Celeb Lifestyle Tollywood

উত্তম কুমারের ঘটে দেবী দর্শন! জেনে নিন মহানায়কের বাড়ির লক্ষ্মী পুজোর অজানা গল্প

কথাতেই আছে দুর্গা পুজো আসছে আসছে এটাই ভালো লাগে , সত্যিই তাই একবার পুজো চলে এলে কখন যে চোখের নিমেষে পুজো শেষ হয়ে যায় সেটা বোঝা যায়না। ঠিক একইভাবে ২০২৪ সাল অর্থাৎ চলতি বছরের পুজোও শেষ হয়ে গিয়েছে চোখের পলকে। মা দুর্গা ১০ দিনের জন্য নিজের সন্তানদের নিয়ে এসেছিলেন বাপের বাড়ি সেই পালা চুকিয়ে ইতিমধ্যেই তিনি যাত্রা করেছেন কৈলাশের উদ্দেশ্যে। আবারো একটা গোটা বছরের অপেক্ষা। তবে মন খারাপ একদম করা যাবে না, এখনো বাকি অনেক উৎসব। সামনেই আসছে কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো। মা লক্ষীর পুজো মানেই হরেক রকম নাড়ু খাওয়া। লক্ষ্মী পুজোর কথা যখন বলছি তখন স্বয়ং মহানায়কের বাড়ির লক্ষ্মী পুজোর কথা ভুলে যাই কী করে? উত্তম কুমারের যুগ থেকে চলে আসা সেই লক্ষ্মী পুজো আজও নিষ্ঠা এবং ভক্তির সঙ্গে পালন করে চলেছেন মহানায়কের নাতি-নাতনিরা।

নায়কের বাড়ির এই পুজো নিয়ে রয়েছে নানান কাহিনী

উত্তম কুমারের বাড়িতে যে লক্ষ্মীর মূর্তি পুজো করা হয় তার মুখের গড়ন কারোর কাছে অজানা নয়! এবার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে হঠাৎ কেন এমনটা বলছি। এর অন্যতম কারণ হলো মহানায়কের বাড়িতে যে লক্ষী প্রতিমা পূজিত হন তার মুখের আদল অনেকটা নাকি উত্তম পত্নী গৌরী দেবীর মত। কথাটা শুনে একটু আশ্চর্য লাগছে না? এমনটা হওয়ার পেছনে রয়েছে এক মজাদার গল্প। জানা গিয়েছে, ‘যদুভট্ট’ ছবির শ্যুটিং চলাকালীন সেই ছবির জন্য প্রতিমা গড়েছিলেন শিল্পী নিরঞ্জন পাল। সেই ছবির শ্যুটিং ফ্লোরের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় নিরঞ্জন পালের মূর্তি বানানোর দৃশ্য চোখে পড়ে উত্তম কুমারের। এরপর নিরঞ্জন পালকে ডেকে তিনি নিজের বাড়ির লক্ষ্মী প্রতিমা বানানোর জন্য বায়না দেন। শিল্পী নিরঞ্জন পাল যখন পৌঁছন উত্তম কুমারের বাড়িতে তখন দেখেন উনার স্ত্রী গৌরী দেবী ঘর মুছতে ব্যস্ত, ওই সময় নিরঞ্জন পালকে ঘোমটার আড়াল থেকে এক ঝলক দেখে তাকে বসার জন্য অনুরোধ করেন। ওই এক ঝলক দেখাতেই গৌরী দেবীর মুখ মনে রেখেছিলেন নিরঞ্জন পাল। গৃহকর্ত্রীর মুখের আদলেই তৈরি করেছিলেন মা লক্ষ্মীর প্রতিমা। মনে করা হয় সেই গৌরী দেবীর মুখের ছাপ আজও বর্তমান মা লক্ষ্মীর মুখে।

মহানায়ক নিজের ইচ্ছেতেই তাঁর বাড়িতে শুরু করেছিলেন কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো। তবে সেই ইচ্ছে জেগে ছিল ছবি বিশ্বাসের বাড়িতে হওয়া লক্ষ্মী পুজোকে দেখে। মহানায়ক তাঁর সময় একেবারে নির্জলা উপোস থেকে তবেই বসতেন পুজোর আসনে। তাঁর আমল থেকে মায়ের মূর্তির সামনে বসানো হয় একটি রুপোর ঘট। উত্তম কুমারের স্ত্রী গৌরী দেবী, নিজের গয়নায় সাজিয়ে তুলতেন মা লক্ষ্মীকে। কিন্তু বর্তমানে কুমোরের বাড়ি থেকে মাটির গয়নায় সেজে আসেন মা লক্ষ্মী। তবে নিরঞ্জন পাল না থাকলেও তাঁর ভাইপো জয়ন্ত পালের হাতে গড়ে ওঠেন মহানায়কের বাড়ির লক্ষ্মী প্রতিমা। কুমোরটুলি থেকে আসা লক্ষ্মী প্রতিমাকে পড়ানো হয় লাল পাড় সাদা শাড়ি।

