ঐশ্বর্য রাই বচ্চনের অন্তঃসত্ত্বার খবরটি যেমন সংবাদমাধ্যমে শোরগোল ফেলে, তেমনই এই ঘটনা বলিউডের অন্দরমহলেও যথেষ্ট আলোচনার জন্ম দেয়। মধুর ভান্ডারকরের পরিচালনায় “হিরোইন” ছবিটি নিয়ে যখন কাজ শুরু হয়েছিল, তখন ঐশ্বর্যের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে ছিল। তবে, তার ব্যক্তিগত জীবন সবসময়ই জনসমক্ষে। বিবাহিত জীবনের প্রথম দিকে ঐশ্বর্য এই ছবিতে অভিনয় করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, কিন্তু হঠাৎ করে এই খবর সামনে এলে পুরো পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়ে যায়।
কেন এমন সিদ্ধান্ত?
মধুর ভান্ডারকরের জন্য এই সময়টি খুবই কঠিন ছিল। তিনি ছবির প্রস্তুতি এবং কলাকুশলীদের সাথে একত্রে কাজ করছেন, কিন্তু ঐশ্বর্যের অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবর প্রকাশ্যে আসলে তার পরিকল্পনাগুলি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ভান্ডারকর তখন তার টিমের সদস্যদের মুখোমুখি হতে সাহস পাচ্ছিলেন না। তিনি বুঝতে পারছিলেন যে, এত মানুষ যাদের রোজগার এই প্রকল্পের উপর নির্ভর করে, তাদের জন্য এটি একটি বিপর্যয়।
অমিতাভ বচ্চন, যিনি ঐশ্বর্যের স্বামী এবং তার পিতৃস্বরূপ, তিনি সংবাদে ঐশ্বর্যের পাশে দাঁড়ান। তিনি বলেন, “অভিনেত্রীদের সন্তান নেওয়ার অধিকার রয়েছে, এবং এটি কোনো চুক্তির অংশ হতে পারে না।” তিনি উল্লেখ করেন, ঐশ্বর্য বিবাহিত ছিলেন এবং সেই অবস্থায় তিনি কাজের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন। এই মন্তব্যগুলি একদিকে অমিতাভের সমর্থনকে তুলে ধরলেও, অন্যদিকে পুরো পরিস্থিতির অন্য এক দিক উন্মোচন করে।
বলিউডে ঐশ্বর্য রাইয়ের প্রতীকী অবস্থান স্পষ্ট। তিনি শুধু একজন অভিনেত্রী নন, বরং একজন আইকন, যিনি নারীশক্তির প্রতীক হিসেবেও বিবেচিত হন। এমন একজন শিল্পীর ব্যক্তিগত জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা কিভাবে পেশাগত জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত তা বোঝার জন্য সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি গুরুত্বপূর্ণ। ঐশ্বর্য যখন সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তখন সেটি সামাজিক ধারণার বিরুদ্ধে যায়, যেখানে বলা হয় যে, নারীকে কর্মজীবনে অগ্রসর হতে হলে পরিবারে কোনও স্থিতিশীলতা থাকতে হবে।
এটি একটি বিতর্কিত প্রশ্ন, বিশেষ করে চলচ্চিত্রের জগতে, যেখানে একজন অভিনেত্রীর কর্মজীবন প্রায়শই তার ব্যক্তিগত জীবন দ্বারা প্রভাবিত হয়। অভিনেত্রীরা যখন সন্তান জন্ম দেন, তখন তাদের ক্যারিয়ারের উপর এর প্রভাব পড়তে পারে। এই পরিস্থিতিতে, অনেকেই প্রশ্ন করতে শুরু করেন, “অভিনেত্রীদের কি সন্তান নেওয়ার অধিকার নেই?” এই প্রশ্নগুলি আমাদের সমাজের পুরাতন ধারণাগুলির প্রতিবিম্ব।
মধুর ভান্ডারকর, যিনি নিজেই একটি প্রতিভাবান পরিচালক, এই অবস্থায় মনে করেন, এই খবর তার কাজের জন্য বড় ধাক্কা। তিনি তার সিনেমার গল্প এবং প্লটের জন্য বিশেষভাবে ঐশ্বর্যের উপস্থিতি পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে সমস্ত পরিকল্পনা ভেঙে পড়ে। পরবর্তীতে তিনি ছবিতে করিনা কাপুরকে নিয়োগ দেন, যিনি ঐশ্বর্যের পরিবর্ত হিসেবে অভিনয় করেন।
পেশাগত জীবনে তাঁর কি প্রভাব পড়েছিল?
এটি খুবই দুঃখজনক যে, অনেক সময় একজন অভিনেত্রীর পেশাগত জীবনের উপর তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত প্রভাব ফেলে। ঐশ্বর্যের মতো একজন প্রতিভাবান শিল্পীর জন্য এটি সত্যিই একটি দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি। এরপর থেকে চলচ্চিত্র শিল্পের মধ্যে আরও আলোচনা শুরু হয়, যেখানে নারী অভিনেত্রীদের পেশাগত এবং ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়।
অবশ্যই, ঐশ্বর্য রাই বচ্চন এই সংকটের মধ্য দিয়ে বের হয়ে এসেছেন এবং তার ক্যারিয়ারের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন। আজ তিনি শুধু একজন সফল অভিনেত্রী নন, বরং একজন প্রতিভাবান মা, যার জীবন এবং কাজের মধ্যে সমন্বয় রক্ষা করেছেন। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, একটি নারীর সাফল্য তার ক্ষমতার উপর নির্ভর করে এবং সমাজের পুরাতন ধারণাগুলিকে ভেঙে দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সাহসও প্রয়োজন।