অভিনেতা চন্ডীদাস কুমার টলিউড এবং টেলিভিশনের জগতে একজন বীরপ্রবীণ অভিনেতা হিসেবে পরিচিত। সম্প্রতি, তিনি দীর্ঘ রোগভোগের পর পুনরায় অভিনয়ে ফিরে এসেছেন। বেশ কিছুদিন আগে তিনি ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন, যা তার শারীরিক এবং মানসিকভাবে দারুণভাবে প্রভাবিত করেছিল। ক্যান্সার ধরা পড়ার পর, তার জীবন এক ঝটকায় বদলে যায়। অভিনয় থেকে দূরে থাকতে হয়, চিকিৎসার কারণে শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন। এই সময়টা তার জন্য বেশ কঠিন ছিল, কারণ তিনি সবসময় পর্দায় সক্রিয় থাকতে পছন্দ করেন। তবে, তার এই কঠিন সময়ে পরিবারের সমর্থন এবং নিজের মনোবল তাকে আবার ফিরতে সাহায্য করেছে।
চন্ডীদাস কুমার সম্প্রতি রাজ চক্রবর্তীর প্রযোজনা সংস্থা থেকে প্রস্তাবিত ‘হিমঘর’ ছবির মাধ্যমে টলিউডে ফিরছেন। এটি তার জন্য একটি নতুন সূচনা, যেখানে তিনি একজন অভিজ্ঞ অভিনেতা হিসেবে নিজের প্রতিভাকে পুনরায় প্রকাশের সুযোগ পাবেন। ‘হিমঘর’ ছবিটি তার জন্য শুধু একটি কাজ নয়, বরং এটি তার জীবনের পুনর্জন্মের প্রতীক। ক্যান্সার থেকে সুস্থ হয়ে ফিরে আসার পর, এই ছবিটি তার আত্মবিশ্বাস পুনরুদ্ধারের একটি মাধ্যম হিসেবে দাঁড়িয়েছে। তার ভাষ্যমতে, এই ছবিতে দাদুর চরিত্রে অভিনয় করতে পেরে তিনি বেশ খুশি এবং অনুপ্রাণিত।
চন্ডীদাস কুমার টেলিভিশনের পর্দাতেও বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। তার অভিনয় দক্ষতা এবং চরিত্রের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার ক্ষমতা তাকে দর্শকদের মন জয় করতে সাহায্য করেছে। ‘সীমানা বিস্তার’ নামে ধারাবাহিকটির মাধ্যমে তিনি টেলিভিশন দুনিয়ায় একসময় ব্যাপক খ্যাতি লাভ করেছিলেন। তার অভিনীত চরিত্রগুলি দর্শকদের মনে আজও তাজা রয়েছে। দীর্ঘদিনের বিরতির পর, তার ফেরার সংবাদ তার ভক্তদের মধ্যে ব্যাপক উচ্ছ্বাস সৃষ্টি করেছে।
এখন তিনি শারীরিকভাবে সুস্থ হওয়ার পর অভিনয়ে পুনরায় ফিরেছেন, এবং তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বেশ উৎসাহী।
তিনি সাক্ষাৎকারে জানান যে,
অভিনয় তার প্রাণের জিনিস এবং তিনি যতদিন বেঁচে আছেন, অভিনয় করতে চান। যদিও তার শারীরিক পরিস্থিতি পুরোপুরি আগের মতো নয়, তবুও তার এই প্রত্যাবর্তন তার জেদ এবং সংকল্পের উদাহরণ। এই বয়সেও চন্ডীদাস কুমার নতুন কাজ নিয়ে অনুপ্রাণিত, এবং তার কাজের প্রতি আগ্রহ আগের মতোই অটুট। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, এই বার্তা শুধুমাত্র তার নিজের জন্য নয়, বরং সকলের জন্য একটি প্রেরণা হতে পারে—যে কোনও বিপদের মোকাবিলা করে নতুন করে জীবন শুরু করা যায়।
চন্ডীদাস কুমার তার নতুন কাজের প্রস্তাবে ফিরে আসা প্রসঙ্গে বলেছেন,
“আমি আবারও আমার প্রিয় কাজে ফিরতে পারছি, এটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। দর্শকদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ, যারা সবসময় আমাকে ভালবেসেছেন এবং আমার সঙ্গে ছিলেন।” তার এই প্রত্যাবর্তন অনেক তরুণ অভিনেতা-অভিনেত্রীদের জন্যও অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। একজন অভিনেতার জন্য, তার কাজ শুধুমাত্র রুটি-রুজির উপায় নয়, বরং এটি তার সত্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। চন্ডীদাস কুমার এই সত্যটি আরও একবার প্রমাণ করেছেন।
আসন্ন ছবিতে তার সহ-অভিনেত্রী উষসী রায় এবং সুখপাধ্যায়কেও দেখা যাবে। তারা একসঙ্গে অনেকদিন পর কাজ করতে চলেছেন। উষসী রায় এবং চন্ডীদাস কুমারের কেমিস্ট্রি নিয়ে দর্শকদের প্রত্যাশা অনেক বেশি। এমন একটি সময়ে, যখন বাংলা সিনেমা এবং টেলিভিশন ধারাবাহিকের জগতে নতুন গল্প এবং নতুন চরিত্রের সন্ধান চলছে, চন্ডীদাস কুমারের মত অভিজ্ঞ অভিনেতার প্রত্যাবর্তন বাংলা বিনোদন জগতে নতুন মাত্রা যোগ করবে।
এই প্রেক্ষাপটে, চন্ডীদাস কুমার তার জীবনের এক নতুন অধ্যায় শুরু করছেন। তার ক্যান্সার থেকে পুনরুদ্ধার এবং অভিনয়ে ফিরে আসার এই যাত্রা তাকে আরও দৃঢ় করে তুলেছে। এটি প্রমাণ করে যে, জীবনের যেকোনো কঠিন পরিস্থিতি থেকেও মনোবল নিয়ে ফিরে আসা সম্ভব। তার এই জেদ এবং আত্মবিশ্বাসের গল্প বাংলা সিনেমার ইতিহাসে এক উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে চিরকাল থেকে যাবে।