একেবারে একটা জাতের চরিত্রের আমূল বদল।
কেরানি বাঙালি যে ইংরেজবিরোধী কখনও হয়ে উঠবে বাংলা নবজাগরণের সময় তাবর বাঙালিসমাজ ভেবেই উঠতে পারেনি। শুরুটা করেছিল বাঙালির থিয়েটার , দ্যা গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটার। “বাঙালির থাটারে লোকশিক্ষে হবে।” ঠাকুর রামকৃষ্ণের এই কথা শত লক্ষ গুণ বেড়ে গিয়ে যখন বিপ্লবী বাঙালির জন্ম দিলো তার পিছনে এই লোকশিক্ষের অবদান যথেষ্ট। যাত্রা পালা কীর্তন থেকে সবে তখন বাঙালি বেরিয়েছে নাট্যাচার্য গিরিশ ঘোষের হাত ধরে। সঙ্গে আছেন অর্ধেন্দু শেখর মুস্তাফি আর থিয়েটার এর নাম সধবার একাদশী। নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্র। এই সেই দীনবন্ধু যার লেখা নাটক নীলদর্পন কাপিয়ে দিয়েছিল গোটা বাংলা। দেখিয়েছিল নীলকরদের অত্যাচার। এত গেলো গোড়ার কথা। এরপর যে নাটকের কথা বলা যায় তা হলো অমৃতলাল বোস। দেখতে সাহেবসুবো এই মানুষটি লিখে ফেলেছেন সাবাশ বাঙালি নাম এ আস্ত একটা নাটক যা বাঙালির রক্ত গরম করার পক্ষে যথেষ্ট ছিল। এর সাথে যোগ দিলো গিরিশ ঘোষের জনা। মহাভারতের প্রেক্ষাপটে এই নাটক এর নায়ক প্রবীর যখন যুদ্ধে গিয়ে মারা যায় তখন কেঁদে আকুল গোটা হলের দর্শক। মা জনার সংলাপে গিরিশ ঘোষ দেখিয়েছিলেন শহীদের মায়ের আর্তি। দেশ আর মা মিলেমিশে একাকার। আর এভাবেই হলো বাংলায় জাতীয়তাবাদ এর সূচনা। থিয়েটার এর হাত ধরে। এখানেই শেষ নয় । মধুকবি মধুসূদন দত্ত ছিলেন বাংলা মায়ের আরেক দামাল ছেলে যার লেখায় বার বার চমকে উঠেছে বাঙালি। সাধারণ চোখে যা ছিল মহাকাব্য , যার উৎস মহাভারত বা পুরান। সেই মেঘনাদ্ বধ কাব্য , শর্মিষ্ঠা , বা বীরাঙ্গনা কাব্যের মধ্যে বার বার ঝলসে উঠেছে তার প্রতিবাদী চরিত্র। শর্মিষ্ঠা প্রথম মঞ্চস্থ হয় বেলগাছিয়া থিয়েটার এ। যার দর্শক ছিল সেইসময় এর বাবু বাঙালি। কিন্তু মেঘনাদবধ আর বীরাঙ্গনা কাব্য সেই আপাত ভদ্রবাঙালি দর্শক কে টান মেরে দাঁড় করায় বেশ কিছু প্রশ্নের মুখে। মহাকাব্যের নায়ক হয়ে ওঠে খলনায়ক আর ভিলেন হয়ে যায় হিরো। উনিশ শতকের বাঙালি থিয়েটার নতুন করে তৈরি করে বাঙালির চিন্তা বাংলা আর মনন। কেরানি থেকে জাতীয়তাবাদী বাঙালির এ এক নবজন্ম।
বাংলার থিয়েটার , বাঙালির স্বাভিমান
