বেশ কিছুদিন আগে বাংলাদেশে একটি সিনেমার শুটিং-এর কাজ চলছিল। সিনেমার নাম ‘আমি ইয়াসমিন বলছি’।সিনেমাটির পরিচালক সুমন ধর। ছবির প্রধান চরিত্রে আছেন বাংলাদেশের অভিনেত্রী বিদ্যা সিনহা মিম।
কেন বন্ধ হয়েছিল সিনেমার কাজ?
ছবির কাজ চলাকালীন একদিন পরিচালক সুমনের কাছে ফোন আসে অভিনেতা ও প্রযোজক জায়েদ খানের। ফোন তিনি বলেন “আপনাকে আমার সঙ্গে একটু হারুন ভাইয়ের কাছে যেতে হবে। কেন যেন আপনাকে ডাকছেন। আমি যেহেতু চলচ্চিত্রের মানুষ, তাই আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন।” প্রসঙ্গত এই হারুন ভাই হলেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন প্রধান হারুন অর রশীদ।
কথামতো পরেরদিন পরিচালক হারুনের সঙ্গে দেখা করলেন তাঁর অফিসে। জায়েদ খানও গেলেন সুমনের সঙ্গে। হারুন চেয়ারে বসে দুলছেন, ইশারায় তাদের বসতে বলেন। সুমন তাকে অভিবাদন জানাতেই বললেন, “কী অবস্থা? শুনলাম, আপনি একটা সিনেমা করছেন, আমি ইয়াসমিন বলছি?”
সুমন অকপট স্বীকার করেন সেই কথা। হারুন তার দিকে এক ভয়ংকর দৃষ্টিতে তাকালেন।সাথে খুব শীতল কন্ঠে বললেন, “এ ছবি করা যাবে না।” এখানেই শেষ নয়, এরপর তিনি বিদ্যা সিনহা মিমকে ফোন করেও বলেন, “এই ছবি হবে না, বুঝেছ?” সুমন চুপ করে বসে রইলেন সেখানে।
ছবিটি বন্ধ করতে বলার আড়ালে লুকিয়ে আছে কোন সত্য?
সেদিনের পর আর ছবিটি এগোলো না।কি কারণে বন্ধ হলো এই ছবি জানেন? ১৯৯৫ সালের এক রাতের ঘটনা। সে বছর ২৩ আগস্ট রাতে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া একটি বাসে দিনাজপুর যাওয়ার পথে ইয়াসমিন নামের এক কিশোরী ছিলো। যখন সে রাস্তায় নেমে অপেক্ষা করছিলো সেই সময় টহল পুলিশের একটি ভ্যান আসে এবং তাকে দিনাজপুরে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে। তারপর একপ্রকার জোর করেই তাকে নিজেদের ভ্যানে তুলে নেয়।
পরদিন সকালে বাংলাদেশের গোবিন্দপুর নামক জায়গায় ওই কিশোরীর লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনার প্রতিবাদে দিনাজপুরের মানুষ আন্দোলনে গর্জে উঠলে, সেই আন্দোলনে গুলি চালায় পুলিশ।পুলিশের গুলিতে নিহত হন সাতজন, আহত হন প্রায় দুশোর বেশি মানুষ।
কোন দিকে এগোবে সিনেমা তৈরির কাজ?
শুধুমাত্র সত্য একটি ঘটনাকে ধামাচাপা দিতেই কি এই ব্যবস্থা? পরিচালক থেকে নায়িকা সবাইকে প্রকাশ্যে হুমকি। তবে এই সিনেমার শেষ পরিনতি কী? পরিচালক সুমন সাংবাদিকদের কাছে এই ঘটনাটি বলেন।তিনি আরও জানান তিনি আবার ছবিটির কাজ শুরু করেছেন। এই সিনেমা তৈরির কাজে তাঁকে আর কেউ বাধা দিতে পারবে না।