ভালোবাসায় কোনো মানুষ ঠিক কতটা বেপরোয়া হতে পারে সে গল্প আমরা মাঝেমধ্যেই নিজেদের আশেপাশে শুনতে পাই। কখনো প্রেমে পাগল হয়ে মৃত্যুকে স্বীকার আবার কখনো ভালোবাসায় দেশ ত্যাগ। ধর্ম পরিবর্তন করতেও পিছপা হয়না অনেকে। এই ভাবধারা কিন্তু তারকা মহলেও রয়েছে। ভালোবাসার পক্ষে থেকে ধর্ম ছেড়েছেন বহু অভিনেতা অভিনেত্রী। আবার ভালোবাসাই অনেকের জীবনে এনে দিয়েছে সাফল্য। এই তালিকায় বেশ শীর্ষে আছেন বলিউডের অন্যতম পরিচালক ও অভিনেতা ফিরোজ খান। বলিউডের অন্যতম প্রযোজকও তিনি। তাঁর সুদর্শন চেহারা ও অভিনয়ের জন্য বরাবরই মন জিতেছেন ভক্তদের। ফিরোজ খানের চেহারার প্রেমে পড়েনি এমন রমণী দর্শকমহলে নেই বললেই চলে।
কার প্রেমে মজে ছিলেন ফিরোজ খান?
তবে যার প্রেমে পাগল ছিলো একসময়ের যুবতী সমাজ সেই ফিরোজ খান নিজেও কিন্তু মন দিয়েছিলেন এক এয়ারহোস্টেস কে। বলা ভালো প্রেমের জোয়ারে বেশ ভালোই ভেসেছিলেন এই সুদর্শন পরিচালক ও অভিনেতা। ফিরোজ খান মূলত আফগান বংশোদ্ভুত। তিনি বেঙ্গালুরুতে জুলফিকার আলি শাহ খান হিসেবে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মা ছিলেন পারস্য বংশোদ্ভূত এবং তাঁর বাবা ছিলেন আফগানিস্তানের। তাই জন্মসূত্রে তিনি আফগান বংশোদ্ভুত। ফিরোজ খানের ছেলেবেলা কাটে বেঙ্গালুরুতে। তিনি খুব কম বয়সেই মডেলিং করার সিদ্ধান্ত নেন। একটু বড় হয়েই তিনি নিজের আকর্ষণীয় চেহারা সম্পর্কে সচেতন হন এবং বুঝতে পারেন এর মাধ্যমেই তিনি নিজের কেরিয়ার তৈরী করতে পারবেন। এরপর অল্প বয়সে মডেলিং করার সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি বেঙ্গালুরু থেকে মুম্বই চলে যান।
১৯৬৫ সালে ফিরোজ খান ‘আরজু’ চলচ্চিত্রে নিজের আত্মপ্রকাশ করেন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তবে তাঁর ২০ বছরের সংসার ভেঙেছিল। নাহ অভিনয়ের জন্য নয়। এয়ারহোস্টসের প্রেমে পড়েন অভিনেতা। যাঁ তাঁর ২০ বছরের দাম্পত্য জীবন শেষ করে দেয়।এমনিতে ফিরোজ খান তাঁর স্ত্রী ‘সুন্দরী খান’এবং তাঁদের তিন সন্তানের সঙ্গে সুখে বসবাস করছিলেন। এরপর কাজের জন্য তাঁকে ব্যাঙ্গালুরু যেতে হয়। সেই একটি ট্রিপই অভিনেতার জীবনে সবকিছু বদলে দিয়েছিল। কারণ তিনি এয়ার হোস্টেস জ্যোতিকা ধনরাজগীরের প্রেমে পড়েছিলেন। এয়ারহোস্টস জ্যোতিকা ব্যাঙ্গালুরুতে থাকতেন, অভিনেতা ফিরোজ প্রায়শই সেখানে থাকতেন। বেশ ভালোভাবেই এয়ারহোস্টেসের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। তাঁর নতুন সম্পর্ক তাঁর স্ত্রী এবং সন্তানদের কাছ থেকে তিনি গোপন রেখেছিলেন। তবে ফিরোজ জ্যোতিকার সঙ্গে গভীর প্রেমে পড়লেও তাঁকে বিয়ে করেননি তিনি। অভিনেতা তাঁর পরিবারকে রেখে বেশিরভাগ সময় জ্যোতিকার সঙ্গেই থাকতেন। তবে জ্যোতিকা প্রায়ই বিয়ের কথা বলতেন যা একরকম এড়িয়েই যেতেন ফিরোজ। তিনি জ্যোতিকার সঙ্গে থাকতে পছন্দ করলেও তাঁকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেননি কখনো। ফিরোজ চেয়েছিলেন কোনো কিছু কাওকে না জানিয়ে সব একইরকম রাখতে।এ খবর জানতে পেরে ফিরোজের স্ত্রী সুন্দরী বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন। সংবাদমাধ্যমের একটি সাক্ষাৎকারে, তিনি বলেছিলেন যে এই খবরটি গ্রহণ করা তার পক্ষে কতটা কঠিন ছিল, কারণ তার পুরো পৃথিবী ফিরোজকে ঘিরে। এ ঘটনার পর সুন্দরী নিজের মতো বাইরে চলে যান।
জানা গেছে, মানসিক অশান্তির সঙ্গে মানিয়ে নিতে তাঁর প্রায় এক বছর সময় লেগেছিল। ১৯৬৫ সালে ফিরোজ ও সুন্দরী একসঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন ও ১৯৮৫ সালে তাঁদের ডিভোর্স হয়। তাঁর এক ছেলে ফারদিন খান বলিউডে একজন সফল অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।ফিরোজ খান তাঁর সুদর্শন চেহারার জন্য বিখ্যাত হলেও ভালোবাসায় তিনি খুব একটা স্বার্থক হন নি। ধর্মাত্ম, কুরবানি, জানবাজ, মেলা এবং ওয়েলকাম এর মত জনপ্রিয় ভারতীয় চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। যেখানে দর্শক তাঁর অভিনয় পছন্দ করেছিল। ভক্তদের মন জিতেছিলেন সহজেই তিনি। এই সিনেমা গুলোতে তাঁর অসাধারণ অভিনয়ই তাকে বলিউডের একজন উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র তারকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
প্রতিবেদন : প্রিয়াংকা সরকার