উঠতি বয়সে সবে বসন্তের ছোঁয়া লেগেছিল অভিনেতা শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের মনে। এক দিদির বাড়িতে চায়ের আড্ডায় প্রথম দেখা হয় জীবনসঙ্গিনীর সঙ্গে। তখন অবশ্য দুজনার কেউই জানতেন না, দিন গেলে তাঁরাই দুজন দুজনাকে মন দিয়ে বসবেন। একটু স্বাস্থ্যবতী মহুয়াকে প্রথমে রঙ্গ তামাশায় নাস্তানাবুদ করলেও পরে নিজেই আবার প্রেয়সীর ফোন নম্বর জোগাড় করে ভালোবাসার প্রথম পদক্ষেপ নেয়।
অভিনেতা শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়কে, ‘আমার অপু’ বলে সম্বোধন করলেন স্ত্রী মহুয়া চট্টোপাধ্যায়। স্বামীর জন্মদিনে নিজেদের খুনসুঁটিতে মাখা দাম্পত্য জীবনের গল্প করলেন সংবাদমাধ্যমের কাছে। মহুয়া জানান, তাঁদের আলাপের শুরুর সময়তে মুঠোফোন আসেনি। ল্যান্ডফোনই ছিল একমাত্র ভরসা। অভিনেতা বাইরে শুটিংয়ে ব্যস্ত থাকতেন। দেখা করা বা কিছু বলার থাকলে মহুয়া যোগাযোগ করতেন ভাবি শ্বশুরমশাই শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়কে। বরাবরই শ্বশুরমশাইয়ের সঙ্গে বেশ ভাব ছিল মহুয়ার। তাঁকে এখনও বাপি বলে ডাকেন তিনি।
শ্বশুরমশাইয়ের সঙ্গে বরাবরের বন্ধুত্ব! কীকরে হয়েছিল শাশ্বত-মহুয়ার বিয়ের পাকাকথা?
তবে শ্বশুরমশাই তাঁদের প্রেমের খবর জানলেও, মহুয়ার বাড়িতে সেসবের কোনো খবরই তখন পৌঁছয়নি। কিছু সময়ের পর শাশ্বতর বাবা ফোন করলেন মহুয়ার বাবাকে। পেশায় ব্যাঙ্ক ম্যানেজার মহুয়ার বাবা, শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায় বা শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় কাওকেই চিনতেন না তবে তাঁর মা জানতেন। ফোনের ও পারে শুভেন্দুর ভারী গলা, “নমস্কার। আমি ডা. শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায় বলছি। এক দিন আমাদের বাড়িতে আসুন।”
সেদিন নাকি আকাশ থেকে পড়তে পড়তে সৌজন্যরক্ষা করেছিলেন মহুয়ার বাবা। তবে বরাবর স্বাধীনচেতা মহুয়ার কোনো ভীতি ছিল না। সেসময়ই চাকরিরত তিনি, চাহিদাও খুব বেশি ছিল না। তবে পরিবারের বাকিরা যেমন, বাবা-কাকা, কাকিমারা একটু হলেও ভয় পেয়েছিলেন বৈকি। অভিনেতা পরিবারে বিয়ে। কেমন হবে, কে জানে? পরে অবশ্য মহুয়ার বাবা জামাইয়ের অন্ধ ভক্ত হয়ে গিয়েছিলেন। মহুয়া জানান, অপুও (শাশ্বত) বলেন, “মেয়ে নয়, আগে শ্বশুরমশাই আমাকে পছন্দ করেছেন।”
