শ্রেয়া ঘোষালের ‘নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামের’ কনসার্টটি ১৯ অক্টোবর ছিল একটি বিশেষ সন্ধ্যা, যা কলকাতার সঙ্গীতপ্রেমীদের মনে চিরকাল অমলিন হয়ে থাকবে। আরজি কর মেডিকেল কলেজে ঘটে যাওয়া দুঃখজনক ঘটনার প্রতিবাদে শ্রেয়ার এই কনসার্ট ছিল এক অবিস্মরণীয় উদ্যোগ। যেখানে অন্যান্য অনেক শিল্পী পরিস্থিতির প্রতিক্রিয়ায় কনসার্ট বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেখানে শ্রেয়া তার সঙ্গীতের মাধ্যমে প্রতিবাদের নতুন ধারা তৈরি করেছেন।
শ্রেয়ার কনসার্টের এই সন্ধ্যা ছিল তার ভক্তদের জন্য বিশেষ কিছু। প্রতিবারের মতো স্টেডিয়াম কানায় কানায় পূর্ণ ছিল শ্রোতাদের দিয়ে, যারা শ্রেয়ার কণ্ঠে সুরের জাদু শুনতে এসেছিলেন। সাধারণত, তিনি তার কনসার্টের শেষ গান হিসেবে ‘মেরে ঢোলনা’ পরিবেশন করেন, যা তার ভক্তদের কাছেও খুব জনপ্রিয়। তবে এবার তিনি ভিন্ন পথে হাঁটলেন। ‘মেরে ঢোলনা’ পরিবেশনের পর, শ্রেয়া মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে দর্শকদের অনুরোধ করলেন যেন তারা পরবর্তী গানের সময় হাততালি না দেন এবং শুধুমাত্র গানটি শুনেন। এই বক্তব্যের মধ্যেই ছিল একটি গভীর বার্তা, যা প্রতিকূল পরিস্থিতির প্রতিবাদে তার সংবেদনশীলতা এবং সঙ্গীতের মাধ্যমে সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধকে ফুটিয়ে তুলেছে।
তার এই কথার পর স্টেডিয়ামে নিস্তব্ধতা নেমে আসে। এরপর তিনি একটি সুরেলা কিন্তু প্রতিবাদী গান গেয়ে যান, যা শ্রোতাদের মন ছুঁয়ে যায়। কনসার্টের শেষে কোনো বক্তব্য না দিয়ে শ্রেয়া মঞ্চ ত্যাগ করেন। তার এই পদক্ষেপ সোশ্যাল মিডিয়ায় রাতারাতি ভাইরাল হয়ে যায়। মধ্যরাত থেকেই তার গাওয়া গানের ভিডিও এবং তার বক্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যা নিয়ে শুরু হয় চর্চা ও আলোচনা।
অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তার সাহসী উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। একজন নেটিজেন লিখেছেন, “এমন প্রতিবাদের নজির আগে কখনও দেখেনি শহর কলকাতা। তিলোত্তমার বুকে প্রতিবাদের স্বরকে তীব্রতর হতে দেখলাম আজ। বেঁচে থাক শ্রেয়া আর ওঁর সঙ্গীত সাধনা।” এমন অভিনব প্রতিবাদকে অনেকেই প্রশংসার দৃষ্টিতে দেখছেন এবং এটি আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। অন্যদিকে, কেউ কেউ এই উদ্যোগের মাধ্যমে অরিজিৎ সিংয়ের কিছুদিন আগের একটি ঘটনা নিয়ে তুলনা করেছেন। সেখানে তিনি কনসার্টে একটি বিশেষ গান গাওয়ার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, যা শ্রেয়ার এই পদক্ষেপকে তুলনার মাধ্যমে নতুন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে।
এই কনসার্ট এবং তার প্রতিবাদ শুধু একটি সাধারণ ঘটনা নয়, বরং সমাজের জন্য এক নতুন বার্তা বহন করছে। বর্তমান সময়ে যেখানে অনেকেই প্রতিবাদের ভয়ে পিছিয়ে যাচ্ছেন, সেখানে শ্রেয়ার মতো একজন জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী তার কণ্ঠের মাধ্যমে অসহায়ের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। তার এই পদক্ষেপ প্রমাণ করে যে সঙ্গীত শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, এটি সমাজের প্রতিফলনও হতে পারে এবং সমাজের ভেতরকার অসাম্য, অবিচার, এবং কষ্টের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার মাধ্যমও হতে পারে।
এই ঘটনাটি কলকাতার সাংস্কৃতিক অঙ্গনে একটি স্মরণীয় মাইলফলক হয়ে থাকবে। শ্রেয়া ঘোষালের সাহসিকতা এবং তার শিল্পীসত্তার এভাবে প্রকাশের মাধ্যমে তিনি সমাজের সামনে একটি উদাহরণ স্থাপন করেছেন। এই কনসার্ট শুধু তার ভক্তদের নয়, সমগ্র বাংলার মানুষের হৃদয়ে এক গভীর দাগ কেটে গেছে। তার এই উদ্যোগ প্রমাণ করে যে একজন শিল্পী শুধু সুর দিয়ে নয়, তার সংবেদনশীলতার মাধ্যমেও মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিতে পারেন।
Rani dey
October 20, 2024❤️❤️