৯৭তম অস্কার পুরস্কারের দৌড়ে জায়গা করে নিয়েছে ভারতীয় বংশোদ্ভূত পরিচালক সন্ধ্যা সুরির সিনেমা ‘সন্তোষ’।এটি ভারত, ব্রিটেন, এবং ফ্রান্সের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত একটি ছবি, যা উত্তর ভারতের গ্রামীণ পটভূমিতে তৈরি। অস্কারের সেরা আন্তর্জাতিক ফিচার ফিল্ম বিভাগে মনোনীত হওয়ার পর ছবিটি নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন এর প্রধান অভিনেত্রী সাহানা গোস্বামী।
ভারতীয় শিকড় এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি…
‘সন্তোষ’ মূলত ব্রিটেনের পক্ষ থেকে অস্কারে জমা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু সিনেমার গল্পের মূলে রয়েছে ভারতের গ্রামীণ প্রেক্ষাপট। ছবিটি আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালগুলোতে প্রদর্শিত হয়েছে, বিশেষ করে কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে। এই ছবির কেন্দ্রে রয়েছে ভারতের গ্রামীণ নারীদের জীবন এবং তাদের সংগ্রামের গল্প।
সাহানা গোস্বামী জানিয়েছেন, “অস্কারের মতো আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে এই সিনেমার জায়গা পাওয়াটা আমাদের পুরো টিমের জন্য বিশাল গর্বের বিষয়। বিশেষ করে সন্ধ্যা সুরির জন্য এটি এক বড় সাফল্য।” ‘সন্তোষ’-এর প্রাসঙ্গিকতা…এই সিনেমাটি হিন্দি ভাষায় নির্মিত হলেও, এটি ভারতীয় সিনেমার জন্য একটি বড় স্বীকৃতি।
সাহানা বলেন, “এটি ভারতীয় টিমের জন্যও গর্বের মুহূর্ত। গল্পটি ভারতের, তাই সাফল্যের ভাগিদার ভারতীয় দর্শকেরাও।” অস্কারে ভারত থেকে প্রেরিত অন্য একটি সিনেমা, ‘লাপাতা লেডিজ’,সেরা আন্তর্জাতিক ফিচার ফিল্ম বিভাগে জায়গা করতে ব্যর্থ হয়েছে। তবে ‘সন্তোষ’-এর এই অগ্রগতি ভারতীয় সিনেমার জন্য একটি বড় অর্জন।
অস্কার দৌড় এবং প্রতিযোগিতা….
এ বছর সেরা আন্তর্জাতিক ফিচার ফিল্ম বিভাগে বিশ্বজুড়ে ৮৫টি সিনেমা জমা পড়েছিল। এর মধ্যে মাত্র ১৫টি ছবি চূড়ান্ত তালিকায় স্থান পেয়েছে, যেখানে ‘সন্তোষ’-এর নামও রয়েছে। সাহানা বলেন, “সিনেমার মান এবং গল্প বলার দক্ষতাই এখানে মূল বিচার্য বিষয়। দেশ কিংবা ভাষার গণ্ডির বাইরে গিয়ে সিনেমার সৌন্দর্য ও গভীরতাকে উপলব্ধি করা উচিত।”
‘সন্তোষ’-এর নির্মাণ এবং সাফল্য….
পরিচালক সন্ধ্যা সুরি একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত নির্মাতা, যিনি ব্রিটেনে বসবাস করেন। তার পরিচালনায় ‘সন্তোষ’ সিনেমাটি ভারত, ব্রিটেন এবং ফ্রান্সের যৌথ উদ্যোগে তৈরি। এতে সাহানা গোস্বামী ছাড়াও আন্তর্জাতিক কাস্ট এবং ক্রু কাজ করেছেন। কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ছবিটির প্রদর্শনী বড় সাড়া ফেলেছিল। অস্কারের মতো মঞ্চে সিনেমাটির জায়গা পাওয়া, বিশেষ করে সেরা আন্তর্জাতিক ফিচার ফিল্ম বিভাগে, প্রমাণ করে যে ভারতের গ্রামীণ কাহিনিগুলোও বিশ্বমঞ্চে জায়গা করে নিতে পারে।
ভারতীয় সিনেমার ভবিষ্যৎ…
ভারতীয় সিনেমা ক্রমেই আন্তর্জাতিক মঞ্চে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। সাহানা বলেন, “সাফল্যের ভাগীদার হতে সবাইকে একত্রিত হওয়া উচিত। সিনেমাটি দেশভিত্তিক নয়, গল্প এবং এর গভীরতাকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।” ভারতীয় সিনেমার এই অগ্রগতি ভারতীয় নির্মাতা এবং শিল্পীদের জন্য এক বড় অনুপ্রেরণা।
‘সন্তোষ’-এর মতো ছবি প্রমাণ করে, কেবল বাণিজ্যিক সিনেমা নয়, বিভিন্ন গল্প এবং জীবনধারার উপর ভিত্তি করে তৈরি সিনেমাগুলোও বিশ্বমঞ্চে সমাদৃত হতে পারে। ‘সন্তোষ’-এর অস্কারের দৌড়ে টিকে থাকা শুধু পরিচালক এবং টিমের জন্যই নয়, ভারতীয় সিনেমার জন্যও এক বড় গর্বের মুহূর্ত। সাহানা গোস্বামীর মতে, “সিনেমার গল্প যদি ভারতীয় হয়, তবে সেই সিনেমার সাফল্যেও ভারতের গর্বিত হওয়া উচিত।”
ভারতীয় সিনেমার এই সফল যাত্রা প্রমাণ করে, দেশের গল্প নিয়ে বিশ্বে আরও অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। সাহানার এই বক্তব্য এবং ‘সন্তোষ’-এর অগ্রগতি ভবিষ্যতে ভারতীয় সিনেমার জন্য আরও নতুন সুযোগের দ্বার খুলে দেবে।