মা লক্ষ্মীর ভোগ প্রসঙ্গে

মা লক্ষ্মীর ভোগ রান্নার ক্ষেত্রেও রয়েছে বিশেষ নিয়ম। মায়ের ভোগ রান্না শুধুমাত্র করতে পারেন দীক্ষিত পরিবারের মেয়ে- বউরা। মা লক্ষ্মীর জন্য রান্না করা ভোগের তালিকায় থাকে, পোলাও, লুচি, ছোলার ডাল, পাঁচরকম ভাজা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, পায়েস। মহানায়কের আমলে ভিয়েন বসিয়ে বানানো হতো গজা, পান্তুয়া। সেই সময় নাকি পাড়াপড়শিদের কাছে বিতরণ করা হতো শয়ে শয়ে পান্তুয়া। লক্ষ্মী পুজোর পর চলচ্চিত্র জগতের নামী প্রযোজক থেকে শুরু করে পরিচালক অনেকেই মা লক্ষ্মীর ভোগ গ্রহণ করতে আসতেন উত্তম কুমারের বাড়িতে। এমনকি ভীড় হতো সাধারন মানুষেরও, সকলকে পেট ভরে খাইয়ে অতিথি সেবা করে তবেই নিজে খেতে বসতেন মহানায়ক।

অন্য গল্প

কিন্তু কেন মহানায়ক নিজের বাড়িতে শুরু করেছিলেন লক্ষ্মী পুজো সেই নিয়ে রয়েছে আরও এক কাহিনী। সম্পর্কে উত্তম কুমারের ভাইঝি রত্না দেবী স্বয়ং এক জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শুনিয়েছিলেন সেই গল্প। রত্না দেবী নিজের মায়ের মুখে শুনেছিলেন উত্তম কুমারের নাকি দেবী দর্শন হয়েছিল। তিনি একদিন দুপুরবেলা ছাদে গিয়েছিলেন, সময়টা তখন ছিল পুজোর মাত্র কিছুদিন আগের। সেই সময় মহানায়ক দেখেছিলেন ছাদে পা ঝুলিয়ে বসে আছে একটি ছোট্ট বাচ্চা মেয়ে। ওই সময় নায়কের বাড়িতে বলতে শুধুমাত্র তাঁর ভাইজি রত্না। তিনি ভেবেছিলেন সেই হয়তো বসে আছে ছাদে। নীচে নেমে নিজের বৌদিকে বলেছিলেন ‘ মাঈ’ বসে রয়েছে ছাদে। আর রত্না দেবী ভালবেসে নিজের কাকা উত্তম কুমারকে ডাকতেন ভালো কাকু বলে। সেই কথার উত্তরে রত্না দেবীর মা জবাব দিয়েছিলেন তাঁর মেয়ে তো ঘুমোচ্ছে। সেই কথা শুনে ভীষণই অবাক হয়েছিলেন মহানায়ক। প্রসঙ্গত নিজের ভাইঝি রত্নাকে আদর করে ডাকতেন ‘ মাঈ’।

এই ঘটনা ঘটার পর থেকে নাকি মহানায়কের বাড়ির ছাদে প্রায়ই এসে বসত লক্ষ্মীপেঁচা এরপর থেকে নাকি মহা নায়কের খ্যাতি বেড়েছিল কয়েকগুণ। তারপর থেকেই নিজের বাড়িতে মূর্তি এনে লক্ষ্মী পুজো শুরু করেন অভিনেতা। এসব ছাড়াও পুজোর দিনটা আরেকটু অন্যরকম ভাবে উদযাপন করতেন উত্তম কুমার। ছোট বাচ্চাদের স্ক্রিন টাঙিয়ে নিজের দুটো ছবি দেখাতেন তিনি। উত্তম কুমারের কোনও গান অথবা দৃশ্য স্ক্রিনে শুরু হলেই সকলে ‘ গুরু গুরু ‘ বলে চিৎকার করে উঠতেন একসঙ্গে। এমনকি স্বয়ং নায়কের পরিবারের সদস্যরাও সামিল হতেন এই আনন্দে। এই ব্যাপার নাকি বেশ উপভোগ করতেন মহানায়ক, মাঝেমধ্যে নাকি হেসেও ফেলতেন তিনি।

উত্তম কুমার আজ না থাকলেও মহানায়কের নাতি এবং নাতনীরা অর্থাৎ গৌরব নবনিতা এবং মৌসুমী তাঁরাই বর্তমানে সামলান পুজোর সমস্ত আয়োজন। আজও নিয়ম মেনে পুজোর আসনে বসেন মহানায়কের নাতি গৌরব। ভোরবেলা গঙ্গা থেকে নিয়ে আসা হয় পুজোর ঘট। হয়তো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আড়ম্বর কমেছে তবে কমেনি ভক্তি এবং শ্রদ্ধা। মহানায়ক উত্তম কুমার নিজের ভবানীপুরের গিরিশ মুখার্জী রোডের বাড়িতে যে লক্ষ্মী পুজো শুরু করেছিলেন, সেই পুজো তাঁর আগামী প্রজন্ম আজও পালন করে চলেছে সমস্ত নিয়ম- নিষ্ঠা মেনে।

Avatar

Indrani

About Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Welcome to Xplorent Media, where every click brings the colourful worlds of Bollywood and Tollywood  to life. 

Our Company

Get Latest Updates and big deals

    Come along and discover the wonders of television, films, and celebrity culture like never before!

    Xplorent Media @2024. All Rights Reserved.