প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের বাবা বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায় এক সময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা ছিলেন। এই মুহূর্তে তিনি মুম্বইবাসী। তবে দুর্গা পুজো নিয়ে তাঁর মনে রয়েছে একরাশ স্মৃতি। এর পাশাপাশি দুর্গা পুজোর দিন যতো এগিয়ে আসে ততোই ব্যস্ততা বেড়ে যায় এই অভিনেতার কারণ মুম্বইতে বহু বছর ধরে নিজেই পুজোর আয়োজন করেন অভিনেতা।
তারকার পুজো
তিনি জানান এই বছর তাঁদের জুহুর বাড়ির দুর্গা পুজো পা দিল ২১ বছরে। যেহেতু পুজো একেবারে দোরগোড়ায় তাই চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের কথায় ২০১৯ সাল পর্যন্ত বড় করে দুর্গা পুজোর আয়োজন করতেন তাঁরা। পরবর্তী দু বছর করোনা অতিমারির কারণে নিজের বাড়িতে খুব ছোট করে মা দুর্গার পুজো করেছেন অভিনেতা তবে একেবারে বন্ধ করে দেননি দুর্গ উৎসব। ২০২৩ সাল থেকে কুপার হাসপাতালের বিপরীতে জুহু ক্লাব মিলেনিয়ামে পুজোর আয়োজন শুরু করেছেন বিশ্বজিৎ। তিনি জানান কলকাতা থেকে টিম এসে এবারের পুজোর সমস্ত আয়োজন করেছেন। কলকাতার মৃৎ শিল্পী অমিত পাল শহর থেকে মাটি এনে মুম্বইতে তৈরি করেছেন মায়ের মূর্তি। এর সঙ্গে সঙ্গে ঢাকি এবং পুজোর পুরোহিত সকলেই চলে আসবেন একে একে। পুজোর দিনগুলো অভিনেতার মণ্ডপেই কেটে যায় বলে জানান তিনি নিজেই। বিগত ২০ বছর ধরে মা দুর্গাকে ডাকের সাজে সাজিয়ে তোলা হচ্ছেই বলে জানান তিনি। কিন্তু চলতি বছর একচালার প্রতিমা করা হচ্ছে না। বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের পুজোর সন্ধ্যায় বিভিন্ন সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই বছরের অনুষ্ঠানে চমক থাকছে ‘দুর্গানৃত্য’। এছাড়া আরও এক বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ২০২৪ সাল কিংবদন্তি মহম্মদ রফির জন্মশতবর্ষ। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সপ্তমীর দিন বিশেষ সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। মহম্মদ রফির পরিবারের সদস্যেরাও উপস্থিত থাকবেন সেই বিশেষ অনুষ্ঠানে। তাঁদের সবাইকে সেই অনুষ্ঠানে সম্মান জানানো হবে।
তবে মুম্বইয়ে নিজের পুজো শুরু করার আগে পরিবারের সঙ্গে ঠাকুর দেখতে জেতেন তিনি এমনকি বেড়িয়ে একসঙ্গে খাওয়া দাওয়ায় করতেন তাঁরা। তবে নিজস্ব বাড়ির পুজো শুরু হওয়ার পর থেকে সেইসব কিছু বন্ধ হয়ে যায় বলেই জানান অভিনেতা। বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায় কথায় তাঁর স্ত্রী ইরা ২০০৪ সাল থেকে শুরু করেন এই দুর্গাপুজো। এর কারণ ও কিছুটা অন্যরকম। একসময় অভিনেতার কন্যা সন্তান অসুস্থ হয়েছিলেন আর তার সুস্থতার কামনায় তার স্ত্রী মানসিক করেন। অভিনেতার কন্যা সন্তান সুস্থ হওয়ার পর থেকেই এই পুজো শুরু হয় তাঁদের মুম্বইয়ের বাড়িতে। বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের মুম্বইয়ের পুজোতে তারকাদের দেখা যায়। তবে রোশন পরিবার প্রত্যেক বছর এই পুজো দেখতে নিয়ম করে আসেন তাঁদের বাড়িতে। তবে বিশ্বনাথ চট্টোপাধ্যায়ের পুত্র প্রসেনজিৎ মুম্বইতে থাকলে তবেই আসেন তাঁর বাবার বাড়ির পুজোয়। কারণ প্রত্যেক বছর পুজোর সময় মুক্তি পায় প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় অভিনীত বাংলা ছবি সেই নিয়ে ব্যস্ত থাকেন অভিনেতা তাই প্রতিবছর আসা হয় না তাঁর। বৌমা অর্পিতা ও সময় পেলেই আসেন নিজের শ্বশুর মশায়ের মুম্বইয়ের পুজোতে। তবে তিনি আসলে ভোগ বিতরণ থেকে শুরু করে পুজোর অনুষ্ঠানে গান গাওয়া সব কিছুতেই সুন্দরভাবে অংশ নেন অর্পিতা। সম্ভবত এই বছর আসতে পারবেন না প্রসেনজিৎ কারণ একটি হিন্দি ছবির শুটিংয়ে ব্যস্ত তিনি।
মুম্বইয়ে নিজের পুজোর স্মৃতিচারণা করেছেন অভিনেতা তবে নিজের শহর কলকাতাকে কি করে ভুলবেন তিনি। কলকাতার পুজো প্রসঙ্গে তিনি জানান এখনো টেলিভিশনের পর্দায় বাংলার পুজোর খবর দেখেন তিনি। কলকাতার দুর্গাপূজার নিয়েও রয়েছে তার বহু স্মৃতি। সেই স্মৃতির পাতা উসকে তিনি বলেন, এক সময় তিনি আউট্রাম ঘাটে বিসর্জন দেখতে গিয়েছিলেন। তাঁকে ঘিরে ছিল বহু মানুষের ভিড়, কারণ সেই সময়ে তিনি মুম্বাইয়ের সুপারস্টার। তিনি বলেন ওই সময়তে তিনি দেখতে পাচ্ছিলেন শুধু গাড়ির চারপাশে কালো মাথা। এমনকি গাড়ির উপরে পর্যন্ত মানুষ উঠে পড়েছিলেন। সেই যাত্রায় কলকাতা পুলিশ তাঁকে সেখান থেকে উদ্ধার করে নাকি বাঁচিয়েছিলেন। মুম্বই এবং কলকাতা এই দুই শহরের পুজো নিয়ে আরও স্মৃতি রয়েছে বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের, যা তিনি ভুলতে পারবেন না কোনওদিন।