বাংলা সিনেমার প্রযোজক ও অভিনেতা দেব সম্প্রতি তার নতুন ছবি ‘খাদান’-এর জন্য পর্যাপ্ত শো বা প্রেক্ষাগৃহ পাচ্ছেন না বলে সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
দেবের অভিযোগ, দক্ষিণী ছবি বিশেষত ‘পুষ্পা ২’-এর কারণে তার ছবির জন্য পর্যাপ্ত শো বরাদ্দ করা যাচ্ছে না। এই নিয়ে তিনি এক টুইটে বলেন, “এখনও ‘খাদান’-এর অগ্রিম বুকিং শুরু হয়নি, তার জন্য আমি দুঃখিত। আমি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা করছি, তবে এর জন্য দায়ী ভিন্ন ভাষার ছবি।”
দক্ষিণী সিনেমার চাপ, ‘খাদান’-এর শো কম হওয়ায় ক্ষুব্ধ দেব…
দেবের এই ক্ষোভের কারণটা অনেকটাই পরিষ্কার। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে ‘পুষ্পা ২’-এর মতো দক্ষিণী ছবিগুলোর প্রতি দর্শকদের আগ্রহ এতটাই বেশি যে, এই সিনেমাগুলি সিনেমা হলে শো দখল করে নিয়েছে। ‘পুষ্পা ২’ মুক্তির প্রথম সপ্তাহেই পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ২৫ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে, যা বাংলা সিনেমার তুলনায় অনেক বেশি। এর ফলে বাংলা সিনেমাগুলির জন্য প্রয়োজনীয় শো বরাদ্দ করা সম্ভব হচ্ছে না।
দেবের অভিযোগে যেই ‘পুষ্পা ২’ ছবির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তা মূলত ভারতের অন্যতম সফল দক্ষিণী সিনেমাগুলির মধ্যে একটি। ‘পুষ্পা ২’ অ্যালু অর্জুন অভিনীত এবং এটি খুবই জনপ্রিয় একটি ছবি। এর প্রথম পর্ব ‘পুষ্পা: দ্য রাইজ’ মুক্তির পর ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছিল এবং দ্বিতীয় পর্বের জন্য অপেক্ষা করেছিলেন দর্শকরা। ‘পুষ্পা ২’ মুক্তির পর তা আরও বড় সাফল্য পেয়েছে। এই ছবিটি দ্রুততম ভারতীয় ছবি হিসেবে ১০০০ কোটির আয়ের রেকর্ডও করেছে।
‘খাদান’কে পর্যাপ্ত শো না দেওয়ার জন্য কি দায়ী ‘পুষ্পা ২’?”
যেহেতু ‘পুষ্পা ২’ এবং অন্যান্য দক্ষিণী ছবি বর্তমানে সিনেমা হলের অধিকাংশ শো দখল করে রেখেছে, তাই বাংলা সিনেমার জন্য শো পাওয়ার সমস্যা তৈরি হচ্ছে। ‘খাদান’ ছবিটি এবারের বড়দিনে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল, তবে শো বরাদ্দ নিয়ে সমস্যা হওয়ায় ছবিটি প্রত্যাশিত সংখ্যক প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে না। এদিকে, অন্যান্য বাংলা ছবি যেমন ‘সন্তান’ ও ‘চালচিত্র’ও একই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে চলচ্চিত্র প্রযোজক এবং পরিচালকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন, কেননা ভিন্ন ভাষার ছবির আধিপত্যের কারণে তাদের নিজেদের ছবির জন্য প্রেক্ষাগৃহ পাওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে। বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য এই পরিস্থিতি এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে কিছু প্রেক্ষাগৃহের মালিক বলছেন যে, বড়দিন উপলক্ষে চারটি বাংলা ছবি মুক্তি পাচ্ছে, তাই শো বরাদ্দ নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা হবে। প্রিয় প্রেক্ষাগৃহের কর্ণধার অরিজিৎ দত্ত জানিয়েছেন, ‘খাদান’ ছবিটি প্রিয়ায় দেখানো হবে এবং শিগগিরই অগ্রিম বুকিংও শুরু হবে। এছাড়া, চলচ্চিত্র বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে, দক্ষিণী সিনেমার প্রতি দর্শকদের আগ্রহের এই বৃদ্ধি বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য ইতিবাচক নয়। তবে বাংলা সিনেমার জন্য এটি একটি সময়ের পরীক্ষাও বটে।
বাংলা চলচ্চিত্রের নির্মাতাদের নতুন কৌশল গ্রহণের পাশাপাশি দর্শকদের কাছে তাদের সিনেমাগুলিকে আরও ভালোভাবে তুলে ধরার জন্য আরও প্রচারণা চালানো প্রয়োজন।বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য সবচেয়ে বড় দুঃখজনক বিষয় হল, দেশজুড়ে যখন বিভিন্ন ভাষার সিনেমার মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়ছে, তখন স্থানীয় বাংলা সিনেমার জন্য তাদের জায়গা তৈরি করা আরও কঠিন হয়ে পড়ছে। এর ফলে, বাংলা চলচ্চিত্রের শিল্পে যে ধরনের সৃষ্টিশীলতা এবং উন্নতি আশা করা যাচ্ছিল, তা হয়তো বাধাগ্রস্ত হতে পারে।অবশ্যই বাংলা চলচ্চিত্রের দর্শকরা এখন চাইছেন যে, তারা দেশের অন্যতম বড় চলচ্চিত্র শিল্প হিসেবে দক্ষিণী ছবির সঙ্গে পারস্পরিক সম্মান বজায় রেখে বাংলা সিনেমারও জয় দেখতে পাক।
সুতরাং, দেবের ক্ষোভ প্রমাণ করে যে, এই পরিস্থিতি শুধুমাত্র চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জন্য নয়, বরং পুরো বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।