টলিপাড়ায় একের পর এক দুঃসংবাদ। মাত্র একদিন আগে তারাদের দেশে গেলেন সত্যজিৎ রায়ের দুর্গা। দুর্গার বাস্তবের জ্বর আর এবার সত্যিই সারলো না। দিন না পেরোতেই কানে এলো আরেক খারাপ খবর। না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছেন অভিনেত্রী মুনমুন সেন এর স্বামী ভরত দেব বর্মা।
টলিপাড়ায় চলছে শোকের ছায়া। নক্ষত্রপতন বা শিল্পীদের কাছের মানুষ। একের পর এক না ফেরার দেশে পাড়ি দিচ্ছেন শিল্পীজগতের মানুষেরা। ১৯ নভেম্বর না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের জামাই ভরত দেব বর্মা। ১৯৭৮ সালে নিজে দাঁড়িয়ে একমাত্র মেয়ে মুনমুন সেনের সঙ্গে ভরতের বিয়ে দিয়েছিলেন সুচিত্রা। বিয়ের নেমন্তন্ন পৌঁছেছিল মহানায়ক উত্তম কুমারের বাড়িতেও।
হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলেন ভরত বর্মা
বাবাকে হারিয়ে শোকস্তব্ধ তাঁর দুই মেয়ে রাইমা সেন ও রিয়া সেন। বাবার মৃত্যুকালে তাঁর পাশে না থাকতে পারায় আক্ষেপ প্রকাশ করলেন অভিনেত্রী রাইমা সেন। কর্মসূত্রে মুনমুন সেন ও রাইমা সেন দুজনেই দিল্লিতে ছিলেন। বাবার কাছে ছিলেন মুনমুনের ছোটো মেয়ে রিয়া সেন।
মঙ্গলবার সকাল ন’টায় দক্ষিণ কলকাতার নিজের বাড়িতেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন ভরত দেব বর্মা। এদিন সকালেই শরীরে বেশ অস্বস্তিবোধ করেন ভরতবাবু। দ্রুত খবর যায় ঢাকুরিয়ার বেসরকারি হাসপাতালে। তবে অ্যাম্বুলেন্স আসার আগেই সব শেষ। দিল্লিতে সকলেই এই খবর যায় মুনমুন ও রাইমার কাছে। মঙ্গলবার বিকেল ৪ টে নাগাদ কলকাতা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান তাঁরা। বাবাকে তখন আগলে বসে রিয়া।
খবর পেয়ে মুন মুন সেন এর বালিগঞ্জের বাড়িতে আসেন মুখ্যমন্ত্রী
বাবাকে হারালেন মুনমুনের দুই কন্যা রিয়া ও রাইমা সেন। মুনমুন সেন ও তাঁর দুই মেয়ের উদ্দ্যেশ্যে শোকবার্তা জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজের এক্স হ্যান্ডেলে শোকবার্তা জানিয়ে তিনি লেখেন, মুনমুন সেনের কলকাতায় আসার অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি। স্থানীয় বিধায়ককে নির্দেশ দিয়েছেন পুরো বিষয়টা নজরে রাখতে। মুনমুন সেন ও রাইমা সেন কলকাতা বিমানবন্দরে পৌঁছলেই তাঁদের গ্রিন করিডোর করে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও মুখ্যমন্ত্রী জানান। মুখ্যমন্ত্রীর বেশ কাছের মানুষ ছিলেন ভরত দেব বর্মা। মুনমুনও বর্তমানে রাজনীতিতে জড়িয়েছেন। সেই পথে হাঁটতে মুনমুনের পাশে ছিলেন স্বামী ভরত বর্মা।
মুনমুন সেনের কলকাতায় আসার পর সন্ধ্যে ৬ টায় তাঁদের বালিগঞ্জের বাড়িতে আসেন মুখ্যমন্ত্রী। খুব কাছের এক আত্নীয় চলে গেলেন বলে জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কাছে এই ঘটনা বেশ বড় একটা ক্ষতি, ভরত বর্মা তাঁদের খুব ভালোবাসতেন বলেও জানান তিনি। শোক প্রকাশ ও শেষকৃত্য করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই বলে জানান তিনি।
আর কে কে এলেন মুনমুন সেন এর বাড়িতে
এছাড়াও বর্ষীয়ান অভিনেত্রীর স্বামীর প্রয়াণের খবর পেয়ে তারকারা ভিড় জমাতে শুরু করেন তাঁদের বালিগঞ্জের বাড়িতে। প্রথমেই দেখা গিয়েছিল আবীর চট্টোপাধ্যায়, সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়দের। তারপর আসেন ঊষা উত্থুপ, তেলঙ্গানার রাজ্যপাল জিষ্ণু দেববর্মা, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তরা। সবাই অপেক্ষা করছিলেন মুনমুনের জন্য।
প্রয়াত বর্ষীয়ান অভিনেত্রী মুনমুন সেনের স্বামী ভরত দেব বর্মা। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল প্রায় ৮০ বছর। ত্রিপুরার রাজ পরিবারের বংশধরের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন মুনমুন। অভিনয় থেকে রাজনীতির ময়দানে প্রবেশ, সবজায়গাতেই মুনমুন পাশে পেয়েছিলেন ভরতকে। সূত্রের খবর, বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। মঙ্গলবার সকালে আর শেষরক্ষা হল না। মুনমুন-ভরতের ৪৬ বছরের দাম্পত্য এবার ইতি টানলো।
ত্রিপুরার রাজ পরিবারের ছেলে ছিলেন ভরত দেব বর্মা। তাঁর মা ইলা দেবী ছিলেন কোচবিহারের রাজকুমারী। এমনকি পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও অন্যান্য রাজ্যের রাজ পরিবারের সঙ্গে যুক্ত। অভিনেত্রী মুনমুন সেনকে ১৯৭৮ সালে বিয়ে করেছিলেন ভরত দেব বর্মা। খোদ সুচিত্রা সেন দাঁড়িয়ে থেকে দুজনের বিয়ে দেন। এরপর থেকেই সুখে-দুঃখে একসঙ্গে পথ চলা শুরু হয়েছিল তাঁদের।
আরও পড়ুন
কী বললেন মুনমুন সেন
স্বামীর শেষযাত্রায় সংবাদমাধ্যমের কাছে মুনমুন সেন বলেন, “মনে হচ্ছে জীবন ওলটপালট হয়ে গেল। কাছের মানুষকে হারানোর যন্ত্রণা বলে বোঝানো যায় না। আজ শোকের সীমানা নেই।” যে তাঁদের দেখভাল করতো, সেই নিজেই চলে গেলো। জীবন থেকে রং চলে গেলো মুনমুনের। সাদা শাড়িতে তাঁর দিকে যেন তাকানো যাচ্ছে না।
এতকিছুর মধ্যে এই খারাপ সময়ে যাঁরা তাঁদের পাশে ছিলেন তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন মুনমুন। এমনকি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যেও আকুতির স্বরে বলেন কথা বলা বা আন্তরিকতা দেখানোর পরিস্থিতিতে তিনি এখন নেই। তাঁরা যেন দয়া করে কিছু মনে না করেন। এসময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন মেয়ে রাইমা। ওদিকে ছোটো মেয়ে রিয়া বাবার শেষকৃত্যের কাজ সামলাচ্ছে বলে জানান তিনি। বাবার সাথে তাঁর অন্যরকম টান ছিলো বলেও জানান মা মুনমুন। জানা যাচ্ছে, কেওড়াতলা মহাশ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে ভরত দেব বর্মার।