বিদ্রোহকালেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবারের শারদোৎসব। আরজিকর আবহে এবারের দুর্গাপুজো একটু অন্যরকম। ডাক্তার থেকে সাধারণ মানুষ সকলেই শামিল হয়েছেন প্রতিবাদে। বাদ যাননি শিল্পীরাও। অনেক অভিনেতা অভিনেত্রীই যোগ দিয়েছেন এই প্রতিবাদে।এই নিয়ে কটাক্ষের শিকারও হয়েছেন অনেকেই। তবে একথা সত্যি রোজগারের জন্য বাকিরা যদি নিজেদের কাজ চালাতে পারে, তবে শিল্পীরাও নিজেদের কাজ চালাতেই পারে।
অভিনেত্রীদের এই তালিকায় সবার আগে আসে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের নাম। এই প্রতিবাদের অনন্য মুখ তিনি। বরাবরই হাল ফ্যাশনের ব্যাপারে নতুন কিছু আকর্ষণ রাখতেই পছন্দ করেন স্বস্তিকা। কদিন আগেও তাকে ঠাকুরবাড়ি তথা ব্রিটিশ আমলের সাজে দেখা গিয়েছিল। ৮০ র দশকের সাজে ভক্তদের মন জিতেছিলেন তিনি। এইবারে পোশাক শিল্পী অভিষেক রায়ের পরিকল্পনায় সাজলেন তিনি। সিমা আর্ট গ্যালারির শাড়িতে পুজোর সাজে সেজে উঠলেন অভিনেত্রী।
পুজোর জন্য কোন নতুন লুকে ধরা দিলেন স্বস্তিকা?
পোশাকের ক্ষেত্রে স্বস্তিকা বরাবর ছক ভাঙতে চান। তাঁর বোল্ড লুকের প্রশংসা হাজার দর্শকের মুখে। পোশাকের ক্ষেত্রে নিজেকে সবসময়ই সাহসী প্রমাণ করেছেন স্বস্তিকা। এবারে তিনি নিজেকে সাজলেন লাল রঙের একটি সুতির শাড়িতে। পুরো শাড়িতে ছোট ছোট সোনালি জরির কাজ। তবে শাড়ির সঙ্গে বাঁধাধরা ব্লাউজ পড়েন নি তিনি। কাফতানের সঙ্গে শাড়ির লুক দিয়েছেন তিনি। গলায় পড়েছেন মণিপুরি হার, খোঁপায় লাল রঙ্গন ফুল, হাতে শাঁখাও রয়েছে, পায়ে রয়েছে চটি।
স্বস্তিকার পরের সাজে ছিল ইন্দো ওয়েস্টার্ন ছোঁয়া। খাঁটি তসরের উপর কলমকারি করা। এই শাড়ি পরে স্বস্তিকা বলেন দুধে ধোঁয়া শাড়ি পড়েছি বলে মনে হচ্ছে। আসলে খাঁটি কলমকারি শাড়ি ছাগলের দুধ দিয়ে ধোঁয়া হয় সেই কারণে একটা দুধের গন্ধ থাকেই। এই গন্ধই প্রমাণ করে যে, তাঁর পরনের শাড়িটি খাঁটি। এই শাড়ির সঙ্গেও স্বস্তিকা পড়েছিলেন হালকা রঙের একটি জ্যাকেট। সেটায় করা ছিল কাশ্মীরি কাজ। পিঠে সুতোর কাজ করে লেখা ‘পিস্’। এই ধরনের জ্যাকেটের নাকি বিপুল চাহিদা রয়েছে ইউরোপে। একসময় সেখানে বিপ্লব ঘটিয়েছিল এই জ্যাকেট। এই জ্যাকেট এবার ‘সিমা আর্ট গ্যালারি’র অন্যতম আকর্ষণ। যা ভীষণ পছন্দ হয়েছে স্বস্তিকার। শাড়িটা একটু ধুতির মতো করে পরেছিলেন তিনি। চুলে ছিলো জবা ফুল, সাথে রুপোর ভারী গয়না।
পুজো শরৎকালে হলেও এবার পুজোয় এখনো কমেনি গরম। সেই কথা ভেবেই বোধহয় অভিষেকের পরবর্তী আকর্ষণ ছিল গামছা প্রিন্টের গোলাপী হ্যান্ডলুম শাড়ি।সাথে কিছুটা ধূসর রঙের মিশ্রণও ছিলো। পরনের সাদা ব্লাউজটিতে ছিলো ক্রুশের কাজ করা। নাকে নথ আর কানে সুকুমার রায়ের আবোল তাবোল লেখা ইয়ার কাফ। এবারে চুলে ছিলো গোলাপী রঙের ফুল আর গোলাপী টিপ। বাঙালিয়ানার এযেন এক অনন্য রূপ।
নবমীর সাজের জন্য কী বেছে নিলেন অভিনেত্রী?
