১৯৯৭ সালে রাজস্থানের যোধপুরে কৃষ্ণসার হরিণ শিকারের ঘটনায় সলমন খান একটি বিতর্কের কেন্দ্রে চলে আসেন। শিকার আইন অনুযায়ী এটি অপরাধ ছিল, এবং এর জন্য সলমনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। বিষ্ণোই সম্প্রদায়, যারা কৃষ্ণসার হরিণকে ধর্মীয়ভাবে পবিত্র বলে মনে করেন, তারা এই ঘটনার পর থেকেই সলমন খানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। এই সম্প্রদায়ের সদস্যরা প্রকৃতির এবং পশুদের সংরক্ষণে নিজেদেরকে নিবেদিত করে থাকেন, এবং কৃষ্ণসারকে তাঁরা দেবতুল্য মনে করেন। তাই এই ঘটনার পর সলমন খান তাঁদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছেন বলে মনে করেন তাঁরা।
সলমন খানের বিরুদ্ধে কেন এই মন্তব্য?
সাম্প্রতিক সময়ে, কৃষক আন্দোলনের নেতা রাকেশ টিকাইত সলমন খানের এই বিরোধ নিয়ে মন্তব্য করেন। টিকাইতের মতে, সলমন খানের উচিত অবিলম্বে মন্দিরে গিয়ে বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া। তিনি মনে করেন, সলমনের যদি ক্ষমা না চান, তাহলে ভবিষ্যতে তাঁর জীবনের ঝুঁকি বাড়তে পারে। রাকেশ টিকাইত বলেছেন, “সলমনের উচিত অবিলম্বে মন্দিরে গিয়ে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া। না হলে কারাবাসে থাকা অবস্থায়ই কোনও দিন সলমনের মেরেই ফেলবে।” তাঁর এই বক্তব্য বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, বিশেষ করে সলমন খানের অনুরাগী এবং পরিবারের মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
লরেন্স বিষ্ণোই, যিনি এই সম্প্রদায়ের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত, সলমন খানের প্রতি তাঁর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং একাধিকবার সলমনকে হুমকি দিয়েছেন। লরেন্স বিষ্ণোই মতে, সলমন খান বিশ্নোই সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছেন এবং এজন্য তাকে শাস্তি পেতে হবে। তিনি বলেছেন যে, সলমন যদি ক্ষমা না চান, তবে তাঁর এবং তাঁর পরিবারের জন্য বিপদের আশঙ্কা বাড়তে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি ঘটনা হল প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা বাবা সিদ্দিকির হত্যাকাণ্ড। সলমনের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার কারণেই তাঁকে হত্যা করা হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। এই ঘটনার পর সলমনের নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে, এবং তাঁকে সুরক্ষিত রাখার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বাড়তি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
তবে সলমন খান এত সহজে দমে যাওয়ার মানুষ নন। হুমকির মুখেও তিনি তাঁর কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বর্তমানে জনপ্রিয় রিয়্যালিটি শো ‘বিগ বস ১৮’র সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া রোহিত শেট্টির আসন্ন ছবি ‘সিংহম এগেইন’-এ একটি ক্যামিও চরিত্রেও তিনি অভিনয় করেছেন। এ ছাড়াও, নিজের আসন্ন ছবি ‘সিকন্দর’-এর কাজও করছেন সলমন। এসব প্রকল্পে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে নিয়োজিত রেখেছেন তিনি, এবং হুমকি বা ঝুঁকি তাঁকে তাঁর কাজ থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি।
বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের সঙ্গে সলমনের বিরোধ এবং লরেন্স বিষ্ণোই হুমকি নিয়ে বলিউডে এবং মিডিয়ায় আলোচনার ঝড় উঠেছে। সলমনের অনুরাগীরা তাঁর নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন এবং তাঁকে পরামর্শ দিচ্ছেন যেন তিনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তবে রাকেশ টিকাইতের মতো অনেকেই মনে করছেন, সলমন যদি প্রকাশ্যে ক্ষমা চান, তাহলে পরিস্থিতি কিছুটা হলেও শান্ত হতে পারে। কিন্তু সলমন এখন পর্যন্ত কোনও প্রকাশ্য ক্ষমা প্রার্থনা করেননি।
ভবিষ্যতে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন?
এই বিতর্কিত পরিস্থিতি সলমন খানের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি কীভাবে এই ঝুঁকি সামাল দেবেন , তা এখন দেখার বিষয়। সলমনের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশাসনও সতর্ক রয়েছে, কিন্তু লরেন্স বিষ্ণোই হুমকি এবং সম্প্রদায়ের অনুভূতির কারণে বিষয়টি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।