আরজিকর কান্ড নিয়ে মুখ বন্ধ। নিজের রাজ্যের করুণ পরিস্থিতিতে মুখ ঘুরিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। অথচ শেষ কয়েক বছর ধরে এই মানুষটিই বাংলার হার্টথ্রব। ব্যোমকেশ বা খোকা সব চরিত্রেই চুরি করেছেন হাজার রমণীর মন। কথা হচ্ছে অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্যর। সম্প্রতি আরজিকর কান্ড নিয়ে মুখ বন্ধ রেখেছেন অভিনেতা। এই নিয়ে উঠেছে সমালোচনার ঝড়। এবারে এক ভ্রমণ সংস্থার সাক্ষাৎকারে অনির্বাণ শেয়ার করলেন তাঁর টুকিটাকি মতামত।
ভ্রমণ সংস্থা যখন তাই ঘুরতে যাওয়ার কথা তো উঠবেই। তবে মফস্সলে মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম এবং বড় হওয়ার দরুন এতো ঘোরার সুযোগ হয়নি অভিনেতার। তাঁর ছেলেবেলায় এত বেড়ানোর চল ছিলও না। তবে ঝাড়গ্রাম, দিঘা, পুরী বা দার্জিলিং এর মতো বাংলার আশেপাশের এলাকায় ঘুরেছেন। এখন অবশ্য সিনেমার দৌলতে বিদেশ ভ্রমণ যেমন, ব্যাঙ্কক, পটায়া, আমেরিকা গেছেন। তবে মাঝে মধ্যে প্রকৃতির মাঝখানে গিয়ে দাঁড়াতে, অবসর কাটাতে ভালবাসেন অভিনেতা। পাহাড় ভালোবাসেন অনির্বাণ। জানান এখনো তাঁর নিজের দেশের অনেক কিছু দেখা বাকি। গুজরাত, কর্নাটকে গেলেও, কাশ্মীর, উত্তরাখণ্ড, হিমাচল প্রদেশ, অরুণাচল প্রদেশ, কেরালা দেখেনি। অভিনেতার মনে বিদেশে যাওয়ার সুপ্ত ইচ্ছেও আছে। সুযোগ পেলে ইউরোপে যেতে চান তিনি, গ্রিস দেশে।
বাংলাদেশের ভালোবাসা, অভিনয়, কাজ, রাজনীতি বিভিন্ন বিষয়ে কথা বললেন অনির্বাণ!
বাংলাদেশের অভিনেত্রী সানজানা মেহরান অনির্বাণের বড়ো ভক্ত। অনির্বাণকে ভালবাসেন তিনি। ‘অনি’ বলে ডাকেন! সেদেশের আরেক অভিনেত্রী জয়া আহসানকে পর্দায় ভিজে চুমু খাওয়ার পরেও তাঁর অনির্বাণকে চাই। নিজের গাওয়া তিনটে প্রেমের গান অনির্বাণ উৎসর্গ করলেন সানজানাকে। অভিনেত্রীকে তিনি প্রকাশ্যে ভালবাসা জানিয়েছেন। পৃথিবীর সমস্ত গান তাকেই উৎসর্গ করা উচিত বলে জানান। বাংলাদেশে কাজ করার বিষয়ে বলেন, সিরিজ ‘মহানগর ৩’-এর অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি। ওই সিরিজ-এর দ্বিতীয় পর্বের একেবারে শেষ দৃশ্যে ছিলেন তিনি। রজক আলি চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। ‘মহানগর ৩’ হলে আবার তাঁর ডাক পাওয়ার কথা বলে জানান। অপেক্ষায় আছেন অভিনেতা।