নবমীর ঝলমলে রাতের জন্য স্বস্তিকা বেছে নিয়েছিলেন সোনালি রঙের টিস্যু শাড়ি। নিজেই নাম দিয়েছেন গয়না শাড়ি। এই শাড়ির সঙ্গে আর খুব বেশি কিছু গয়না পরেননি অভিনেত্রী। শুধু কপালে লাল টিপ আর আঙুলে লাল আংটি। অবশ্য চুলে লাল ফুল এবারেও বাদ যায়নি। স্বস্তিকা বলেন, এতো জমকালো শাড়ির সঙ্গে খুব বেশি গয়নার দরকার পড়ে না। নবমীর রাতে এমন একটি হালকা শাড়ি খুবই মানানসই। যেই টিপটি এর সঙ্গে পড়েছিলেন সেটা নাকি তাঁর মায়ের থেকে পাওয়া। জানান তাঁর মা বেনারস গেলেই এই টিপ নিয়ে আসতেন। এখন কলকাতাতেও পাওয়া যায়।
স্বস্তিকার কোনো সাজে ছিল ‘রক্তকরবী’র নন্দিনীর ছোঁয়া তো কখনও সেজেছিলেন ফ্রিদা কাহলোর মতো।শিল্পী অভিষেক বলেন ‘‘স্বস্তিকাকে একটা ফিউশন লুক দেওয়ার চেষ্টা করেছি এই সাজে। তবে ওকে যাই পরাই মানিয়ে যায়।’’ সত্যি যেকোনো সাজে স্বস্তিকা অনবদ্য। এই গরমে এ বছরের পুজোয় ধুতির মতো করে শাড়ির পরার পরামর্শও দিয়েছেন পোশাকশিল্পী অভিষেক রায়।
জানেন কেন স্বস্তিকাকে তাঁর বোন ‘ফুলকুমারী’ বলে ডাকেন?
শ্যুটের ফাঁকেই স্বস্তিকা জানান, বাবা থাকতেই তাঁদের সঙ্গে বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল ‘সিমা আর্ট গ্যালারি’র। বাবা সন্তু মুখোপাধ্যায় নাকি প্রতি বছর পুজোর সময় বাড়ির জন্য বিছানার চাদর কিনে নিয়ে যেতেন সেখান থেকে। স্বস্তিকা নিজেও সেই মতোই চলেন। ফুলের প্রতি নিজের ভালোবাসার কথাও বলেন অভিনেত্রী। ফুল নিয়ে তাঁর ভালোবাসা শুরু ফ্রিদা কাহলোকে দেখে। তাঁর বোন তাঁকে ‘ফুলকুমারী’ নামে ডাকেন। পোশাক নিয়ে তিনি খুব বেশি খুঁতখুঁতে না হলেও ফুল তাঁর খুবই প্রিয়। এবারের পুজোয় নিজেকে ফুলের সাজেই সাজাতে চান অভিনেত্রী।