আজকাল টলিউডের অন্যতম চর্চিত অভিনেতা সাহেব চট্টোপাধ্যায়। অভিনেতা টলিউড থেকে বলিউডে পাড়ি দিয়েছেন বেশ কিছুদিন হয়ে গেল। ১৮ বছর পর আবারও হিন্দি সিনেমায় কাজ করছেন অভিনেতা। সিনেমাতে পর্দা ভাগ করে নিচ্ছেন, রঙ্গনাথন মাধবনের সঙ্গে। কিছুদিন আগে কুমোরটুলি চত্বরে দেখা গিয়েছিল তাঁকে ও ম্যাডিকে। ম্যাডি কে নিয়ে টুকিটাকি অনেক গল্পই করেছিলেন সংবাদমাধ্যমের কাছে। তবে সিনেমার ব্যাপারে মুখ খোলেননি অভিনেতা।
সূত্রের খবর পাওয়া গেছে সিনেমার নাম ‘আপ জ্যায়সা কোই’। ছবির শুটিং ইতিমধ্যেই চলছে তাই সেই সূত্রে ইতিমধ্যেই মাধবনের সঙ্গে বেশ ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়েছে সাহেবের। দুজনার নাকি বেশ মিলও আছে সঙ্গীতচর্চার মতো অনেক বিষয়ে।
চায়ের ব্যাপারে বেশ শৌখিন সাহেব! দাদুর তৈরি চা বাগানের টাটকা চা এর কারণ!
সাহেব চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আড্ডাটা মূলত ছিল তাঁর খাবার দাবারের পছন্দ নিয়ে। তাঁর দাদুর নাকি নিজের দু’খানা চা বাগান ছিল। বেশ ছোট থেকেই তাঁর চায়ের প্রতি বেশ ঝোঁক আছে তাঁর। এব্যাপারে বেশ শৌখিনও তিনি। কফিটা তিনি একেবারেই পছন্দ করেন না। তবে, চা খেতে পারেন, যেকোনো সময়। রাত ৯টার সময়ও যদি কেউ চা অফার করে, তিনি চায়ে ‘না’ বলেন না। সাহেব জানান, তিনি সঙ্গে সঙ্গে বলেন, দার্জিলিং ফার্স্ট ফ্লাশ খাবেন।
সাহেব জানান, এক সময় ছিল যখন চায়ের পেটি আসত তাঁদের বাড়িতে। বাক্স খুলতেই বেরিয়ে আসত চায়ের গন্ধ। সাহেব কিন্তু এখনও ভুলতে পারেন নি সেই গন্ধ। নাকে লেগে আছে। তাঁর বাড়িতে চায়ের খরচ করতে হতো না কোনোদিনই। বিনামূল্যে টেস্ট করেছেন নিত্যনতুন ধরনের চা।
বলিউডে কাজের খবর জানতে চাইলে সাহেব জানান, মাধবন তাঁকে নামধরে অর্থাৎ ‘ম্যাডি’ বলেই ডাকতে বলেছেন। তবে সাহেব নিজে এ ব্যাপারে কিছুটা কুণ্ঠা বোধ করছেন। তাঁর কথায়, বলিউডের অতবড় একজন তারকাকে নাম ধরে নাকি ডাকা যায় না। তাই তিনি স্যার নামেই সম্বোধন করেন। ম্যাডি স্যার বলে মাধবনকে ডাকেন সাহেব। তবে মোটামুটি সখ্যতা হলেও এখনও একসঙ্গে লাঞ্চ করেননি সাহেব ও ম্যাডি।
খাবারদাবার বিষয়ে ম্যাডি বলেন, মুম্বইয়ে শুটিংয়ের সময়ে তিনি সেখানকার অথেনটিক মহারাষ্ট্রীয়ান খাবার ট্রাই করেছেন। মহারাষ্ট্রীয়ান থালি চেখে দেখেছেন সাহেব। সে খাবার খুব বেশি ভালো লাগেনি তাঁর। তবে মুম্বইতে খাওয়া দক্ষিণ ভারতীয় খাবার তাঁর সবথেকে বেশি ভালো লেগেছে, সে খাবারকে পুরো দশে দশ দিয়েছেন তিনি।
সত্যজিৎ রায়ের কোলে বসে রসোগোল্লা খেয়েছেন! রান্নায় ঘটিদের থেকে বাঙ্গালদের এগিয়ে রাখলেন সাহেব!
