তিলোত্তমার বিচারের আশায় গোটা বাংলা। প্রায় দু’মাসের বেশি সময় ধরে উত্তাল শহর কলকাতা। বিচারের পথ চেয়ে আছেন সাধারণ মানুষ থেকে টলিউড সেলিব্রিটি সকলেই। ডাক্তারদের সঙ্গে আন্দোলন করতে দেখা গেছে টলিপাড়ার বহু পরিচিত মুখকে।
তিলোত্তমা কান্ডে একদম শুরু থেকেই পথে নেমেছেন পরিচালক ও অভিনেত্রী চৈতি ঘোষাল। মুখ্যমন্ত্রী উৎসবে ফিরতে বলার পর আন্দোলন আরও জোরদার হয়েছে। অনশনে বসেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা।আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন সাধারণ মানুষও। জুনিয়র ডাক্তারদের সমর্থনে একদিনের প্রতীকী অনশনে বসেছেন টলি তারকারা। যারা সরাসরি আন্দোলনে অংশ নিতে পারছেন না তাঁরা সমাজমাদ্যমে আন্দোলনকারীদের নিয়মিত সমর্থন জানিয়ে চলেছেন। পরিচালক ও অভিনেতা তথাগত বন্দোপাধ্যায়, অনশনকারী পরিচালক-অভিনেতাদের কুর্নিশ জানিয়েছেন সমাজমাধ্যমে। নিজের সহকর্মীদের বন্ধু হিসেবে চেনেন ঠিকই তবে এবার তাঁদের মেরুদণ্ডী মানুষ হিসেবে চিনছেন অভিনেতা। এ তাঁর কাছে বড় প্রাপ্তি।
কি বললেন চৈতি ঘোষাল?
আরজি কর কান্ড ঘিরে তাই ২৪ ঘণ্টার প্রতীকী অনশনে বসেছিলেন অভিনেত্রী চৈতি ঘোষাল। অনশন থেকে উঠে সংবাদমাধ্যমের কাছে নিজের অভিজ্ঞতা জানান চৈতি। তাঁর গলায় চোখে মুখে ছিলো ক্লান্তির ছাপ। তবুও মনে আশা রেখেছেন এবারে যদি মুখ্যমন্ত্রী আন্দোলনে সাড়া দেন। তিলোত্তমার বিচার চেয়ে এই আন্দোলন যদি সফল হয়।
চৈতি বলেন, একদিন না খেয়ে থেকেই তিনি অনুভব করছেন জুনিয়র ডাক্তাররা ঠিক কি অসাধ্য সাধন করছেন। কারণ তাঁরা গত ১৫ দিন ধরে টানা অনশন করছেন। নিজের সহকর্মী ও সাধারণ মানুষদের থেকে সমর্থন পেয়েও আনন্দিত অভিনেত্রী চৈতি ঘোষাল। তথাগতর বার্তা তিনি এখনো দেখেন নি। সমাজমাধ্যম দেখার সময় হয়ে ওঠেনি তাঁর। তবে সাংবাদিকের মুখে বন্ধুর দেওয়া বার্তা শুনে ভালো লাগছে বলে জানান। চৈতি বলেন, অনেক সাধারণ মানুষ অনশন মঞ্চে আসছেন অনশনকারীদের মনোবল বাড়াতে। অনেকে ডাক্তারদের সঙ্গে তাঁদের সুস্থ শরীর কামনায়ও পুজো দিয়েছেন। তাঁরা যেন দুর্বল হয়ে না পড়েন সেজন্য তাঁদের কপালে ফুল ছুইয়েছেন। এই মানুষদের সন্মান চৈতির কাছে অনন্য বলে জানান তিনি।
চৈতি ঘোষাল প্রতীকী অনশন মঞ্চে ডাক্তারদের সঙ্গী হয়েছিলেন। তাঁরা গত ১৫ দিন অনশনে রয়েছেন। চৈতি তাঁদের কষ্ট ভিতর থেকে অনুভব করেছেন। তিনি বলেন ডাক্তাররা হয়তো শারীরিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। তবে তাঁদের মনের জোর অনেক। তাঁরা একজনও একফোঁটা নুন-চিনির জলও খাচ্ছেন না। তাঁদের এই পদক্ষেপ সত্যিই কুর্নিশ করার মতো। তাই এতো কিছুর পর অভিনেত্রীর প্রত্যাশা, এই প্রতিবাদ বিফলে যাবে না।
ব্যক্তিগত জীবনে চৈতির অভিজ্ঞতা
তিলোত্তমা কাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই আন্দোলনে ছিলেন অভিনেত্রী চৈতি ঘোষাল। শুরুতে প্রতিবাদী মিছিলে হেঁটেছেন। এরআগে সমাজমাধ্যমের এক সাক্ষাৎকারে নিজের সুরক্ষার বিষয়ে বলেছিলেন, মেয়েদের না বলতে শিখতে হবে। তিনি না বলতে জানেন তাই কুপ্রস্তাব এড়িয়ে যেতে পেরেছেন। অনেক পরিচালকই কুপ্রস্তাব নিয়ে তাঁর কেরিয়ারে সমস্যা তৈরি করতে চেয়েছেন, তবে তাঁরা সফল হন নি।
অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত পরিবার থেকে আসার পরেও, এসবের সম্মুখীন হতে হয়েছে তাঁকে। তাঁর বাবা পরিচালক ও অভিনেতা শ্যামল ঘোষাল। পাঁচ ভাই বোনের এক জন মিতালি ঘোষাল। ছেলে অমর্ত্য রায়ও অভিনয়ের সাথে জড়িত।
এতদিন বাইরে থেকে অনশনরত ডাক্তারদের সমর্থন করেছেন চৈতি ঘোষাল। এবার নিজেও সেই দলে ভিড়লেন। গত শনিবার প্রতীকী অনশনে বসেছিলেন পরিচালক বিরসা দাশগুপ্ত, বিদীপ্তা চক্রবর্তী, সৌম বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবলীনা দত্ত, প্রান্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়, তনিকা বসুর মতো অনেক টলি তারকা।
প্রতিবেদন : প্রিয়াংকা সরকার