ভারত বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে খারাপ লাগা আছে অনির্বাণের। তিনি বলেন, “আমরা আমাদের রাজনীতির দায়ভার দক্ষিণপন্থী নেতাদের হাতে তুলে দিয়েছি। পুঁজিবাদী আর দক্ষিণপন্থী মতবাদ, আমরা এই করতেই তো পৃথিবীতে এসেছি। ঝামেলা বাঁধাতে, হাঙ্গামা তৈরি করতে। রাজনীতির এটা একটা মুখ। এটা করে সমাজের মধ্যে যত রকম অশান্তি, যত রকম ব্যবধান তৈরি করা যায়, করতে থাকো। আর মুনাফা লুটতে থাকো। ভোট লুটতে থাকো। শিল্পপতির টাকা বাড়তে থাকুক। সবাই জানে। ব্যক্তিগত ভাবে আমার ঘৃণা কম। আমার রাগ কম। আমার মা-বাবা, স্কুল, নাটক-ছবির শিক্ষাগুরুরা এর উল্টোটাই শিখিয়েছেন। সময় যা-ই হোক, আমি সেই শিক্ষা আঁকড়েই চলতে চাই। আমি স্নেহের লোক, ভালবাসার লোক, সহমর্মিতার লোক। প্রতিশোধপন্থী নই। যদি ইতিহাসে কোনও রক্ত লেগে গিয়ে থাকে, আধুনিক সভ্যতার সকলের কাজ সেই দাগ মুছে দেওয়া। সেই দাগকে শুশ্রূষা দেওয়া। সেই দাগকে খুঁচিয়ে ঘা করা নয়। আমি এটা সময়ের দায়িত্ব বলে মনে করি। রাজনৈতিক নেতারা সেটা মনে করেন না। তাঁদের যেটা কাজ তাঁরা সেটা করছেন।”
আরজিকর কাণ্ডে নীরব থেকে কি বিতর্ক এড়িয়ে গেলেন অভিনেতা? কানাঘুষো শোনা গেছে তাঁর দাম্পত্য বিপর্যয় নিয়েও। ঘটনা যাই হোক অনির্বাণ আর আগের মতো সরব নন কেন? অনির্বাণ বলেন একটু হয়তো বড়ো হয়েছেন তাই। তবে এবিষয়ে লোকে যে তাঁর সমালোচনা করছেন এমনকি গালিগালাজ দিচ্ছেন সেকথা তিনি জানান। গায়িকা ইমন চক্রবর্তীর প্রতিবাদ নিয়ে তিনি বলেন প্রত্যেকের নিজস্ব ভঙ্গিতে প্রতিবাদ জানানোর স্বাধীনতা রয়েছে। তিনি সবার সব কিছু নিয়ে মন্তব্য করতে চান না।
নতুন সিরিজ নিয়ে বেশ উৎসাহী অভিনেতা! নতুন সিরিজের কাজ শুরু হচ্ছে কবে?
পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের পরিচালনায় এই প্রথম অভিনয় করতে দেখা যাবে অনির্বাণ ভট্টাচার্যকে। ভৌতিক থ্রিলার সিরিজের নাম ‘ভোগ’। নতুন সিরিজে অভিনেতা ধরা দেবেন একদম অন্য রকম ভাবে। এমন চরিত্রে আগে কাজ করা হয়নি অভিনেতার। সেই জন্যই পরমব্রত তাঁকে বলেছেন, “তুই অনেক ধরনের চরিত্র করেছিস। কিন্তু এই ধরনের চরিত্রে কাজ করিসনি।” আর ওই শুনেই রাজি হয়ে গেলেন অনির্বাণও। দিন দুই পর থেকেই নাকি শুটিং শুরু হবে সিরিজের।
অনির্বাণ ভোগে বিশ্বাসী না উপভোগে এই প্রশ্ন করা হলে খানিক ঘাবড়েই যান অভিনেতা। তারপর একটু থমকে বললেন অনির্বাণ বাঁচায় বিশ্বাসী। বাঁচতে গেলে যা যা আসে, কখনও ভোগ, কখনও ত্যাগ, কখনও আনন্দ, কখনও দুঃখ যেন নদীর মতো। জীবন তাঁর কাছে নদীই। তিনি বৈচিত্রে বিশ্বাসী। সব কিছুকেই গ্রহণ করে নিতে পারেন তিনি। বলা ভালো গ্রহণ করতে হয়। অভিনেতা নিজের মতামত শেষ করেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের কথায়, “মনে রে আজ কহ যে, ভাল মন্দ যাহাই আসুক সত্যেরে লও সহজে।”