সাহেবের সঙ্গে খাবার নিয়ে গল্প চলাকালীন নিজের জীবনের আরও কিছু অজানা গল্প জানান তিনি। ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় সত্যজিৎ রায়ের কোলে বসে রসগোল্লা খেয়েছিলেন সাহেব। অভিনয়ের পাশাপাশি গানেও বেশ পারদর্শী অভিনেতা সাহেব চট্টোপাধ্যায়। ছোটবেলা থেকেই গানের চর্চা করেছেন অভিনেতা। তিনি বলেন, সেসময় তিনি ক্লাস সেভেনে পড়েন। তখন একদিন তাঁর বাড়ির সামনে একটি সাদা রঙের গাড়ি এল। সেই গাড়িতে যাতায়াত করতেন, স্বয়ং সত্যজিৎ রায় নিজে। সেই সাদা রঙের গাড়িতে চেপে সাহেব গেলেন তাঁর মানিকদাদুর বাড়িতে। সত্যজিৎ রায়কে, মানিকদাদু ডাকতেন সাহেব অন্যদিকে তাঁর স্ত্রীকে বিজয়া দিদা বলে ডাকতেন।
সত্যজিৎ রায়ের কোনো একটা ছবিতে গান গাওয়ার সুযোগ এসেছিল তাঁর। গান গাওয়ানোর জন্যই তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সত্যজিৎ রায়ের বাড়িতে। তাঁকে ডেকে কোলে বসতে বলেছিলেন তাঁর মানিকদাদু ওরফে সত্যজিৎ রায়। এরপরে তাঁর গান শুনে তাঁকে নিজে হাতে রসগোল্লা খাইয়ে দিয়েছিলেন।
নিজেকে একনামে ‘ফুডি’ বলে আখ্যায়িত করেন তিনি। এখন অভিনয় জীবন কাটাচ্ছেন বলে খুব বেশি খাওয়া দাওয়া করার সুযোগ তাঁর হয়না। তবে নিজে ঘটি বাড়ির ছেলে হয়েও বাঙাল রান্নাকে এগিয়ে রেখে বলেন, ‘এই একটা বিষয়ে বাঙালদের কেউ বিট করতে পারবে না, তা হলো রান্না।’ সঙ্গে এও স্বীকার করলেন প্রায় কিছুই রান্না করতে পারেন না তিনি। হাসতে-হাসতে বলেন, তাঁর মা তাঁকে রান্নাঘরে যেতে দিতেন না। ভাবতেন তিনি পুড়ে যাবেন।
তবে একটা খাবার বানাতে পারেন সাহেব। বেশ গর্বের সঙ্গেই জানান, টোস্ট বানাতে পারেন তিনি বেশ ভালো। তাই তিনি একা থাকতে যদি তাঁর বাড়িতে কেউ আসেন তখন তিনি খাবার অর্ডার করেন।
বিভিন্ন মিষ্টি ও খাবারের সঙ্গে বাংলার নায়িকাদের তুলনা করেছেন সাহেব। ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর সঙ্গে পায়েসের তুলনা করেছেন সাহেব। তাঁর কাছে ক্ষীরের মতো ইন্দ্রাণী হালদার। আবার রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বললেন, পোলাও ও কষা মাংস। কবিরাজি কাটলেট বলেছেন চৈতি ঘোষালকে। দেবশ্রী রায়ের সঙ্গে চিংড়ির মালাইকারির তুলনা করেছেন। আর শেষপাতে মিষ্টিমুখ করালেন শ্রীলেখা মিত্রকে দিয়ে। সাহেবের তুলনায় তিনি রসগোল্লা, তাও আবার নলেন গুড়ের রসগোল্লা।