্যে চুম্বন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে মমতা শঙ্কর ধর্ষণের মতো বেশ কিছু বিষয়কেও উদাহরণ হিসেবে দাঁড় করিয়েছিলেন। তাই বিপক্ষে ঋদ্ধি বলেন, এই ঘটনার মাধ্যমে দুটি জিনিস প্রমাণ করলেন অভিনেত্রী। ‘১) ওনার মতে প্রকাশ্যে চুমু খাওয়ার জন্যে সমাজে ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে। এই বক্তব্য প্রকাশ্যে বলে নিজের মানসিকতার পরিচয় দিয়ে উনি বুঝিয়ে দিলেন যে নিরাপত্তা দখলের লড়াইয়ে ‘reclaim the night’-এর পাশাপাশি প্রয়োজন ‘reclaim the mind’এর। প্রয়োজন এই পচা ভাবনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো।’
জন্তুদের সঙ্গে প্রেমিক যুগলের তুলনা টানার জন্য ঋদ্ধি বলেছেন, ‘উনি বলেছেন জন্তুরা আমাদের থেকে অনেক ভালো। এটা একদম সঠিক। মানুষ প্রকাশ্যে খুন করে আর জন্তুরা প্রকাশ্যে একে অপরকে আদর করে। খুব ভালো হয় যদি ওঁর টিভিতে কেউ ডিসকভারি বা অ্যানিম্যাল প্ল্যানেট চ্যানেলটা ইনস্টল করে দিতে পারেন। না হলে ভালোবেসে কেউ জিম করবেট ঘুরতে যাওয়ার একটা টিকিটও পাঠাতে পারেন।’ শেষে ঋদ্ধি নিজের কথা শেষ করেন মমতাকে আরেকটু বিবেকবান ও মমতাময়ী হতে বলে। তিনি বলেন, ‘আশাকরি আপনি আরও মমতাশীল হবেন।’