মহুয়া অকপটে স্বীকার করেন, বিয়ের পর প্রথম প্রথম তাঁরও একটু ভয় করত। যতই চেনাজানা থাক, একসঙ্গে না থাকলে আদৌ কাউকে বোঝা সম্ভব? সঙ্গে ছিল স্বামীর চার পাশে সুন্দরীদের আনাগোনা। সেই সময় নাকি মহুয়াকে বেগ দিতে অনেকে ইচ্ছে করেই শাশ্বতর গা ঘেঁষত। দেখে বেশ অস্বস্তিতে ভুগতেন মহুয়া। শ্বশুরমশাই সেই সময় তাঁকে সাহস দিয়ে বলেছিলেন, “এগুলো সবই অভিনয়, কোনওটাই সত্য নয়।” ধীরে ধীরে সবটাই যে নাটক তা বুঝেছিলেন মহুয়াও। তাঁকে দেখিয়ে সবটা করা হচ্ছে ইচ্ছে করে। সে দিন থেকে মহুয়ার জড়তা, অস্বস্তি, ভয় সবটা কেটে গেছিল।
এরপর মহুয়ার পরিচয় হয় বিনোদন জগতের সঙ্গে। রাইমা সেন কিংবা নীলাঞ্জনা সেনগুপ্তরা এখন তাঁর বন্ধু। তবে পেশায় শিক্ষিকা মহুয়ার খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি। দুঃখ করলেন তারকা পরিবারে বিয়ে হওয়ার পর সেলিব্রিটি তকমা দিয়ে দূরে সরে গেছেন তাঁর কিছু বন্ধু। আগে সেজন্য কিছুটা খারাপ লাগলেও এখন খুব বুঝেশুনে বন্ধু নির্বাচন করেন মহুয়া। মহুয়া বলেন, কলেজের সহকর্মীরাও কেউ কেউ এই ধরনের আচরণ করেন। এই ধরনের মানুষদের নিজের থেকে দূরেই রাখেন মহুয়া। একারণেই তাঁর বন্ধুসংখ্যাও খুবই কম।
একটু বেখেয়ালি, অনেকটা রসিক আর কিছুটা চাপা স্বভাবের শাশ্বতকে নিয়ে সুখী দাম্পত্য জীবন মহুয়ার!
স্বামীর ব্যাপারে মহুয়া বলেন, শাশ্বত বেশ চাপা স্বভাবের। শুরুর দিকে কেরিয়ার গড়তে বহু কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে অভিনেতাকে। সাফল্যের পাশাপাশি হতাশাও এসেছে। তবে তাই জন্য কখনোই ভেঙে পড়েননি শাশ্বত। উল্টে সারা ক্ষণ হাসি-ঠাট্টায় মেতে থাকতেন তিনি। তবে সেই রূপটা পুরোপুরিই তাঁর বাইরের রূপ ভেতর থেকে ভীষণ চাপা মানুষ অভিনেতা। নিজের মনের কথা নিজেই নাকি ঠিক মতো বোঝাতে পারেন না। তবে কথার ধরনে বেশ চাঁছাছোলা তিনি, রসিকতা করার ধরনও তেমন। অভিনেতার এই গুণের জন্য মাঝেমধ্যেই তাঁকে সামাল দিতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে মহুয়াকে।
বাস্তব জীবনে বড্ড বেখেয়ালি অভিনেতা শাশ্বত। জীবনে রোমান্টিকতাও সেভাবে নেই। আজ অবধি বাজার করতে শেখেনি। হাতের কাছে সব গুছিয়ে দিতে হয় শ্রীমতিকেই। খেতে ভালবাসলেও শরীরের দোহাইতে পারেন না। তবে স্ত্রী কন্যাকে নিয়ে বেশ উদ্বেগ। তাঁদের বাড়ি ফিরতে কখনো দেরি হলে দুশ্চিন্তায় ছটফট করেন। বারবার ফোন করেন তাঁদের। মেয়ে বাইরে থাকলে স্ত্রীর কাছে নালিশ জানান। তবে মেয়ে সামনে এলে আর কিচ্ছুটি বলতে পারেন না অভিনেতা। একমাত্র কন্যা অভিনেতার নয়নের মণি। মহুয়া দেবী তাঁর কথা শেষ করেন দর্শকের দিকে একটি প্রশ্ন ছুঁড়ে। তিনি বলেন, “আপনারাই বলুন, এমন মানুষের প্রেমে পড়বেন কোনও মহিলা?” তবে কিছুটা বেখেয়ালি, রসিক, সাংসারিক আর চাপা স্বভাবের এই মানুষটার সঙ্গেই খুশিমনে বাঁধা পড়েছেন মহুয়া।