অভিষেক বচ্চন এবং ঐশ্বর্যা রাই বচ্চনের সম্পর্কের উত্থান-পতনের গল্প বলিউডের দুনিয়ায় অনেকটাই আলোচিত। তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে জল্পনা যেমন নতুন নয়, তেমনি তাঁদের শক্তিশালী বন্ধনের উদাহরণও ভক্তদের কাছে অনুপ্রেরণাদায়ক। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে তাঁদের দাম্পত্য জীবনে ফাটলের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, তবে অতীতে তারা একে অপরের জন্য যথেষ্ট শক্তির উৎস ছিলেন। অভিষেক বারবার স্বীকার করেছেন যে, তাঁর জীবনের কঠিন সময়গুলোতে ঐশ্বর্যার পরামর্শই তাঁকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করেছে।
অভিষেকের অভিনয় জীবনে এমন কিছু সময় এসেছে যখন তিনি সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছেন। অভিষেক নিজের ক্যারিয়ারে যেমন প্রশংসা পেয়েছেন, তেমনই ব্যর্থতাও দেখেছেন। বিশেষ করে, তাঁর সিনেমাগুলো যখন বক্স অফিসে আশানুরূপ সাফল্য পায়নি, তখন ব্যক্তিগত আক্রমণের শিকার হয়েছেন তিনি। এ ধরনের পরিস্থিতিতে, স্ত্রী ঐশ্বর্যা তাঁকে নিজের আত্মবিশ্বাস বজায় রাখতে সাহায্য করেছিলেন। এক সাক্ষাৎকারে অভিষেক জানিয়েছিলেন, ঐশ্বর্যা তাঁকে বলেছিলেন, “দশ হাজার মানুষ তোমার প্রশংসা করবে, কিন্তু একটি নেতিবাচক মন্তব্য তোমার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।” এই পরামর্শ তাঁর মনে গভীরভাবে প্রভাব ফেলেছিল। ঐশ্বর্যার কথা মেনে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সমালোচনা থেকে দূরে থেকে নিজের কাজে মনোযোগী হবেন এবং ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখবেন।
ঐশ্বর্যার আরেকটি পরামর্শ ছিল অভিষেকের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া। তিনি বলেছিলেন, “ব্যর্থতা তোমার সঙ্গে মানিয়ে নেবে। তোমাকে ব্যর্থতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে না।” এই কথাটি অভিষেকের মধ্যে গভীরভাবে প্রভাব ফেলেছিল এবং তিনি সেই সময় থেকেই ব্যর্থতাকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখতে শিখেছিলেন। তিনি বুঝেছিলেন যে, প্রত্যেক ব্যর্থতা থেকেই শিক্ষা নেওয়া যায় এবং এগিয়ে যাওয়ার শক্তি পাওয়া যায়। এর ফলে, অভিষেক নিজের জীবনের ব্যর্থতাকে কাটিয়ে উঠে আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছিলেন।
তাঁদের দীর্ঘ ১৭ বছরের দাম্পত্য জীবন ২০০৭ সালে শুরু হয়, যখন তাঁরা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ২০১১ সালে তাঁদের একমাত্র কন্যা আরাধ্যা বচ্চনের জন্ম হয়। তখন থেকেই অভিষেক ও ঐশ্বর্যার জীবন যেন পূর্ণতা পায়। অভিষেক এবং ঐশ্বর্যার অনেক ইন্টারভিউ ও ছবি প্রকাশ্যে এসেছে যেখানে তাঁদের সুখী সংসারের প্রতিচ্ছবি দেখা গেছে। এমনকি একে অপরের প্রতি ভালোবাসা এবং সম্মান প্রকাশ করতে তাঁরা কখনোই দ্বিধা করেননি।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তাঁদের সম্পর্কের মধ্যে দূরত্বের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, যা বি-টাউনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। শোনা যাচ্ছে, দাম্পত্য জীবনের নানা সমস্যার কারণে তাঁরা এখন আর একসঙ্গে থাকছেন না। এমনকি, বিভিন্ন সূত্রে দাবি করা হচ্ছে যে, অভিষেকের অভিনেত্রী নিমরত কৌরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তাঁদের দাম্পত্য জীবনে দূরত্বের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও এই সব তথ্যের সত্যতা এখনও প্রমাণিত নয় এবং অভিষেক বা ঐশ্বর্যার পক্ষ থেকে সরাসরি কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
এই পরিস্থিতিতে, ভক্তরা তাঁদের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাঁদের মধ্যে যারা এই জুটির প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা পোষণ করেন, তাঁরা আশা করছেন, অভিষেক এবং ঐশ্বর্যা তাঁদের সমস্যাগুলো সমাধান করে আবার একসঙ্গে সুখী জীবন যাপন করবেন। একদিকে যেমন তাঁদের সম্পর্কের মধ্যে কিছু সমস্যা রয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে, তেমনি অন্যদিকে তাঁদের ভালোবাসা এবং একে অপরকে সমর্থন করার ক্ষমতাও অতীতে প্রমাণিত হয়েছে।
অভিষেক-ঐশ্বর্যার দাম্পত্য জীবনের এই ওঠা-নামা বলিউডের চিরন্তন আলোচনার অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই মনে করেন, তারা যে ভালোবাসা এবং সমর্থনের ভিত্তিতে নিজেদের সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন, সেই বন্ধন তাঁদের আবারও একত্রিত করবে। তাঁরা যেমন একে অপরের প্রতি ভালোবাসা ও সম্মানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তেমনি কঠিন সময়েও পাশে থেকে একে অপরকে শক্তি জুগিয়েছেন। তাই তাঁদের সম্পর্কের এই নতুন অধ্যায় কীভাবে মোড় নেবে, সেটা সময়ই বলবে।